বঙ্গবন্ধুর শাহাদাতবার্ষিকী ও শোক দিবস উপলক্ষে আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী ॥ বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পেছনে কারা জড়িত ও ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছিল সেটাও শীঘ্রই বের হবে

6

কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা দেশের দুখী মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে এবং জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণের মাধ্যমে তাঁর হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার দৃঢ় অঙ্গিকার ব্যক্ত করে বলেছেন, যারা বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত এবং যারা এ হত্যাকান্ডের ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছে তারাও সমানভাবে দায়ী। জাতির পিতা হত্যার সঙ্গে জড়িতদের বিচার হয়েছে। এ হত্যাকান্ডের পেছনে কারা পাশে ছিল, ক্ষেত্র তৈরি করেছে সবই জানি। সেদিন বেশি দূরে নয়, ধীরে ধীরে এসবও বের হবে। একাত্তরের শহীদ ও জাতির পিতার রক্ত কখনও বৃথা যাবে না, বৃথা যেতে দেব না।
আবেগজড়িত কণ্ঠে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, এদেশের মানুষের জন্য জীবন দিয়ে গেছেন আমার বাবা-মা, ভাইসহ পরিবারের সদস্যরা। বঙ্গবন্ধু পরিবারের রক্তের কেউ বেঁচে থাকুক তা চায়নি ঘাতকরা। পিতার মতো আমিও রক্ত দিতেই দেশের মাটিতে পা দিয়েছিলাম। আমার জীবনের কোন চাওয়া-পাওয়া নেই, ভয়ও নেই। মৃত্যুকে অনেকবার সামনে থেকে দেখেছি। কখনও ভীত হইনি। আমি সব সময় প্রস্তুত- যে কোন সময় চলে যেতে হবে। কিন্তু যতক্ষণ বেঁচে আছি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তুলব। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন অনুযায়ী যেদিন দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে, উন্নত জীবন পাবে, ঘরে ঘরে আলো জ্বলবে, বঙ্গবন্ধুর আজীবনের লালিত স্বপ্ন যেদিন পূরণ করতে পারব সেদিনই জাতির পিতার হত্যার প্রকৃত প্রতিশোধ নিতে পারব। আর সেই লক্ষ্যে আমরা অনেকদূর এগিয়ে গেছি, আরও এগিয়ে যাব।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৬তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে সোমবার বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত স্মরণসভায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় প্রান্তে মূল অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, এডভোকেট জাহাঙ্গির কবির নানক, আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, কৃষিবিদ আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য পারভীন জাহান কল্পনা, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএ মান্নান কচি ও দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির। গণভবন প্রান্ত থেকে আলোচনা সভা পরিচালনা করেন কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ। অনুষ্ঠানের শুরুতেই জাতির পিতাসহ ১৫ আগষ্টের সকল শহীদের স্মরণে এক মিনিট দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করা হয়।
দ্রুত উচ্চ পর্যায়ের কমিশন গঠন করে জাতির পিতার হত্যাকান্ডের নেপথ্যের কুশীলবদের মুখোশ উন্মোচনে কেন্দ্রীয় নেতাদের দাবির জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নেপথ্যে কে কে রয়েছে তা খুঁজতে বেশিদূর যেতে হবে না। স্বাধীনতার পরের পত্র-পত্রিকার রিপোর্ট দেখলেই সব কিছু স্পষ্ট হয়ে যাবে। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়তে বঙ্গবন্ধুকে একটি বছর সময় দেয়া হলো না, কাদের খুশি করতে তাঁর বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালিয়ে এ হত্যাকান্ডের গ্রাউন্ড (ক্ষেত্র) তৈরি করা হয়েছিল?
এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু কন্যা আরও বলেন, বাংলাদেশ পাকিস্তানের একটি প্রদেশ ছিল। স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৭২ সালে দেশে ফিরে এসেই যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে যখন বঙ্গবন্ধু গড়ে তুলছিলেন, দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত মানুষের কল্যাণে কাজ শুরু করেন তখন অর্থাৎ বাহাত্তর সাল থেকেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়। পরিকল্পিতভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করা, জাসদ সৃর্ষ্টি করা হয়েছিল। পাকিদের দোসররা তখন হঠাৎ করেই হাওয়া হয়ে গেল। তারা বিভিন্ন আন্ডারগ্রাউন্ড পার্টিতে মিশে গিয়ে নানা চক্রান্ত চালাতে লাগল। পত্র-পত্রিকায় নানাভাবে অপপ্রচার চালিয়ে হত্যাকান্ডের ক্ষেত্র তৈরি করা হয়েছিল। যারা ’৭৫-এর হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত এবং যারা এ হত্যাকান্ডের গ্রাউন্ড তৈরি করেছিল তারা সমানভাবে দায়ী। সেদিন বেশিদূরে নয়, হত্যাকান্ডের পেছনের ক্ষেত্র প্রস্তুতকারীদের চেহারাও বের হবে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট সপরিবারে জাতির পিতা হত্যাকান্ডকে ইতিহাসের সবচেয়ে জঘন্য ও নির্মম হত্যাকান্ড উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের সহযোগিতায় বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করতে পেরেছি। দেশকে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে নিতে বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথ ধরে আমরা এগিয়ে চলেছি। আমরা এমন এক সময় জাতীয় শোক দিবস পালন করছি, যখন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ১০১তম জন্মবার্ষিকীও পালন করছি।
বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, কারবালার প্রান্তরেও হত্যাকান্ড হয়েছে, কিন্তু সেখানে কোন নারী-শিশুকে হত্যা করা হয়নি। কিন্তু ১৫ আগস্ট নারী-শিশু, অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীসহ পরিবারের সবাইকে হত্যা করা হয়েছে। ১৫ আগষ্ট ঘটিয়েই ঘাতকরা থেমে থাকেনি, পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু পরিবারের যাঁরা বেঁচে আছে তাদেরও খুঁজে বেরিয়েছে। অর্থাৎ বঙ্গবন্ধুর পরিবারের একটি রক্তও যেন বেঁচে না থাকে সেই চেষ্টাই করা হয়েছিল।
আক্ষেপ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি জাতির জন্য, দেশের মানুষের মুক্তি ও স্বাধীনতার জন্য জীবনের সবকিছু উজাড় করে দিয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু। তাঁর জীবনের কোন চাওয়া-পাওয়া ছিল না। শুধুই তিনি দেশের মানুষের কথা ভাবতেন, শোষণ-বঞ্চনা, নিপীড়নের হাত থেকে মুক্তি দিতে এবং দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করতেই অজীবন লড়াইসংগ্রাম করেছেন, জীবনের অধিকাংশ সময় কারাগারে কাটিয়েছেন।
তিনি বলেন, গোটা জাতিকে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। এ দেশের মাটির সন্তান কেউ আগে রাষ্ট্রের ক্ষমতায় ছিল না। সবাই বাইরে থেকে এসে এদেশকে শাসন ও শোষণ করেছে। একমাত্র বাংলাদেশের মাটির সন্তান হচ্ছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। মাটির সন্তান বলেই একটি জাতিকে দীর্ঘ সংগ্রামের পথ ধরে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে নেতৃত্ব দিয়ে স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন। আর যুদ্ধে যে বাংলাদেশের মানুষের বিজয় আসবে তা আগে থেকেই জানতেন বঙ্গবন্ধু। দেশের মানুষকে নিয়ে আমার পিতার (বঙ্গবন্ধু) যে স্বপ্ন ছিল, তাঁর বড় সন্তান হিসেবে পাশে থেকে শুনেছি, জেনেছি। আমার মা বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিব যেমন সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর পাশে ছিলেন তেমনি দক্ষ হাতে সংসারও চালিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি মানুষ (বঙ্গবন্ধু) সবটুকু দিয়েছিলেন একটি জাতির জন্য। নিজের জীবনের কোন চাওয়া-পাওয়া ছিল না। সব সময় তিনি দেশ ও মানুষের কথা ভাবতেন। এদেশের মানুষ একবেলা খেতেও পারত না। চিকিৎসা, শিক্ষা, ঘরবাড়ি নেই, সেই শোষিত-বঞ্চিত মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন। এদেশের মানুষকে স্বাধীনতার চেতনায় তিনি উদ্বুদ্ধ করেছিলেন।
