প্রাণিসম্পদ ইনস্টিটিউটের গবেষণা ॥ দেশী স্বাদের নতুন জাতের মুরগি উদ্ভাবন

4

কাজিরবাজার ডেস্ক :
দেশী এবং বিদেশী জার্মপ্লামের ধারাবাহিক সিলেকশন ও ব্রিডিংয়ের মাধ্যমে অধিক মাংস উৎপাদনকারী একটি মুরগির জাত উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইন্সটিটিউট (বিএলআরআই)। স্বাদ এবং পালকের রং দেশী মুরগির মতো মিশ্র বর্ণের এই মুরগির জাতটির নাম দেয়া হয়েছে ‘মাল্টিকালার টেবিল চিকেন’ (এমসিটিসি)। নতুন জাতের এই মুরগিটি অধিক মাংস উৎপাদনে সক্ষম। বাংলাদেশের আবহাওয়া এবং জলবায়ুর প্রেক্ষাপটেই এর উদ্ভাবন করা হয়েছে।
পোল্ট্রি উৎপাদন গবেষণা বিভাগের প্রধান এবং এমসিটিসি উদ্ভাবন গবেষণা দলের সদস্য ড. শাকিলা ফারুক বলেন, “একদল গবেষক ২০১৪ সাল থেকে গবেষণটা শুরু করেন। দেশী এবং বিদেশী জাতের সংমিশ্রণে এই জাতের মুরগিটি উদ্ভাবিত হয়েছে। প্রচলিত ব্রয়লার মুরগির চেয়ে এটি সুস্বাদু। এই মুরগির স্বাদ অনেকটা দেশী মুরগির মতোই, দামেও সস্তা। এই জাতের মুরগি পালনে জায়গার পরিমাণ, ব্রিডিং, তাপমাত্রা, আলো ও বায়ু ব্যবস্থাপনা অন্যান্য মুরগির মতোই। এছাড়া, এদের রোগবালাই কম হয় এবং মৃত্যুর হার তুলানমূলক কম।”
বিশেষজ্ঞ প্যানেলের মাধ্যমে মাংসের গুণাগুণ সংশ্লিষ্ট যত ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা দরকার সেগুলোও সম্পন্ন হয়েছে ইতোমধ্যে। এমসিটিসি জাতের মুরগির মাংসের স্বাদ ও পালকের রং দেশী মুরগির মতো মিশ্র বর্ণের হওয়ায় খামারিরা প্রচলিত সোনালি বা অন্যান্য ককরেল মুরগির তুলনায় বেশি লাভবান হতে পারবেন। বিএলআরআই পরিচালিত বিভিন্ন গবেষণায় সর্বোচ্চ মৃত্যুহার পাওয়া গেছে ১.৫ শতাংশ। উদ্ভাবকরা বলছেন, মাংসের চাহিদার কথা মাথায় রেখেই এ জাতের উদ্ভাবন করা হয়েছে। আট সপ্তাহে (৫৬ দিনে) এই মুরগির গড় ওজন হবে ৯৭৫ গ্রাম থেকে এক কেজি পর্যন্ত। এ ওজন হতে প্রতিটি মুরগির প্রায় ২.২০-২.৪০ কেজি খাবার খায়। যেখানে বাজারে বহুল প্রচলিত অনেক মুরগির এই ওজনে আসতে প্রায় ৯০ দিন লেগে যায়।
বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মোঃ আবদুল জলিল বলেন, “এমসিটিসি মুরগির জাতটিকে আমরা বলে থাকি, দেশীয় ব্রয়লার। সরকারী চারটা ফার্ম এবং প্রাইভেট দুটা ফার্মের মাধ্যমে আমরা পুরো বাংলাদেশকে কাভার করার চেষ্টা করছি। পরবর্তী সময়ে চাহিদার ওপর ভিত্তি করে আরও অন্যান্য এলাকায় এর কার্যক্রম পরিচালনা করার পরিকল্পনা আছে। এক্ষেত্রে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর কার্যক্রমটি পরিচালনা করবে।”
মহাপরিচালক আরও বলেন, “খামার পর্যায়ে সম্প্রসারণ সফলভাবে করতে পারলে একদিকে স্বল্পমূল্যে প্রান্তিক খামারিরা অধিক মাংস উৎপাদনকারী জাতের বাচ্চা পাবেন। অন্যদিকে, আমদানি নির্ভরশীলতা অনেকাংশে হ্রাস পাবে। দেশের সাধারণ মানুষের প্রয়োজনীয় প্রাণিজ আমিষসহ অন্যান্য পুষ্টির চাহিদা পূরণে এ জাতের মুরগি ভূমিকা রাখবে।’’