কাজিরবাজার ডেস্ক :
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শাসনামলে দুঃশাসন ও নৃশংতার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মৃত্যুশয্যায় থাকা নারী নেত্রী আইভি রহমানকে খালেদা জিয়া সিএমএইচে (সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল) দেখতে যাবেন বলে তাঁর পুত্র-কন্যাদের তিন-চার ঘণ্টা অন্য একটি রুমে আটকে রাখা হয়। আর খালেদা জিয়া যখন দেখে ফিরে আসেন তারপরই তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়। এ কথাটা অনেকেরই জানা নেই, আমি এটা জানিয়ে রাখলাম। যে কত বড় নৃশংসতা এরা করতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় সভাপতির সূচনা বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রের পরিকল্পনা বিভাগে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন।
বৈঠকের শুরুতেই ভয়াল-নৃশংস ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত প্রখ্যাত নারী নেত্রী ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের সহধর্মিণী আইভি রহমানের ১৭তম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা ঠিক জানি না কখন ও কোন মুহূর্তে তিনি (গ্রেনেড হামলায় আহত আইভি রহমান) মৃত্যুবরণ করেছেন। তাঁর ছেলে-মেয়েরা তখন তার মায়ের বেডের কাছেই ছিল। যে সময় তখনকার প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া তাঁকে দেখতে সিএমএইচে যাবেন। এ কারণে তাঁর ছেলে-মেয়েরা যারা বেডের কাছে ছিল, তাদের একটা কামরার মধ্যে নিয়ে তালা মেরে রাখে।’
খালেদা জিয়া চলে যাওয়ার পরই আইভি রহমানকে মৃত ঘোষণা করা হয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আজকের দিনে আমার আইভি চাচির কথাই বেশি মনে হচ্ছে। আর একটা অবাক কান্ড আপনারা হয়ত জানেন না তাঁকে যখন সিএমএইচএ (কম্বাইন্ড মিলিটারি হসপিটাল) নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁর ছেলে-মেয়েরা তাঁর কাছেই ছিল। তখনকার প্রধানমন্ত্রী তাঁকে দেখতে যাবেন বলে তাঁদের বাইরে বের করে নিয়ে আটকে রাখা হয়। প্রায় ৩/৪ ঘণ্টা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের বর্তমান চেয়ারম্যান নাজমুল হাসান পাপন এমপি, বোন তানিয়া ও ময়না এদের সবাইকে একটা রুমে তালা দিয়ে রেখে তারপর খালেদা জিয়া যান আইভি রহমানকে দেখতে।’
এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কত বড় নৃশংসতা এরা (খালেদা জিয়া) করতে পারে। খালেদা জিয়া যখন দেখে ফিরে আসেন, তারপরই তাঁকে (আইভি রহমান) মৃত ঘোষণা করা হয়। হয়ত কথাটা অনেকেই জানেন না। আমি এটা জানিয়ে রাখলাম।
ভয়াল গ্রেনেড হামলায় নিহত নেতাকর্মীদের লাশ হস্তান্তর নিয়েও তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের অমানবিক আচরণের কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, শুধু হত্যার চেষ্টাই না (গ্রেনেড মেরে), হত্যার পরে লাশ নিয়ে বা মৃতদের নিয়েও তাদের যে কর্মকান্ড, অত্যন্ত জঘন্য কর্মকান্ড ছিল। মারা যাওয়ার পর অনেকের লাশ দিতে চায়নি। লাশ আত্মীয়-স্বজনের কাছে দেবে না ।
তিনি বলেন, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা এবং যারা জীবিত তারা আহতদের সাহায্য করতে ছুটে যায়। এরপর সারারাত তাদের চেষ্টার পর একে একে সেই লাশগুলো (গ্রেনেড) আত্মীয়-স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তিনি বলেন, লাশটা পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার দিতে চায়নি। পারলে লাশটা গুম করে ফেলতো, এই অবস্থা ছিল।
প্রধানমন্ত্রী ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলায় আহতদের দেশে-বিদেশে চিকিৎসা প্রদানসহ তাঁদের সুবিধা-অসুবিধায় পাশে দাঁড়িয়েছেন উল্লেখ করে বলেন, একে একে অনেকেই (গ্রেনেড হামলায় আহত) আজ আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আহতদের তিনি দেশে, ভারতে এবং অন্য দেশে পাঠিয়েও চিকিৎসা করান। যাদের অনেকেই আজ আর নেই, মারা গেছেন। আবার অনেকেই গ্রেনেডের আঘাতে পঙ্গু হয়ে দুর্বিষহ জীবন-যাপন করছেন।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় আইভি রহমানসহ গ্রেনেড হামলায় নিহতদের সবার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া কামনা করে বলেন, আমি আইভি চাচির জন্য দোয়া চাই এবং যারা মারা গেছেন সবার জন্য দোয়া চাই। আমাদের বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট থেকে গ্রেনেড হামলায় আহতদের চিকিৎসায় সহায়তা দিয়েছি এবং সে সময় একটা আলাদা একাউন্ট খুলে যে ফান্ড এসেছে তা থেকে চিকিৎসাধীন প্রত্যেককে আর্থিক সহযোগিতা দিয়েছি এবং এখনও আমরা দিয়ে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের পক্ষ থেকে আহত যাদের চিকিৎসার প্রয়োজন তাদের সহায়তা দিচ্ছি, মাসোহারা দিচ্ছি, তাদের ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনা, বিয়ে-শাদি যতরকমের সহযোগিতা দরকার আমি এখনও তা করে যাচ্ছি। যাদের খুব খারাপ অবস্থা ছিল আর্থিকভাবে তাদের সাহায্য এখনও অব্যাহত আছে।
উল্লেখ্য, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে সন্ত্রাসবিরোধী আওয়ামী লীগের এক সমাবেশে ভয়াল গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। এই হামলায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পেলেও তাঁর শ্রবণেন্দ্রিয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর দলের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা এবং নারীনেত্রী আইভি রহমানসহ দলের ২২ নেতাকর্মী নিহত এবং সহস্রাধিক নেতাকর্মী, পথচারী, সাংবাদিক আহত হন।