তিনি বলেন, বাহাত্তরের ১০ জানুয়ারি তিনি দেশে এসেছেন। সেই বাহাত্তর সাল থেকেই কিন্তু ষড়যন্ত্র শুরু। মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে দু’ভাগ হলো। জাসদ সৃষ্টি হলো। পাকিস্তানী দোসর, অনেক বড় বড় নেতা পাকিস্তানী পাসপোর্ট নিয়ে চলে গেল। কিন্তু যারা এদেশে ছিল তারা কোথায় গেল? তারা যেন উধাও হয়ে গেল। তারা সব আন্ডারগ্রাউন্ড পার্টির সঙ্গে মিশে গেল।
এই হত্যাকান্ডের পেছনে কারা আছে, সে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এজন্য তো বেশি খোঁজার দরকার নেই। তখকার পত্র-পত্রিকা ও তাদের বক্তব্য খুঁজে বের করেন, অনেক খবর আপনাদের কাছে স্পস্ট হয়ে যাবে। একটি দেশ প্রতিষ্ঠার পরে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তুলতে বছরের পর সময় লেগে যায়। সেখানে একটি বছরও সময় দেয়া হলো না। শুরু হলো সমালোচনা। আর ধৈর্য ধরা হলো না। এটা হলো না কেন, সেটা হচ্ছে না কেন- এমন নানা কথা লেখা হলো, অপপ্রচার চালানো হলো। কারা লিখেছিল? কাদের খুশি করতে? তারা এই হত্যাকান্ডের জন্য একটা অবস্থান বা ক্ষেত্র তৈরি করছিল। যাকে বলে গ্রাউন্ড প্রিপেয়ার করা। সেটা করা হয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, আমি জানি- যারা সরাসরি হত্যা করেছে তারা নিজেরা স্বীকারও করেছে। বিবিসির ইন্টারভিউয়ে খুনী রশিদ-ফারুক বলেছে যে তারা হত্যা করেছে। কারণ, তাদের একটা চেষ্টা ছিল- বিভিন্ন অপপ্রচার চালিয়ে বঙ্গবন্ধুকে জনগণের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করা। সেভাবে অনেক অপপ্রচার চালিয়েও বঙ্গবন্ধুকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারেনি। আর এ জন্যই তারা এই হত্যাকা- ঘটিয়েছে। এটাই হলো বাস্তবতা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তখন যারা সমালোচনা করেছে, লিখেছে, বক্তব্য দিয়েছে, তারা তো এদেরই দোসর হিসেবে গ্রাউন্ড তৈরি করছিল। সেটাও একটু আপনারা স্মরণ করে রাখবেন। তাহলে এসব খুঁজতে আপনাদের বেশিদূর যেতে হবে না। কেউ কমিশন গঠন করতে বলছেন, এ দাবি করছেন, ওই দাবি করছেন, খুব ভাল কথা। সেই সঙ্গে এই জিনিসগুলোও পড়ে দেখেন, অনেক কিছুই আপনাদের কাছে স্পস্ট হয়ে যাবে।
সরকারপ্রধান এ প্রসঙ্গে আরও বলেন, আজকে খুনীদের বিচার হয়েছে। এখনও যারা কয়েকজন পলাতক রয়েছে। তার মধ্যে খুনী ডালিম তখন থেকে পাকিস্তানেই আছে। মাঝেমধ্যে সে অন্য দেশেও যায়। সে পাকিস্তানী পাসপোর্ট নিয়েই চলে। কিন্তু পাকিস্তান সরকার এটা স্বীকারও করে না, তাকে দেয়ও না। আর রাশেদ ও নূর- একজন কানাডা আরেকজন আমেরিকায় আছে। খুনী মোসলেম উদ্দিনের খোঁজ মাঝেমধ্যে পাওয়া যায়, মাঝেমধ্যে পাওয়া যায় না- এই অবস্থার মধ্যে আছে।
তিনি আরও জানান, এক সময় খুনী নূরকে কানাডা থেকে ডিপোর্ট করার কথা ছিল। সেই সময় কানাডায় আমাদের যে হাইকমিশনার ছিল- খুনী মোশতাকের দ্বিতীয় স্ত্রীর আগের পক্ষের ছেলে। সে ছিল তখন হাইকমিশনার। রাষ্ট্রদূত হিসেবে যে দায়িত্ব পালনের কথা ছিল সে সেই দায়িত্ব পালন করেনি। সে নূরকে ডিপোর্ট করার কোন ব্যবস্থাই নেয়নি। তবে এখনও তাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
স্বাধীনতার মাত্র কিছুদিনের মধ্যে দেশের মানুষকে জাতির পিতার সংবিধান উপহার দেয়ার কথা তুলে ধরে তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করতেন। তাই দেশে ফিরে অল্পদিনের মধ্যেই জাতিকে তিনি সংবিধান উপহার দিয়েছিলেন। ’৭৩ সালে নির্বাচন দিয়েছিলেন। যা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। বঙ্গবন্ধু যখন সমস্ত জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে উৎপাদন বৃদ্ধিসহ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন; স্বাধীনতাবিরোধী, একাত্তরের পরাজিত শত্রু ও তাদের দোসররা এটা মেনে নিতে পারেনি। স্বাধীনতা পেলেও বাংলাদেশের মানুষ আরও গরিব হবে এটাই ওই পরাজিত শত্রু ও তাদের দোসররা চেয়েছিল।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের মাত্র কিছুদিন আগে তাঁরা দুই বোন জার্মানিতে যাওয়ায় প্রাণে বেঁচে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে কান্নাজড়িত কণ্ঠে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবাইকে রেখে মাত্র ক’দিন আগেই আমার স্বামীর কর্মস্থল জার্মানিতে গিয়েছিলাম শেখ রেহানাকে নিয়ে। ১৩ আগস্ট পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আমার শেষ কথা হয়। কিন্তু একরাতে সব শেষ হয়ে যাবে এখনও ভাবতেও পারি না।
