॥ মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান ॥
ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন বিধান। এ বিধানে মানবজাতির জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সকল করণীয় ও বর্জনীয় সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। এখানে জন্মের পর পিতা-মাতার দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, আবার কারো জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটলেও তার বিধি-বিধান আলোচনা করা হয়েছে। বিবাহিত ব্যক্তির মৃত্যুর কারণে তার স্ত্রী বিধবা হয়ে যায়। আর ইসলামের বিধানানুযায়ী সে স্ত্রীর উপর বিভিন্ন দায়িত্ব ও কর্তব্য চলে আসে। আর এ কর্তব্য পালনের মাধ্যমে সে নিজেকে পরিচ্ছন্ন রাখতে পারে, পাশাপাশি সমাজকেও তার অবস্থান পরিস্কার করতে পারে। আর এভাবে সে তার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করার পাশাপাশি তার অধিকারগুলো আদায় করতে পারে। আর তা না হলে এ স্বামীহারা এ স্ত্রী তার জীবন, সম্ভ্রম, ভরন-পোষন ও তার সম্পদ প্রাপ্তির নিরাপত্তাহীনতায় সময়ক্ষেপন করতে থাকে। পরিবার সমাজ তার কাছে অপরিচিত মনে হতে থাকে, সে সবার করুনার পাত্র হয়ে যায়। বিভিন্ন ধর্মীয় আইন তাদের অধিকারের নামে যে সকল বিধি বিধান আরোপ করে, তাতে একজন বিধবা তার স্বকীয়তা হারায়, তার অধিকার থেকে সে হয় বঞ্চিত, তার মর্যাদা হয় ভুলুন্ঠিত আর সমাজে নেমে আসে বিপর্যয়। যার কারণে সমাজে বৃদ্ধি পায় অপরাধ, মানবসমাজ সংক্রমিত হয় নতুন নতুন মরণ ব্যাধিতে আর বৃদ্ধি পায় হাহাকার ও বঞ্চনা। কিন্তু আল্লাহ তাআলা মানব জাতিকে সৃষ্টির সেরা জীব হিসাবে সৃষ্টি করার পাশাপাশি তাদের অধিকার ও অক্ষুন্ন রাখার জন্য দিক নির্দেশনা প্রদান করেছেন। যার মাধ্যমে সমাজ থেকে বঞ্চিতদের হাহাকার দূর হবে, বঞ্চিতরা ফিরে পাবে তাদের প্রাপ্য অধিকার, আর সমাজ হয়ে উঠবে ভারসাম্যপূর্ণ। আর আল্লাহ তা’আলা মানব জাতির মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখার জন্য তাদের বিভিন্নভাবে পরীক্ষা দিয়ে থাকেন। আর বিধবাদের মাধ্যমে ও তিনি আমাদের পরীক্ষা করেন। কেননা এর মাধ্যমে এদিকে বিধবা নিজে অসহায়ত্ববোধ করে তার উপর অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে অনীহা প্রকাশ করে, আর অপর দিকে সমাজ তার অসহায়ত্বকে কাজে লাগিয়ে তার প্রতি অনুকম্পা প্রর্দশন করে অধিকার থেকে বঞ্চিত করে। জন্মের পর যে বিষয়টি অনিবার্য তা হল মৃত্যু। এই মৃত্যুর মাধ্যমে পুত্র তার পিতা, বোন তার ভাই আর স্ত্রী তার স্বামীকে হারিয়ে থাকে। আর এই হারানোর বেদনা সকলকেই কম-বেশি ক্ষত-বিক্ষত করে তোলে। আর তাই বলে তো জীবন থেমে থাকে না। জীবন হচ্ছে স্রোতের মতো, জীবনীশক্তি থাকলে সে চলতেই থাকবে। মানব জীবনে যত দুঃখ কষ্ট আসুক না কেন, তাকে তা পাড়ি দেওয়ার মতো ক্ষমতা আল্লাহ তাআলা দিয়েছেন। আর রাতের অন্ধকার যতই গভীর হোক না কেন, দিনের আলো