একে কুদরত পাশা সুনামগঞ্জ থেকে :
বৃহস্পতিবার হঠাৎ করেই তালপাকা রোদ আড়াল হয়ে যায়। সকাল থেকেই আকাশে মেঘের ঘনঘটা। ভালো নেই সুনামগঞ্জের মানুষের মনের আকাশ। সকাল থেকেই শহরের কাজির পয়েন্টে শোকাহত মানুষের ঢল নামে। ঢাকা থেকে সকালে সাবেক হুইপ ফজলুল হক আসপিয়ার লাশ বাসায় আসলে আকাশের মেঘগুলো বৃষ্টি হয়ে শোকাহত মানুষের চোখে ঝড়তে থাকে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে জেলা সদরে বাড়তে থাকে মানুষের আনাগুনা। শুধু ফজলুল হক আসপিয়ার নির্বাচনী এলাকা সুনামগঞ্জ ও বিশ্বম্ভরপুরের মানুষ নয়, জেলার সকল উপজেলা থেকে জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী মানুষ সুনামগঞ্জ আসতে থাকে তাদের প্রিয় মানুষকে শেষ বিদায় জানাতে। সুনামগঞ্জ শাহী ঈদগাহ মাঠে তিল ধারণের জায়গা নেই। শহরে শুধু মানুষ আর মানুষ ধারণা করা হচ্ছে লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হয়েছে জেলা শহরে। লাখে মানুষ চোখের জলে চির বিদায় জানিয়েছে তাদের প্রিয় নেতাকে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ এবং বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ এডভোকেট ফজলুল হক আসপিয়াকে শেষ বিদায় জানাতে তার নামাজে জানাযায় মানুষের ঢল নেমেছিল সুনামগঞ্জে। এর আগে সুনামগঞ্জ পৌরসভা চত্বরে তার তার কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন জেলার সর্বস্তরের মানুষ।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত দলের নেতাকর্মীসহ তার শুভানুধ্যায়ীরা অশ্রুশিক্ত চোখে কফিনে ফুল দিয়ে শেষ বিদায় জানান নেতাকে। পরে জানাযা শেষে লাশ দাফনের জন্য নেয়া হয় সিলেটে।
সুনামগঞ্জে তার জন্মস্থানে অনুষ্ঠিত জানাযায় সমবেত হয়েছিলেন লাখো মানুষ। বৃহস্পতিবার বেলা বাড়ার সাথে সাথে জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে দলীয় নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকেন সুনামগঞ্জ শহরে। দুপুর আড়াইটার দিকে সুনামগঞ্জ কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে সুনামগঞ্জ-৪ আসনের তিনবারের সাবেক এই সংসদ সদস্যস্যের নামাজে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়।
জানাযা পূর্ব সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- কেন্দ্রীয় বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক, সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন, বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির অন্যতম সদস্য, জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক, দিরাই-শাল্লার সাবেক এমপি নাছির উদ্দিন চৌধুরী, সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখত, বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক হায়দার চৌধুরী লিটন, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি এডভোকেট শেরেনূর আলী, সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম নূরুল, মরহুমের ছেলে জেলা বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার আবিদুল হক প্রমুখ।
পরে তার লাশ নেয়া হয় সিলেটে। বাদ মাগরিব হযরত শাহজালাল (রহ.)-এর দরগাহ প্রাঙ্গণে শেষ জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর দরগাহ কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে বলে পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
এর আগে বুধবার দুপুর ১টার দিকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরসহ বার্ধক্যজনিত নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সাবেক সংসদ সদস্য আসপিয়া। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও সিলেটের উন্নয়নের রাজনীতির মুকুটহীন সম্রাট এম সাইফুর রহমানের সাহচর্য লাভ করেন ফজলুল হক আসপিয়া।
প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় অষ্টম জাতীয় সংসদের হুইপ হিসেবে অত্যন্ত সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করে গেছেন তিনি। ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের মেয়াদে সংসদ সদস্য ছিলেন তিনি। এর আগে ১৯৯৬-এর ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনেও তিনি সংসদ সদস্য ছিলেন।
ফজলুল হক আসপিয়া বিএনপির প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই দলের সাথে যুক্ত ছিলেন। দীর্ঘদিন সুনামগঞ্জে জেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন তিনি।