’৮১ সালে দেশে ফিরে আসার পরও নানা বাধার সম্মুখীন হওয়ার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ আমাকে সভাপতি নির্বাচিত করার পর ’৮১ সালে দেশে ফিরে আসি। দেশে আসার পরও আমাকে অনেক বাধা-বিপত্তি মোকাবেলা করতে হয়েছে। আমার বাবা এদেশকে স্বাধীন করেছে। তাই আমার চলার পথ ঠিক রেখে, স্বাধীনতা কখনও ব্যর্থ হতে পারে না, তাই স্বাধীনতার সুফল যেন প্রত্যেক মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে- সেই লক্ষ্য নিয়ে সকল বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে এগিয়ে গেছি।
দলের দুঃসময়ে অনেকের ভিন্নপথে চলার মানসিকতা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেকেই আছেন একটা দুঃসময় এলেই অস্থির হয়ে পড়েন। যারা অর্থের লোলুপতা নিয়ে থাকে তারা দুঃসময়ে সাহস নিয়ে দাঁড়াতে পারে না। আর যাদের অর্থসহ কোন কিছুর লোলুপতা থাকে না, সততার শক্তি থাকে- তারা প্রতিটি দুঃসময়ে ঘুরে দাঁড়ায়, প্রতিবাদ-প্রতিরোধ গড়ে তুলে। কারণ সততাই হচ্ছে বড় শক্তি। এটাই তো হচ্ছে প্রকৃত রাজনীতি।
অর্থ-সম্পদ কখনও স্থায়ী হয় না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই করোনা সবাইকে শিক্ষা দিয়েছে যে, অর্থ-সম্পদ কোন কিছুই কাজে লাগে না। একটি অদৃশ্য একটা জিনিস গোটা বিশ্বকে স্থবির করে দিয়েছে, মানুষের জীবনকে আতঙ্কগ্রস্ত করে দিয়েছে। এখানে অর্থ-সম্পদ কিংবা অস্ত্র কোন কিছুই কাজে লাগেনি- এটাই হলো বাস্তবতা। তিনি বলেন, যারা বিশ্বের অস্ত্রের ভা-ার গড়ে তুলেছে, অর্থ-সম্পদের পাহাড় গড়েছে- কিন্তু অদৃশ্য এই করোনার কাছে কোন কিছুই কাজে লাগেনি। মহান আল্লাহতায়ালা যেন সেটাই বিশ্ববাসীকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন।
করোনার কারণে ঘরে (গণভবন) বন্দী থাকার কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বাবা-মাসহ পরিবারের সবাইকে হারিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, সমর্থকরাই হচ্ছেন আমার পরিবার। কিন্তু করোনার কারণে সামনাসামনি দেখা হচ্ছে, ঘরে অনেকটা বন্দীর মতো রয়েছি- এটাই সবচেয়ে দুঃখের। তবে সবাই দোয়া করবেন- এই করোনা থেকেও আমরা যেন মুক্ত হতে পারি। আর বঙ্গবন্ধুর রক্ত কখনও বৃথা যাবে না, বৃথা যেতে দেব না। দেশের মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলব, এটাই হচ্ছে জাতীয় শোক দিবসে আমাদের অঙ্গিকার।
স্বাগত বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দেশবাসীকে দেশবিরোধী অপশক্তির ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সজাগ ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের কুশীলবরা এখনও সক্রিয়। বঙ্গবন্ধু পরিবারকে ঘিরে এখনও ষড়যন্ত্র চলছে। সামনে ষড়যন্ত্রের বৈরী স্রোতে আরও তীব্র হতে পারে। তাই আমাদের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ। যত ষড়যন্ত্রই হোক না কেন বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ সবকিছু মোকাবেলা করেই অদম্য গতিতে এগিয়ে যাবে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডে জিয়াউর রহমান যে জড়িত বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরা আর কী প্রমাণ চান? বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর আত্মস্বীকৃত খুনীদের রক্ষা, বিদেশে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করা, ইনডেমনিটিকে আইন করে হত্যার বিচার নিষিদ্ধ করা, বঙ্গবন্ধু ও ৭ মার্চের ভাষণ নিষিদ্ধ এবং দেশকে পাকিস্তানের ভাবধারায় নিয়ে যাওয়া, এসবই করেছে জিয়াউর রহমান। এরপরও আর কী প্রমাণ চায় বিএনপি নেতারা?