কাজিরবাজার ডেস্ক :
মহামারী করোনায় আবারও ক্ষতির আশঙ্কায় অর্থনীতি সচল রাখতে সরকার প্রণোদনা প্যাকেজ বাড়ানোর পথে হাঁটছে। প্রথম ধাক্কা সামলানোর আগে করোনার বর্তমান দ্বিতীয় ঢেউয়ের সঙ্গে বাঁচা-মরার লড়াই করছে এদেশের মানুষ। করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুহার প্রতিদিন বাড়ছে। এ অবস্থায় চলমান কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যেও কঠিন বাস্তবতা মেনে মরণঘাতী করোনার তৃতীয় ঢেউ মোকাবেলার প্রস্তুতি ও চ্যালেঞ্জও গ্রহণ করতে হচ্ছে। এর আগে গত এক বছর আগে জীবন বাঁচানোর পাশাপাশি দেশের অর্থনীতি সচল রাখতে সব ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হয়। আর এ কারণে করোনা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে সামষ্টিক অর্থনীতি। বেড়েছে রফতানি আয় ও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স আহরণের পরিমাণ।
অর্থনীতির এই উত্তরণ ধরে রাখতে ইতোমধ্যে সরকার কয়েক দফায় ১ লাখ ৩১ হাজার ৫০৩ কোটি টাকার ২৮টি প্যাকেজ বাস্তবায়ন করছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ধীরে ধীরে এই প্যাকেজের পরিমাণ ১ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকায় নিয়ে যাওয়া হতে পারে। করোনার দ্বিতীয় ও তৃতীয় ঢেউ বিবেচনায় রেখে প্রণোদনা প্যাকেজ বাড়ানো হচ্ছে। সেই সঙ্গে বৈধপথে রেমিটেন্স আনতে প্রণোদনার পরিমাণ ২ থেকে বাড়িয়ে ৩ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এছাড়া রফতানি বাড়াতে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ ব্র্যান্ড সারাবিশ্বে ছড়িতে দিতে ভ্যাট ও কর ছাড়ে বড় সুযোগ দিয়েছে সরকার। ফলে রফতানিতে যোগ হচ্ছে নতুন নতুন পণ্য ও সেবা।
জানা গেছে, মহামারীর এই সময়ে দেশের রফতানি ও প্রবাসী আয় বাড়লেও করোনার আঘাতে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে দেশের পুরো অর্থ ব্যবস্থা। বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারিমানের শিল্পকারখানাগুলো ভয়াবহ চাপের মুখে রয়েছে। কাজ হারিয়ে অনেকে বেকার হয়ে পড়েছেন। চলমান কঠোর লকডাউনের মধ্যে ছোট ছোট উদ্যোক্তা ও দিনমজুর শ্রেণীর মানুষ কাজ হারিয়েছেন। কষ্টে আছেন তারা। এ অবস্থায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) করোনার তৃতীয় ঢেউ সারাবিশ্বে বড় আঘাত আনবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। সংস্থাটির এই আশঙ্কা থেকে ইতোমধ্যে দেশের মানুষের জীবন ও অর্থনীতি সুরক্ষায় প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত। বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশকেও সেই পথে হাঁটতে হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে কোরবানির ঈদের আগে নতুন করে আরও ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকার ৫টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়। করোনার ভয়াবহতা মাথায় রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের আওতা ও পরিমাণ আরও বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
কঠিন বাস্তবতার মুখে দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলা করার সঙ্গে আবার তৃতীয় ঢেউ মোকাবেলার প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি ক্রয় সংক্রান্ত বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, করোনার কারণে সারাবিশ্ব অস্থির ও কঠিন সময় পার করছে। বাংলাদেশও বৈশ্বিক এ সঙ্কটের বাইরে নয়। করোনা থেকে অর্থনীতি সুরক্ষা এবং মানুষের জীবন বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রীর প্রণোদনা প্যাকেজে বিভিন্ন কর্মসূচী রয়েছে। এসব কর্মসূচী দ্রুত বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, করোনা থেকে বাঁচতে সবার আগে মানুষের জীবন বাঁচানোকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। আর এ কারণে দেশের সবাই সরকারী বিনামূল্যের ভ্যাকসিন পাবেন। এর পাশাপাশি অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে প্রণোদনা প্যাকেজ দ্রুত বাস্তবায়নে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। করোনা পরিস্থিতি খারাপ হলে সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনে আরও প্রণোদনা দেয়া হবে।
