বন্দর ও বাণিজ্য নগরী চট্টগ্রাম দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিভাগীয় জেলার পর্যায়ে উন্নীত হলেও নানাবিধ সমস্যা বিশেষ করে জলাবদ্ধতাসহ চারপাশে যে আবর্জনার বিশাল স্তূপ, সেও এক চরম প্রতিবন্ধকতা। তার ওপর নিরন্তর উন্নয়ন প্রকল্পে নানামাত্রিক ত্রুটিবিচ্যুতিও হরহামেশাই চোখে পড়ে। মূল্যবান জীবন বিপন্ন হওয়া থেকে শুরু করে চারপাশের পরিবেশ-পরিস্থিতি অস্বাস্থ্যকর পর্যায়ে চলে যাওয়াও এক অনিবার্য দুর্ভোগ। উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং পরিবেশ অধিদফতর বিভিন্ন কর্মপ্রকল্প প্রণয়নের আগে যে বিধিনিষেধ কিংবা প্রাসঙ্গিক নির্দেশনা জারি করে, সেখানেও রয়েছে মারাত্মক গাফিলতি। যার দায়ভাগ বর্তায় অসহায়, নিরীহ, সাধারণ মানুষের ওপর। তেমন মর্মান্তিক পরিণতির শিকার হন বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্রী শেহরীন মাহমুদ সাদিয়া। চট্টগ্রাম মহানগরীর বেসরকারী ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্রীর জীবন প্রদীপ নিভে গেছে নালার পানির ¯্রােতের গভীরে আবর্জনার স্তূপে। জনমনে প্রশ্ন জেগেছে, উন্নয়নের নামে মৃত্যুকূপ তৈরি করার প্রাসঙ্গিকতা কোথায়? কিছুদিন আগে এক সবজি বিক্রেতা নালার পানিতে তলিয়ে মুহূর্তে নিখোঁজ হয়ে যায় চিরতরে। আজ অবধি তার সন্ধান পাওয়া যায়নি। নালা, নর্দমা, খালগুলো যেন মৃত্যুর অতলান্ত গহ্বর। নিহত ছাত্রী তার নানা ও মামার সঙ্গে রাতে চশমা কিনে বাড়ি ফেরার পথে এই মৃত্যুকূপে পা পিছলে পড়ে যায়। মহানগরীর আগ্রাবাদ মাজার ফটকের পাশে এমন মর্মস্পর্শী দুর্ঘটনা উপস্থিত সবাইকে হতবাক করে দিয়েছে। নালায় ও খাদে পড়ে মৃত্যুফাঁদে পতিত হওয়ার ঘটনায় এলাকাবাসী চরম বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে এমন হৃদয়বিদারক ঘটনার প্রতিকার চেয়ে সড়ক অবরোধ করে রাখে প্রতিবাদী মানুষ। ১৯ বছরের সাদিয়া কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ছিল।
উন্নয়নের মেগা পরিকল্পনায় আধুনিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের সমৃদ্ধকালে এমন অসহনীয় মরণফাঁদ তৈরি সত্যিই এক মহাবিপর্যয়। প্রকৃতির রুদ্ররোষে পড়ে আমাদের অনেক কিছুই হারাতে হয়, জান-মাল নির্বিশেষে। কিন্তু নিয়ন্ত্রিত সুপরিকল্পিত ব্যবস্থাপনায় বিধি মোতাবেক যেখানে সমূহ বিপর্যয়কে প্রতিরোধ করা সম্ভব, সেখানে মানুষের মূল্যবান জীবন কেড়ে নেয়া সত্যিই মর্মান্তিক ও পীড়াদায়ক। এ পর্যন্ত নালায় পড়ে মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটেছে অন্তত চার জনের। এবার যদি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে।
উন্নয়ন কর্মযজ্ঞের দুরন্ত অভিগামিতা এক দীর্ঘ কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যায়। সেখানে জীবন-মালের নিরাপত্তার বিষয়টিও সর্বাধিক গুরুত্ব পাওয়া অপরিহার্য। সারা দেশে এমন অনভিপ্রেত ঘটনা প্রায়ই ঘটে। সেটা শুধু নালা-নর্দমার ব্যাপারে নয়, বরং বহুতল ভবন, শিল্প-কারখানা থেকে শুরু করে অপরিকল্পিত বস্তিতেও হরেক রকম দুর্যোগ মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে সময় নেয় না। সব জায়গায়ই দেখা যায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চরম গাফিলতি। সুতরাং বিভিন্ন কর্মপ্রকল্প যথাযথ তত্ত্বাবধানে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা বিধানের মাধ্যমে গ্রহণ করতে বিলম্ব হলে সামনে আরও মর্মান্তিক বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।