সুনামগঞ্জ জেলা পাসপোর্ট কার্যালয় থেকে প্রতারণার মাধ্যমে দুই রোহিঙ্গার নাগরিকের পাসপোর্ট নেওয়ার চেষ্টা মামলায় নয়জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দিয়েছে পুলিশ। ওই মামলায় এজহারভুক্ত আসামি না হলেও অভিযোগপত্রে সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখত, ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হোসেন আহমদ রাসেলসহ পৌরসভার দুই কর্মকর্তা ও একজন আইনজীবীকে যুক্ত করা হয়েছে।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ৪ এপ্রিল সুনামগঞ্জ জেলা পাসপোর্ট কার্যালয়ে নাম, ঠিকানা পরিবর্তন করে পাসপোর্ট করতে আসেন দুই রোহিঙ্গা। তাদের মধ্যে একজন নারী ছিলেন। তারা টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে চার ব্যক্তির সহযোগিতায় সুনামগঞ্জে আসেন। এই চার ব্যক্তি জেলার জামালগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা। ওই দিন সকালে পাসপোর্ট করতে গিয়ে তারা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেন। বিকেলে আবার ছবি তোলা ও আঙ্গুলের ছাপ দিতে পাসপোর্ট কার্যালয়ে গেলে কর্মকর্তাদের সন্দেহ হয়। পরে দুই রোহিঙ্গা ও তাদের সহযোগী চার ব্যক্তিকে আটক করে পুলিশে দেন পাসপোর্ট কার্যালয়ের কর্মকর্তারা।
ওই দিনই প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগে জেলার জামালগঞ্জ উপজেলার তেরানগর গ্রামের মো. ফরহাদ আহমদ (৩৬), রামনগর গ্রামের মো. নূর হোসেন (২৩), সুজাতপুর গ্রামের মো. জসিম উদ্দিন (২৪) ও আমির উদ্দিনকে (২৩) আসামি করে সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জিন্নাতুল ইসলাম তালুকদার। এর আগে ওই দুই রোহিঙ্গা সুনামগঞ্জ পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের আলীপাড়া এলাকার বর্তমান বাসিন্দা হিসেবে স্থানীয় কাউন্সিলর হোসেন আহমদ রাসেলের সুপারিশে পৌরসভা থেকে জন্ম সনদ নিয়েছিলেন।
এই মামলায় গত ২১ অক্টোবর আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। এতে এজহারভুক্ত চার আসামি ছাড়াও অভিযুক্তদের তালিকায় সুনামগঞ্জ পৌরসভার ১ নম্বর ওয়াডের কাউন্সিলর হোসেন আহমদ রাসেল, পৌরসভার সহকারী কর আদায়কারী পিযুষ কান্তি তালুকদার, পৌরসভার জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধক ও স্যানিটারী পরিদর্শক মো. সেলিম উদ্দিন, পৌরসভার মেয়র নাদের বখত ও সুনামগঞ্জ বারের আইনজীবী কাওসার আলমকে যুক্ত করা হয়েছে।
অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের জন্মসনদ প্রদান প্রক্রিয়ায় পৌরসভার মেয়র, কাউন্সিলরসহ ওই কর্তকর্তারা যুক্ত আছেন। পরে আইনজীবী কাওসার আলম সেটি সত্যায়ন করেছেন।
আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সদর মডেল থানার উপপরির্দক (এসআই) এ কে এম জালাল উদ্দিন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখত বলেন, জন্ম নিবন্ধন সনদে আমি সরাসরি স্বাক্ষর করার কোনো সুযোগ নেই। কেউ আবেদন করলে প্রথমে ওই ব্যক্তিকে সনাক্ত করেন সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলর। এরপর কর আদায় শাখা দ্বিতীয়বার ওই ব্যক্তির হোল্ডিং নম্বর যাচাই করে। তৃতীয়ধাপে নিবন্ধন শাখার কর্মকর্তা সব কাগজপত্র যাচাই শেষে মেয়রের কাছে উপস্থাপন করলে মেয়র তাতে স্বাক্ষর করেন।
পৌর মেয়র আরও বলেন, ওই বছরের ২ এপ্রিল আমি ঢাকায় গিয়েছিলাম। সেখানে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ছিলাম। আদৌ আমি ওই জন্মসনদে স্বাক্ষর করেছি কি-না সেটিও দেখতে হবে। মামলায় আমার নাম এজহারে ছিল না। এখন দেড় বছর পর এসে আমাকে যুক্ত করা হয়েছে এবং এটি আমি বৃহস্পতিবার রাতে জানতে পেরেছি। সামনে নির্বাচন। মনে হচ্ছে এর পেছনে কোনো ষড়যন্ত্র আছে। (খবর সংবাদদাতার)