ছয় দিনের ক্যাম্পেনে টিকা নিয়েছেন ৫৮ লাখ মানুষ

5

কাজিরবাজার ডেস্ক :
করোনা প্রতিরোধে দেশে টিকাদান কর্মসূচী শুরু হওয়ার সময় সবার মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক তৈরি হয়েছিল। টিকার কার্যকারিতা নিয়ে ছিল জনমনে নানা সংশয়। কিন্তু কিছু দিনের মধ্যে সে আতঙ্ক কাটিয়ে ব্যাপক উৎসাহে টিকা কেন্দ্রে আসছেন সাধারণ মানুষ। এর ফলে সফলভাবে শেষ হয়েছে প্রথমবারের মতো টিকাদান ক্যাম্পেন। এই ক্যাম্পেনে টিকা নিয়েছেন ৫৮ লাখ মানুষ। শুধু তাই নয় টিকা নিতে সরকারী ওয়েবসাইট সুরক্ষা এ্যাপে নিবন্ধিত হয়েছেন আরও ৩ কোটির বেশি মানুষ। সরবরাহে কিছুটা ঘাটতি থাকায় এখনও সবাইকে টিকা দেয়া সম্ভব না হলেও চলতি মাসেই টিকার আরও বড় চালান আসবে। আর এর মাধ্যমে নিবন্ধিত সবাই টিকা পাবেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, গত ৭ আগস্ট থেকে দেশব্যাপী শুরু হওয়া ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্পেনের মাধ্যমে ৬ দিনে মোট ৫৮ লাখ ২ হাজার ৬৬৬ ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে। এই ক্যাম্পেনের প্রথম দিন ৭ আগস্ট টিকা দেয়া হয়েছে ৩১ লাখ ২৪ হাজার ৬৬ ডোজ, ৮ আগস্ট দেয়া হয় ৭ লাখ ৪৬ হাজার ২৪৮ ডোজ, ৯ আগস্ট দেয়া হয় ৬ লাখ ৩১ হাজার ৩৮২ ডোজ, ১০ আগস্ট ৪ লাখ ৮৮ হাজার ১৫৮ ডোজ, ১১ আগস্ট ৪ লাখ ১৭ হাজার ৪৮৭ ডোজ এবং শেষদিন অর্থাৎ ১২ আগস্ট দেয়া হয়েছে ৪ লাখ ৪৬ হাজার ৮৭৩ ডোজ।
অধিদফতর জানায়, দেশে করোনার টিকাদান কর্মসূচী শুরুর পর এখন পর্যন্ত টিকা দেয়া হয়েছে মোট ২ কোটি ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৯৮০ ডোজ। এর মধ্যে এক ডোজ নিয়েছেন এক কোটি ৫৩ লাখ ১১ হাজার ৬৬৯ জন এবং দুই ডোজ নিয়েছেন ৫২ লাখ ২৪ হাজার ৩১১ জন। এর মধ্যে রয়েছে অক্সফোর্ডের এ্যাস্ট্রাজেনেকা, চীনের সিনোফার্ম, ফাইজার এবং মডার্নার ভ্যাকসিন।
এদিকে টিকাদান ক্যাম্পেন শেষ হলেও টিকাপ্রত্যাশীদের তালিকা বেড়েই চলেছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে সুরক্ষা এ্যাপে টিকা পেতে নিবন্ধন করেছেন ৩ কোটির বেশি মানুষ। তবে কেউ কেউ অভিযোগ করছেন ১ মাস আগে নিবন্ধন করলেও পাচ্ছেন না টিকার মেসেজ।
এ প্রশ্নের উত্তর দিলেন খোদ স্বাস্থ্যমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, সবাইকে টিকা দেয়া হবে। আমরা একবারেই সবাইকে টিকা দিতে পারব না। আমরা সাধ্যমতো টিকা কিনে আনার চেষ্টা করছি। সবাই টিকা পাবেন। ধৈর্য্য ধরতে হবে। করোনার টিকা নিয়ে আন্তর্জাতিক রাজনীতি চলছে। বড় বড় দেশগুলো তাদের জনসংখ্যার ৪ থেকে ৫ গুণ বেশি টিকা বানিয়ে মজুত করেছে। তবে টিকার চাইতে স্বাস্থ্যবিধিটা মেনে চলা বেশি জরুরী। তিনি বলেন, টিবি, পক্স আগে মানুষের