কাজিরবাজার ডেস্ক :
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে টার্গেট করে বিএনপির নেতৃত্বে হচ্ছে বৃহত্তর রাজনৈতিক জোট। নির্বাচনের আগে সরকারকে চাপে ফেলতে ডান, বাম ও মধ্যপন্থী দল নিয়ে জোট করতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন বিএনপির কিছু সিনিয়র নেতা। তবে এ জোটে থাকছে না জামায়াতসহ কয়েকটি ইসলামী দল। ২০০১ সালের আগে চারদলীয় জোট করে যেভাবে রাজপথ দখলে রেখে ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়লাভ করে সেভাবে মরণ কামড় দিয়ে মাঠে নামতে চায় বিএনপি। এ জন্য বিভিন্ন কৌশলে ভেতরে ভেতরে প্রস্তুতি জোরদার করছে।
সূত্র জানায়, নতুন বৃহত্তর জোট গঠনের আগে প্রকাশ্যে বেশি হাঁকডাক না করার কৌশল নিয়েছে বিএনপি। আর এ জন্যই কাজ করছে চুপেচাপে। জামায়াতসহ কটি ইসলামী দল ছাড়া ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সবগুলো দল এবং এ দুই জোটের বাইরে আরও কটি বাম ও মধ্যপন্থী দলের সঙ্গে ইতোমধ্যেই দফায় দফায় কথা বলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কজন সিনিয়র নেতা। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ডিসেম্বরের মধ্যে কর্মকৌশল চূড়ান্ত করে নতুন বছরের শুরুতেই সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে রাজপথে আন্দোলন জোরদার করতে চায় সরকারবিরোধী বৃহত্তর জোট। তবে জামায়াতসহ কটি ইসলামী দলকে সরাসরি জোটে রাখলে বিতর্ক হবে এমন ভাবনা থেকে এসব দলগুলোর সঙ্গেও গোপনে যোগাযোগ রেখে তাদের বৃহত্তর জোটের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে রাখার কৌশল গ্রহণ করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।
এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু করার বিষয়ে যা যা করা দরকার তাই করা হবে। আমরা ইতোমধ্যেই দেশের স্বার্থে সকল রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছি। দেশে গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে আমরা নিজের দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মী এবং গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দল ও পেশাজীবীদের সঙ্গে কথা বলছি। পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু করে একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক সরকার গঠনের লক্ষ্যে আমাদের আহ্বানে অনেকেই সাড়া দিয়েছেন। অমরা নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে কর্মসূচী দেব। আশা করছি দেশের স্বার্থে সবাই এগিয়ে আসবেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বৃহত্তর রাজনৈতিক জোট গঠনের বিষয়ে ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে থাকা দলগুলো সাড়া দিলেও এই দুই জোটের বাইরে থাকা কটি দল বিশেষ করে কটি বাম দল পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে কিছুটা সময় নিচ্ছে। আর এ জন্যই সরকারবিরোধী বৃহত্তর জোট গঠনে আরও দু’এক মাস লাগবে। এ ছাড়া বিএনপি আসলেই জামায়াতকে বাইরে রেখে নতুন জোট করবে কিনা সে বিষয়টিও পর্যবেক্ষণ করছে তারা।
জামায়াতকে কৌশলে দূরে রেখে নতুন রাজনৈতিক জোট গঠনের বিষয়ে সম্প্রতি বিএনপি দলের নির্বাহী কমিটি ও অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে ৬ দিনব্যাপী বৈঠকে মতামত নিয়েছে দলীয় হাইকমান্ড। এসব ধারাবাহিক বৈঠকে অধিকাংশ নেতাই জামায়াতকে বাইরে রেখে জোট গঠনের বিষয়ে সম্মতি দিয়েছে। দলীয় পেশাজীবীরাও সম্প্রতি বিএনপি হাইকমান্ডের সঙ্গে এক বৈঠকে এ বিষয়ে সম্মতি দিয়েছেন। তাই জামায়াত ও কটি ইসলামী দল বাদে ডান, বাম ও মধ্যপন্থী রাজনৈতিক দল নিয়ে নতুন জোট গঠন করতে পুরোদমে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি।
উল্লেখ্য, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অধীনে নির্বাচন করে বিএনপি। তবে বিএনপির পুরনো ২০ দলীয় জোট সরাসরি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে না থাকলেও বিএনপির সঙ্গে আসন ভাগাভাগি করে নির্বাচন করে জামায়াতসহ ২০ দলীয় জোটের কটি শরিক দল। এ জন্য জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন চরম সমালোচনার মুখে পড়েন। বিএনপি কৌশলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে জামায়াতকে শরিক রেখে নির্বাচনে অংশ নেয়ায় এ নিয়ে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের মধ্যেও কিছুটা ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হয়।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভরাডুবির পর থেকেই রাজনৈতিক জোট নিয়ে বিএনপি সঙ্কটে। যে স্বপ্ন নিয়ে তারা বৃহত্তর রাজনৈতিক জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে তা কোন কাজেই আসেনি। বরং এ জোটের কারণে ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মী এমনকি বিএনপির কিছু ক্ষুব্ধ নেতাকর্মী ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ছিল কার্যত নিষ্ক্রিয়। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে ভাগে পাওয়া ২৮১টি আসনের মধ্যে বিএনপি জামায়াতসহ ২০ দলীয় জোটের কটি শরিক দলকে ছেড়ে দেয়া হয় ৪০টি আসন। এর মধ্যে ২৫টি আসন জামায়াতকে দিলেও তাতে কোন কাজ হয়নি। কারণ জামায়াত আগেই বুঝে যায় তারা কোন আসনে জয় পাবে না। তাই নির্বাচনকে বেশি গুরুত্ব দেয়নি। অপরদিকে জামায়াতকে দেয়া ২৫টি সংসদীয় আসনের নির্বাচনে বিএনপি নেতাকর্মীরা ছিল একেবারেই নিষ্ক্রিয়।