খাদ্যবান্ধব সরকার

5

গত কয়েক মাস ধরে চালের দাম ক্রমাগত বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে অবশেষে সরকার চালু করতে যাচ্ছে ‘খাদ্যবান্ধব কর্মসূচী’, যা শুরু হবে সেপ্টেম্বর মাস থেকে। এতে দেশে হতদরিদ্রদের মধ্যে মাত্র ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিতরণ তথা বিক্রি করা হবে। এর মাধ্যমে মোট ৫০ লাখ হতদরিদ্র পরিবার স্বল্পমূল্যে প্রতি মাসে ৩০ কেজি চাল পাবে। এই কার্যক্রম চলবে টানা তিন মাস। উল্লেখ্য, মাত্র ১০ টাকা কেজি ধরে চাল বিতরণ বর্তমান দরিদ্রবান্ধব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের অন্যতম নির্বাচনী অঙ্গীকার। এর পাশাপাশি দেশের সকল সিটি কর্পোরেশন ও পৌর এলাকায় ৭৩৭ ডিলারের মাধ্যমে ওএমএস কর্মসূচীর আওতায় প্রতিকেজি চাল ৩০ টাকা এবং প্রতিকেজি আটা ১৮ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে, যা থেকে প্রতিদিন উপকৃত হচ্ছেন লাখ লাখ মানুষ। চালের বাজার দর নিয়ন্ত্রণে সরকার ইতোমধ্যে আমদানি শুল্ক কমিয়েছে। বেসরকারী উদ্যোগে শুরু হয়েছে চাল আমদানি। সরকারের খাদ্য মজুদও সন্তোষজনক। আমদানিকৃত চাল বাজারে এলে এবং ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি শুরু হলে খোলাবাজারে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে সুনিশ্চিত।
সরকারের নানা উদ্যোগ এবং প্রচেষ্টা সত্ত্বেও বাজারে চালের দাম কমছে না কিছুতেই। খুচরা বাজারে মোটা চালের দাম বর্তমানে প্রতিকেজি সর্বনিম্ন ৫০-৫২ টাকা। মাঝারি মানের চালের দাম প্রতিকেজি ৬৫ ও তদুর্ধ। নাজির শাইল-কাটারিভোগের দাম আরও বেশি। অতীতে ভাদ্র-আশ্বিন মাসে বহুকথিত মঙ্গার কথা শোনা গেলেও বর্তমান সরকার তা দূর করতে সক্ষম হয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে বিশেষ করে বোরোর বাম্পার ফলন হলেও প্রধানত ব্যবসায়ী, মিল মালিক, আড়তদার ও আমদানিকারকদের কারসাজিতে চালের দাম নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না কিছুতেই। ফলে করোনার মহামারীকালে বিশেষ করে আয়-উপার্জনহীন মানুষের মধ্যে প্রায় দিশেহারা অবস্থা পরিলক্ষিত হচ্ছে। দাম নিয়ন্ত্রণে সারা দেশে ন্যায্যমূল্যে চাল বিক্রিসহ ওএমএসের পরিধি ও কার্যক্রম বাড়িয়েও ইতিবাচক ফল পাওয়া যাচ্ছে না। এমতাবস্থায় সরকার চালের শুল্ক কমিয়ে ১০ শতাংশ নির্ধারণসহ যাবতীয় রেগুলেটরি ডিউটি থেকে অব্যাহতি দিয়েছে চাল আমদানিকারকদের। তবুও খুশি নন চাল আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা। তারা চাল আমদানি অবাধ তথা উন্মুক্ত করে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন। তাতে চাল আমদানিতে উৎসাহিত হতে পারেন ছোট-বড় ব্যবসায়ীরা এবং বাজারে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
মিল মালিক ও পাইকারি বিক্রেতারা অজুহাত দিচ্ছেন অতিবৃষ্টি ও বন্যার এবং সর্বশেষ ধানের দাম বৃদ্ধির। সত্য বটে, সরকার এবার ধান-চালের সংগ্রহ বাড়ানোর লক্ষ্যে এর ক্রয়মূল্য বাড়িয়েছে। এতে কৃষকরা ধান-চালের ভাল দাম পাচ্ছেন। তাই বলে ধানের দাম বাড়ার অজুহাতে দফায় দফায় চালের দাম বাড়ানো গ্রহণযোগ্য নয়। মিল মালিকরা খাদ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করলেও অনতিপরেই জোটবদ্ধ হয়ে দাম বাড়াচ্ছেন চালের। করোনা সঙ্কট মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী সর্বাগ্রে জোর দিয়েছেন খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ওপর। টিসিবির মাধ্যমে ন্যায্যমূল্যে নিত্যপণ্য বিক্রি ছাড়াও সরকার ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে। ন্যায্যমূল্যে চাল-আটা বিক্রির জন্য বর্তমানের ৫০ লাখ ওএমএসের কার্ডের অতিরিক্ত আরও ৫০ লাখ কার্ড দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।