ছিল না। প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে অসুখগুলো আসে, এখনও আসছে। আমরা জানি যে করোনা কোন একটি প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে এসেছে। স্মল পক্স প্রতিরোধ করা গেছে। কোন এক সময় করোনাও মোকাবেলা করা সম্ভব হবে। তবে আশার কথা, আমরা বিভিন্ন মাধ্যম থেকে ভ্যাকসিন পাচ্ছি। কোভ্যাক্স থেকে আমরা ভ্যাকসিন পাচ্ছি, নিজেরাও কিনছি। ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকা দিতে হলে ২৬ থেকে ২৭ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন প্রয়োজন হবে। একসঙ্গে এত ভ্যাকসিন আমরা পাব না, রাখতেও পারব না। আমরা চেষ্টা করছি, যখন যেটা পাওয়া যায় আনার জন্য। তাই আমরা একবারে সবাইকে ভ্যাকসিন দিতে পারব না। ধৈর্য্য ধরতে হবে। আস্তে আস্তে সবাইকে আমরা ভ্যাকসিন দিচ্ছি।
কেন্দ্রের টিকাদানের সক্ষমতা কম থাকায়ই মেসেজ আসতে দেরি হচ্ছে জানিয়ে করোনা চিকিৎসায় ডেডিকেটেড এবং রাজধানীর অন্যতম টিকাকেন্দ্র ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট টিবি হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডাঃ আয়েশা আক্তার বলেন, সবাই মেসেজ পাবে। আমরা দেখছি নতুন নতুন উৎস থেকে ভ্যাকসিন আসছে। এভাবে ভ্যাকসিন আসতে থাকলে ৩ কোটি মানুষকে ভ্যাকসিন দেয়া অসম্ভব কিছু না। টিকাদানকেন্দ্রগুলোর সক্ষমতা কম থাকায় এবং একটি কেন্দ্রের বিপরীতে হাজারো মানুষের নিবন্ধনের কারণেই মেসেজ আসতে দেরি হচ্ছে। তবে মানুষকে ধৈর্য্যহারা হলে হবে না। সবারই মেসেজ আসবে। তবে এর আগে স্বাস্থ্যবিধি মানাটা জরুরী। ভুলে গেলে চলবে না স্বাস্থ্যবিধি না মানলে টিকা নিয়েও করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে সব সময়।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসেই টিকার আরও বড় চালান আসবে। এ চালান আসার পরপরই টিকার বর্তমান ঘাটতি থাকবে না। আর যারা প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন তাদের জন্য দ্বিতীয় ডোজের টিকারও পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। অধিদফতরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডাঃ নাজমুল ইসলাম জানান, দেশে যারা ফাইজার এবং মডার্নার টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন, তাদের দ্বিতীয় ডোজ নিশ্চিত করেই টিকা কর্মসূচী চালানো হচ্ছে। যারা ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নিয়েছেন, তারা চার সপ্তাহ পরে দ্বিতীয় ডোজ নিতে পারবেন। তিনি বলেন, এ টিকার প্রথম ডোজ গ্রহীতা যে কেন্দ্রে এবং যে কোম্পানির নিয়েছেন, দ্বিতীয় ডোজও সেই একই কেন্দ্রে এবং একই কোম্পানির টিকা নিতে পারবেন। এ নিয়ে বিভ্রান্ত হওয়ার কোন অবকাশ নেই।