বের হচ্ছে প্রতারণার নিত্যনতুন কৌশল। পুরনো কৌশলগুলোর হচ্ছে আধুনিকায়ন। বাড়ছে প্রতারকদের তৎপরতা। অনলাইন এখন প্রতারণার প্রধান হাতিয়ার। প্রতারণার জালে ফেঁসে যাচ্ছে নিরীহ মানুষ। কেউ কেউ হচ্ছে সর্বস্বান্ত। কারও যাচ্ছে জীবন। প্রতারণার শিকারে পরিণত হয়ে হাজার হাজার তরুণীর জীবন হয়ে উঠেছে দুর্বিষহ। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী হিমশিম খাচ্ছে নতুন কৌশলের প্রতারণা ঠেকাতে। অভিযোগের ভিত্তিতে কেউ গ্রেফতার হচ্ছে, আবার কেউ নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাচ্ছে প্রতারণার সাম্রাজ্য।
সম্প্রতি টিকটকে অভিনয় করার লোভে প্রতারণার শিকার হয়ে বেশ কিছু তরুণীর ভারতে পাচার হওয়ার সংবাদে সারাদেশে তোলপাড় হয়েছে। সামাজিক যোগোযোগ মাধ্যমে ব্যক্তিগত সম্পর্ক তৈরি করে প্রতারক চক্র তরুণীদের রাতারাতি তারকা বনে যাওয়ার প্রলোভন দেখাচ্ছে। কিছু না বুঝে তারা প্রতারকদের ফাঁদে পা দিয়ে শুধু প্রতারিতই হচ্ছে না, জীবন পর্যন্ত বিপন্ন হচ্ছে। এখনও পাচার হওয়া অনেক তরুণীকে উদ্ধার করা যায়নি। এর মধ্যেই বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে নতুন প্রতারক চক্রের খবর এসেছে। এরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হোয়াটসএ্যাপ, ইমু, ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে গড়ে তোলে বন্ধুত্ব। আস্থা অর্জনের পর শুরু হয় প্রতারণা। কাউকে দামী উপহারের লোভ, কারও চাকরি কিংবা যৌথ ব্যবসার প্রলোভনে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অঙ্কের অর্থ। সম্প্রতি এমন একটি প্রতারক চক্র ধরা পড়েছে পুলিশের হাতে। ধৃত প্রতারক চক্রের কেউ ডিম বিক্রেতা, কেউ রিকশাচালক। কেউ পরিচ্ছন্নতাকর্মী, আবার কেউ রাজমিস্ত্রি। যারা প্রতারিত হয়েছে তারা সবাই শিক্ষিত। অনেকে সরকারী চাকরিজীবী এবং সচেতন ব্যক্তি। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দেয়া হিসেব অনুযায়ী এসব অশিক্ষিত প্রতারক চক্র শিক্ষিত লোকদের প্রতারিত করে গত ৭/৮ বছরে হাতিয়ে নিয়েছে ১০ কোটি টাকা। এ ধরনের বেশ কিছু প্রতারক গ্রেফতার হওয়ার সংবাদ ইতোপূর্বে গণমাধ্যমে প্রচারিত হলেও সচেতন হচ্ছে না মানুষ। লোভে পড়ে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন অনেক শিক্ষিত ব্যক্তি।
প্রতারণার কৌশল হিসেবে এরা বিদেশী সুন্দরী তরুণী ও পুরুষের নাম দিয়ে সামাজিক ভুয়া আইডি খোলে। প্রোফাইলে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যবসায়ীসহ উল্লেখ করে বিভিন্ন পেশার। সেই আইডি দিয়ে টার্গেট করা ব্যক্তিকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠায়। কখনও কখনও ইউরোপে বসবাসরত প্রবাসী পরিচয়েও ফেসবুকে বন্ধুত্ব হয়। কারও কারও সঙ্গে গড়ে তোলে প্রেমের সম্পর্ক। সময় নিয়ে চলে কথাবার্তা, বাড়ে ঘনিষ্ঠতা। এভাবে ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে কখনও ব্ল্যাকমেইল আবার কখনও প্রলোভনের ফাঁদ পাতে। কখনও বিদেশ থেকে দামী উপহার পাঠানোর ছলে কাস্টমস ডিউটির বাহানা করে অর্থ আদায়। কখনও বা চাকরির প্রলোভন কিংবা যৌথ ব্যবসা পরিচালনার লোভনীয় অফারে হাতিয়ে নেয়া অর্থ। এক সময় সর্বস্ব হারিয়ে তারা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর শরণাপন্ন হন। অনেক ক্ষেত্রেই তখন আর করার কিছু থাকে না।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে তুলে কেউ যখন প্রতারণা করে তখন বাইরে থেকে বোঝার উপায় থাকে না। প্রতারিত হওয়ার আগে বিষয়টি কেউ জানতেই পারে না। প্রতারিত হওয়ার পর তারা পুলিশের কাছে গেলেও অনেক ক্ষেত্রেই করার কিছু থাকে না। প্রোফাইলে দেয়া তথ্য থাকে বানানো। পুলিশের পক্ষে এদের খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। কখনও সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের কোন সদস্য ধরা পড়লেও বাকিদের খুঁজে পাওয়া যায় না। এ ধরনের প্রতারণা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য একমাত্র উপায় হচ্ছে সতর্ক থাকা এবং অপরিচিত কাউকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গ্রহণ না করা।