অনিবার্য। ঠিক তেমনি ভাবে কোন নারীর স্বামী মৃত্যুবরণ করলে সে গভীর রাতের মতো দুঃখ কষ্টে নিমজ্জিত হয়ে পড়ে, কাছের মানুষ তার অচেনা হয়ে পড়ে, সে ভাবতে থাকে তার জীবনে হয়ত বা আর সূর্য্যরে ন্যায় আলো আসবে না। কিন্তু রাত দিনের মালিক তো আল্লাহ। আর আল্লাহর বিধানের কোন পরিবর্তন ঘটে না। আল্লাহ তাআলা রাত দিনের যেমন বিধি বিধান দিয়েছেন, ঠিক তেমনিভাবে মানব জীবনে প্রতিটি অধ্যায়ের সমস্যার সমাধান দিয়েছেন। তাইতো ইসলামকে বলা হয়ে থাকে পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। এখানে যেভাবে স্বামী-স্ত্রীর বন্ধনের কথা বলা হয়েছে তদ্রুপ এ বন্ধন কোন কারণে ছিন্ন হলেও তার সমাধান দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মানব জাতি তার বিধান লঙ্গন করার কারণে পৃথীবিতে দেখা দিয়েছে মানবিক বিপর্যয়। তাই বিধবা মহিলাগণ লাঞ্চনা ও বঞ্চনার স্বীকার। শুধুমাত্র ইসলামী বিধানই দিতে পারে তাদের মুক্তি, মর্যাদা ও অধিকার।
ইসলামী আইনে বিধবা নারীর কর্তব্য : ইসলামী আইনে প্রত্যেকে দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেকের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। “ ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, অধ্যায় : আল জুম‘আতি, পরিচ্ছেদ : আল-জুমআতুফিল কুরা ওয়অল মুদুন, বৈরুত: দারু ইবনে কাসীর, খ.১,পৃ.৩০৪, হাদীস নং-৮৫৩”। বিবাহের মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রী একে অপরের প্রতি বিভিন্ন দায়িত্ব ও কর্তব্য অর্পিত হয়, আবার স্বামীর মৃত্যু ঘটলেও তার বিধবা স্ত্রীর উপর বিভিন্ন দায়িত্বও কর্তব্য চলে আসে। আর এ কর্তব্য পালনের মাদ্যমে সে তার মৃত স্বামীর প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালবাসা প্রকাশ করার পাশাপাশি তার নিজের অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে পারে।
ইদ্দত পালন : ইসলাম বিধবাদের দিয়েছে নিরাপত্তা, অধিকার ও মর্যাদা। জন্মের মাধ্যমে প্রত্যেকের মৃত্যু অবধাতি হয়ে যায়। “আল-কুরআন, ৩ : ১৮৫”। আর কোন নারীর স্বামী মৃত্যুবরণ করলে সে স্বাভাবিকভাবেই অসহায়ত্ব বোধ করে। ইসলাম তার এই অসহায়ত্ব ও নিরাপত্তাহীনতা দূর করার জন্য কিছু বিধান দিয়েছে। যার মাধ্যমে সে নিজেকে পবিত্র করতে পারে ও নিজের মর্যাদা অক্ষুন্ন রেখে তার অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারে। আর তা হলো বিধবার ইদ্দত পালন করা। “ইদ্দত বলতে বিধবা অথবা তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীলোকগণের পুনর্বিবাহের পূর্বে অপেক্ষা করবার নির্ধারিত কালকে বোঝানো হয়। [সম্পাদনা পরিষদগ কর্তৃক সংকলিত ও সম্পাদিত, সংক্ষিপ্ত ইসলামী বিশ্বকোষ, ঢাকা:ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ. খ.১, পৃ.১১৬]
