পবিত্র আশুরা

10

আজ মহরম মাসের দশ তারিখ। পবিত্র আশুরা। শেষ এবং শ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহম্মদ (সা.)-এর প্রিয় দৌহিত্র হযরত ইমাম হোসেনের (রা.) মহিমান্বিত আত্মত্যাগ ও করুণতম হৃদয়বিদারী স্মৃতি জড়িত দিন এই দশই মহরম। ফোরাত নদীর তীরে তাকে এবং তার সঙ্গী-সাথীদের মর্মান্তিকভাবে জীবন দিতে হয় এদিন। স্রোতস্বিনী ফোরাত থেকে এক ফোঁটা পানিও পান করতে দেয়া হয়নি তাদের। বিশ্বাসঘাতক, পাপিষ্ঠ ও লোভাতুর ইয়াজিদের হাতে নির্মমভাবে শহীদ হন চতুর্থ খলিফা হযরত আলীর (রা.) পুত্র ইমাম হোসেন (রা.)। তার মা ফাতিমা জোহরা (রা.) ছিলেন গুণবতী ও মহীয়সী নারী। র্দিনটি ইসলামের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ ঘটনার সাক্ষী হলেও কলঙ্কতম এবং মর্মস্পর্শী বেদনার দিবস হিসেবেই পবিত্র আশুরা পালিত হয়ে আসছে। এরূপ মর্মান্তিক ঘটনায় মুসলিম উম্মাহর হৃদয় শিউরে ওঠে। আর সে জন্যই প্রতিবছর পালিত হয় পবিত্র আশুরা । ইসলামের সর্বোত্তম মর্যাদাকে কলুষিত করতে চেয়েছিল একদল নরপশু। পারেনি তারা। কারণ, ইসলাম শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে পূর্ণতা পেয়েছে হযরত মুহম্মদ (সা.)-এর মাধ্যমে। ইয়াজিদসহ নরপশুরা নিয়েছিল প্রতারণার আশ্রয়। অনৈতিকভাবে ক্ষমতা দখলের মোহ এবং বিত্তবাসনা মানুষকে করে তোলে পশুরও অধম। ইয়াজিদ এর এক ঘৃণ্য উদাহরণ। উমাইয়া বংশের প্রতিষ্ঠাতা আমির মুয়াবিয়ার পুত্র ইসলামের ঘনিষ্ঠ ও আদর্শবান অনুসারীদের নিশ্চিহ্ন এবং পদানত করার জন্য নির্মম চক্রান্ত করেছিল সে। কিন্তু পবিত্র ইসলামের মর্যাদা ও রসূলুল্লাহ (সা.)-এর নির্দেশকে সমুন্নত রাখার জন্য হযরত ইমাম হোসেন (রা.) বীরত্ব ও শৌর্য নিয়ে ইয়াজিদের বিশাল সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করে শাহাদাতবরণ করেছিলেন। তার এই আত্মত্যাগ শুধু মুসলিম জাহানের জন্য অনুকরণীয় নয়, শান্তিকামী পুরো বিশ্বের জন্যও। প্রতারক ও লোভীরা সংখ্যায় বেশি হলেও ইতিহাস থেকে মুছে যায় ওরা। প্রকৃত বীর সম্মান পান বিশ্ববাসীর কাছে চিরকাল। আজ তাই পালিত হয়ে আসছে পবিত্র আশুরা।
হিজরি ৬১ সালের যে সময় এই নৃশংস ঘটনাটি ঘটে, তখন মুসলিম বিশ্বে চার খলিফার স্বর্ণযুগ অতীত হয়ে নেমে এসেছে চরম নৈরাজ্য । এই দুঃসময়ে ইয়াজিদ পরিবারতন্ত্র ও রাজতন্ত্রের স্বপ্নে বিভোর হয়ে বীভৎস হত্যাকান্ড চালায়। রক্তে ভেসে যায় কারবালার ময়দান। ইমাম হোসেনসহ ৭২ সঙ্গী-সাথী শাহাদাতবরণ করেন।
ঐতিহাসিকভাবেই মূলত হিজরি বর্ষের প্রথম মাসের এই দিনটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। হযরত আদম (আ.)-এর দেহে রুহ প্রদান, হযরত নূহ (আ.)-এর নৌকা তীরে ভেড়া, হযরত মুসা (আ.)-এর নীলনদ পাড়ি দেয়া- এমনই অসংখ্য ঘটনার সূত্রপাত এই মাসে। কিন্তু বেদনার সবচেয়ে ভারি ও হৃদয়বিদীর্ণকারী ঘটনাটি ঘটায় ইয়াজিদ ফোরাত নদীর তীরে কারবালার প্রান্তরে। হযরত ইমাম হোসেন (রা.)-এর শাহাদাতবরণ আমাদের সকল লোভ-লালসাকে সহজেই দূরীভূত করতে এবং ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়াতে উদ্বুদ্ধ করে।