অবস্থার প্রেক্ষিতে ইদ্দতের সময়কাল ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। স্ত্রীর সাথে মিলনের পূর্বে তালাক দেওয়া হলে, তাহলে তার কোন ইদ্দত পালন করতে হবে না। “আল-কুরআন, ৩৩:৪৯”। স্ত্রীর সাথে মিলনের পর তালাক প্রদান করলে, তাদের তিনটি ঋতুস্রাবপূর্ণ করা মাধ্যমে ইদ্দত পূর্ণ করতে হবে। আল-কুরআন, ২ : ২২৮। অপ্রাপ্ত বয়স্কা কিংবা বয়োবৃদ্ধা নারীর তিন মাস ইদ্দত পালন করতে হবে। “আল-কুরআন, ৬৫:৪”। গর্ভবতী নারী সন্তান প্রসব পর্যন্ত ইদ্দত পালন করবে। “আল-কুরআন, ৬৫: ৪”। বিধবা নারীর চার মাস দশ দিন ইদ্দত পালন করতে হবে। “আল-কুরআন, ২:২৩৪”। ইদ্দত পালনের মাধ্যমে বিধবা নিজেকে পবিত্র করার পাশাপাশি পরবর্তী বংশধরের পিতৃ পরিচয় নিশ্চিত করে থাকে। কেননা কোন নারী বিধবা তালাক প্রাপ্ত হলে তার গর্ভে কোন সন্তান আছে কিনা তা নিশ্চিতভাবে বলা যায় না। ইসলামের বিধানে সন্তানের প্রকৃত পিতাই পিতৃত্বের দাবিদার। সন্তানের পিতৃত্ব নিশ্চিত হওয়ার জন্য ও তার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ইদ্দাতের মাধ্যমে বিধবাকে নির্দিষ্ট কিছু বিধি-বিধান পালনে আদেশ দেওয়া হয়েছে। ইদ্দত পালনের মাধ্যমে বিধবা নিজেকে পবিত্র ও সমাজকে করতে পারে।
শোক প্রকাশ করা : ইসলাম একটি স্বভাবজাত জীবন বিধান। এখানে খুশির সময় আনন্দ, আবার দুঃখের সময় শোক প্রকাশের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আবার এ আনন্দ যেন বল্গাহীন না হয় এবং দুঃখও যেন চিরসাথী না হয় তার ও বিধি বিধান বর্ণনা করা হয়েছে। তাই স্বামী ব্যতীত অন্য কারো মৃত্যুর জন্য তিন দিনের বেশী শোক প্রকাশ করতে নিষেধ করা হয়েছে। আর স্বামীর মৃত্যুতে স্ত্রী পরবর্তী চার মাস দশ দিন নিজেকে পবিত্র করার জন্য কিছু বিধি নিষেধ পালনের মাধ্যমে এ শোক পালন করবে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন- যারা তোমাদের মধ্যে মৃত্যুবরন করবে এবং নিজেদের স্ত্রীদেরকে ছেড়ে যাবে, তখন সে স্ত্রীদের কর্তব্য হলো নিজেকে চার মাস দশ দিন অপেক্ষা করিয়ে রাখা, তারপর যখন ইদ্দত পূর্ণ করে নেবে, তখন নিজের ব্যাপারে নীতিসঙ্গত ব্যবস্থা নিলে কোন পাপ নেই। “আল-কুরআন, ২: ২৩৪”। এ প্রসঙ্গে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে- উম্মে হাবীবা (রা.) রাসূলুল্লাহ (স.) থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ বলেছেন আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী কোন মহিলার জন্য কারো মৃত্যুতে তিন দিনের বেশি শোক পালন করা বৈধ নয়। তবে স্বামীর মৃত্যুতে চারমাস দশদিন শোক পালন করবে। “ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, অধ্যায় : ত্বলাক, পরিচ্ছেদ : বাবুল কুহলি লিল হাদ্দতি, প্রাগুক্ত, খ.৫, পৃ.২০৪৩, হাদীস নং-৫০২৫”।
সাজসজ্জা ও সুগন্ধি পরিহার : ইসলাম বিধবার ইদ্দত এর সময় অতিরিক্ত সাজসজ্জা ও সুগন্ধি ব্যবহার নিষেধ করেছে। কেননা ইসলাম নারীদের সাজসজ্জা ও সুগন্ধি ব্যবহার তার স্বামীকে প্রদর্শনের জন্য করার অনুমতি দিয়েছে, আর ঐ সময়ে সাজসজ্জা ও সুগন্ধি পরিহার সমাজের ও দাবী থাকে। এ সময়ে বিধবা চাকচিক্যময় পোষাক ও অলংকার পরিহার করে স্বাভাবিক পোষাক পরিধান করবে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন- যারা তোমাদের মধ্যে মৃত্যুবরণ করবে এবং নিজেদের স্ত্রীদেরকে ছেড়ে যাবে, তখন সে স্ত্রীদের কর্তব্য হলো নিজেকে চারমাস দশদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করিয়ে রাখা। “আল-কুরআন, ২ : ২৩৪”। অত্র আয়াতের ব্যাখ্যায় হাফিজ ইবনে কাসীর (রহ.) বলেন এই সময়ে বিধবা স্ত্রীরা নিজেদের সৌন্দর্য, সুগন্ধি, উত্তম কাপড় এবং অলংকার পরিধান থেকে বিরত রাখবে। আর এটা পালন করা তাদের জন্য ওয়াজিব। “ইবনে কাসীর, তাফসীরুল কুরআন আযিম, তাহকীক : সামী ইবনে মুহাম্মাদ আস-সালামাহ, রিয়াদ: দারু আত্তায়্যেবা, ১৯৯৯, খ.১, পৃ.৬৩৮”।
এ সময়ে সুগন্ধি পরিহার প্রসঙ্গে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে- উম্মে আতিয়্যা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আমাদের নিষেধ করা হত, আমরা যেন কারও মৃত্যুতে তিন দিনের অধিক শোক পালন না করি। তবে স্বামীর মৃত্যুতে চারমাস দশদিন শোক পালন করতে হবে এবং (এ সময়) আমরা যেন সুরমা এবং খোশবু ব্যবহার না আর রঙিন কাপড় যেন পরিধান না করি। তবে হালকা রঙের হলে দোষ নেই। আমাদের অনুমতি দেওয়া হয়েছে, আমাদের কেউ যখন হায়েয শেষে গোসল করে পবিত্র হয়, তখন সে (দুর্গন্ধ দূরীকরণার্থে) আযফার নামক স্থানের কুস্থ (সুগন্ধি) ব্যবহার করতে পারে। “ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, অধ্যায় : ত্বালাক, পরিচ্ছেদ: বাবুল কুসতি লিল হাদ্দত ইনদাত তুহুরি, প্রাগুক্ত, খ.৫ম,পৃ.২০৪৩, হাদীস নং-৫০২৭”। এ প্রসঙ্গে আরো বর্ণিত হয়েছে,- ইমাম আবূ দাউদ, আস-সুনান, অধ্যায়: তালাক, পরিচ্ছেদ: ফিমা তাজতানিবুহুল মুতাদ্দাতি ফি ইদ্দতহা, বৈরূত: দারুল ফিকর, খ.১, পৃ.৭০৩, হাদীস নং- ২৩০৪”।
নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ না হওয়া : ইসলাম বিধবা নারীদের পরিচ্ছন্ন রাখতে এবং মানব জাতিকে সংক্রামক ব্যাধি থেকে রক্ষা ও সন্তানের পিতৃ পরিচয়ের জন্য নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বিবাহ করতে নিষেধ করেছে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন- ‘‘যারা তোমাদের মধ্যে মৃত্যুবরণ করবে এবং নিজেদের স্ত্রীদেরকে ছেড়ে যাবে, তখন সে স্ত্রীদের কর্তব্য হলো নিজেকে চারমাস দশদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করিয়ে রাখা’’। “আল-কুরআন, ২: ২৩৪”। অত্র আয়াতের অংশের ব্যাখ্যায় বিশিষ্ট মুফাসসির ইবনে জারীর আত-তাবারী (রহ.) বলেন, তারা ইদ্দত পালন অবস্থায় নিজেদেরকে আবদ্ধ করে রাখবে স্বামী গ্রহণ থেকে, সুগান্ধ ও সাজসজ্জা থেকে, স্বামীর জীবদ্দশায় তারা যে গৃহে বাস করত, সে গৃহ থেকে অন্যত্র গমন করা থেকে। আবু জা‘ফার মুহাম্মদ ইবনে জারীর আত-তাবারী, জামিাউল বায়ান,খ.২৩,পৃ. ২৪১”।
মহান আল্লাহ অন্য স্থানে ইরশাদ করেন ‘‘আর যদি তোমরা আকারে-ইঙ্গিতে সে নারীর বিয়ের পয়গাম দাও, কিংবা নিজেদের অন্তরে কোন সংকল্প লুকিয়ে রাখলো, তবে তাতেও কোন পাপ নেই’’, আল্লাহ জানেন যে, তোমরা অবশ্যই সে নারীর কথা উল্লেখ করবে। কিন্তু তাদের সাথে বিয়ে করার গোপন প্রতিশ্রুতি দিয়ে রেখো না। অবশ্য শরীয়তের নির্ধারিত প্রথা অনুযায়ী কোন কথা সাব্যস্ত করে নেবে। আর নির্ধারিত ইদ্দত সমাপ্তি পর্যায়ে না যাওয়া অবধি বিয়ে করার কোন ইচ্ছে কর না। আর এ কথা জেনে রেখো যে, তোমাদের মনে যে কথা রয়েছে, আল্লাহর তা জানা আছে। কাজেই তাকে ভয় করতে থাক। আর জেনে রেখো যে, আল্লাহ ক্ষমাকারী ও ধৈর্যশীল। “আল-কুরআন,২: ২৩৫”। আলোচ্য আয়াতের ব্যাখ্যায় হাফিয ইবনে কাসীর (রা.) বলেন, বিধবার ইদ্দত পালন করার সময় বিবাহতো করা যাবেই না; বরং বিবাহের অঙ্গীকার ও করা যাবে না। তবুও কেউ যদি ঐ সময় বিবাহর করে নেয় এবং সহবাসও করে, তবে তাদের পৃথক করে দিতে হবে। তবে ইদ্দত শেষ হওয়ার পর মোহর আদায় করতঃ তারা পরস্পর ইচ্ছে করলে বিয়ে করতে পারবে। “ইবনে কাসীর, তাফসীরুল কুরআনুল আযিম, তাহকীক, সামী ইবনে মুহাম্মদ অফাস-সালামাহ, রিয়াদ: দারু আত্তইয়্যেবা, ১৯৯৯, খ.১, পৃ.৬৩৬”।
স্বামীর গৃহে অবস্থান : স্বামীর মৃত্যুর পর বিধবা স্ত্রী স্বামীর গৃহে অবস্থান করে নিদিষ্ট মেয়াদ পূর্ণ করবে এবং স্ত্রী ইচ্ছা করলে স্বামীর গৃহে এক বছর পর্যন্ত অবস্থান করতে পারবে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন- ‘‘যারা তোমাদের মধ্যে মৃত্যুবরন করবে এবং নিজেদের স্ত্রীদেরকে ছেড়ে যাবে, তখন সে স্ত্রীদের কর্তব্য হলো নিজেকে চারমাস দশদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করিয়ে রাখা, তারপর যখন ইদ্দত পূর্ণ করে নেবে, তখন নিজের ব্যাপারে নীতিসঙ্গত ব্যবস্থা নিলে কোন পাপ নেই’’। “আল-কুরআন, ২:২৩৫”। আর যদি বিধবা কোন প্রয়োজনে স্বামীর গৃহ ব্যতীত অন্য স্থানে ইদ্দত পালন করতে চায় তবে তাকে বাধা দেওয়া যাবে না। এ প্রসঙ্গে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে- ‘‘মুজাহিদ রহ, হতে বর্ণিত। মাহান আল্লাহর বাণী : তোমাদের মধ্যে যারা বিবিদেরকে রেখে মারা যাবে” (আল কুরআন, ২ : ২৪০) তিনি এ আয়াতের ব্যাখ্যা বলেন, স্বামীর বাড়ীতে অবস্থান করে ইদ্দত পালন করা মহিলাদের জন্য ওয়াজিব ছিল। পরে মহান আল্লাহ অবর্তীন করেন: তোমাদের মধ্যে যারা বিবিদেরকে রেখে মারা যাবে,তারা বিবিদের জন্য অসিয়ত করবে, যেন এক বৎসরকাল সুযোগ-সুবিধা পায় এবং গৃহ হতে বের করে দেওয়া না হয়, তবে যদি তারা নিজেরাই বের হয়ে যায়, তবে তোমাদের প্রতি গোনাহ নেই তারা নিজেদের ব্যাপারে বৈধভাবে কোন কিছু করলে।” (আল কুরআন, ২ : ২৪০)। মুজাহিদ বলেন, আল্লাহ তা‘আলা (আরো) সাত মাস বিশ রাত (যোগ করে) তার পূর্ণ এক বছরকাল থাকার ব্যবস্থা করেছেন। (এ সময়) মহিলা ইচ্ছা করলে ওসিয়ত অনুসারে পূর্ণ এক বছর থাকতে পারে, আবার সে ইচ্ছা করলে বের ও হয়ে যেতে পারে। (অসমাপ্ত)