জানা গেছে, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ প্রবলভাবে দেশে আছড়ে পড়ায় উদ্বিগ্ন ও উৎকণ্ঠায় দেশের মানুষ। চলমান বিধিনিষেধ ৫ আগস্টের পর আরও বাড়ানো হবে কিনা তা নিয়েও সংশয় রয়েছে সাধারণ মানুষের। তৈরি পোশাকসহ সব ধরনের কলকারখানা এখন বন্ধ রাখা হয়েছে। বিনিয়োগকারী ও উদ্যোক্তাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ছে। এ অবস্থায় রফতানি পণ্য উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। সব মিলিয়ে কঠিন চাপের মুখে রয়েছে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। তবে কীভাবে, কত দ্রুত এই পরিস্থিতি থেকে অর্থনীতি বের করে আনা যায় সে বিষয়ে কাজ করছে অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ বিভাগের একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, প্রণোদনা প্যাকেজের আওতা, এর পরিমাণ আরও বাড়ানো হবে। কোন কোন খাতে আর্থিক প্রণোদনা দরকার এবং তাদের হাতে কিভাবে তা পৌঁছানো যায় সে বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। শীঘ্রই হয়ত আরেকটি ঘোষণা আসতে পারে।
প্রণোদনা প্যাকেজের আওতা ও পরিমাণ বাড়বে : করোনাভাইরাস মহামারীতে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবেলায় বিভিন্ন খাতে গত এক বছরে ১ লাখ ২৮ হাজার ৩০৩ কোটি টাকার ২৩টি আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। তবে কোরবানির আগে আরও ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকার আরও ৫টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়। অর্থাৎ এখন ১ লাখ ৩১ হাজার ৫০৩ কোটি টাকার ২৮টি প্যাকেজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ধীরে ধীরে এই প্যাকেজের পরিমাণ ১ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকায় নিয়ে যাওয়া হতে পারে। করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে প্রণোদনা প্যাকেজ বাড়ানো হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, প্যাকেজ ঘোষণার পর ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট প্রণোদনা প্যাকেজের মোট বরাদ্দের প্রায় ৮৩ শতাংশ অর্থই ইতোমধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের দাবি, প্রণোদনা প্যাকেজের প্রত্যক্ষ সুবিধাভোগীর সংখ্যা ১ কোটি ২৪ লাখ গ্রাহক। মহামারীর শুরুতে রফতানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠান পোশাক কারখানার বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল সরকার। মালিকদের দাবির মুখে সেই ঋণ আরও বাড়িয়ে প্রায় দশ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি করা হয়। ওই সময় প্রায় ১৮শ’ কারখানা মালিক এ ঋণ সুবিধা নিয়ে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দিয়েছেন।
এছাড়া এ মহামারীতে ছোটবড় সব ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্যই ক্ষতির মুখে পড়েছে। প্রণোদনা প্যাকেজে দেশের ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি শিল্পের জন্য বরাদ্দ হয় ২০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৪ হাজার ৬৫৪ কোটি টাকা জুন পর্যন্ত বিতরণ করা হয়েছে। তবে ঋণ বিতরণের হার কম বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা। আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ঋণের সুদ সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ। পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে যে, স্বল্পসুদে এ ঋণের সুবিধা বড় বড় শিল্প কারখানা আর সুবিধাজনক অবস্থানে থাকা ব্যবসায়ী উদ্যোক্তারাই পেয়েছেন এবং উপকৃত হয়েছেন। জানা গেছে, বড় বড় শিল্পগোষ্ঠী শত শত কোটি টাকা এই প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে ঋণ নিয়েছেন। তবে সেই তুলনায় ক্ষুদ্র ও মাঝারিমানের শিল্পকারখানার উদ্যোক্তারা ঋণ পেয়েছেন কম। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সঙ্গীতা আহমেদ বলেন, তাদের দশ হাজারের বেশি উদ্যোক্তা সদস্যের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকজন এই প্রণোদনার সুবিধা পেয়েছেন। এ কারণে দ্রুত আরও বেশি সংখ্যক উদ্যোক্তাকে ঋণ সুবিধার আওতায় আনতে হবে।
অন্যদিকে, করোনায় কাজ হারানো মানুষকে খাদ্যের সঙ্গে সঙ্গে নগদ অর্থও দেয়ার কথা বলছেন অর্থনীতিবিদরা। শুরুতে ৫০ লাখ পরিবারের জন্য নগদ অর্থ বরাদ্দের উদ্যোগ নেয়া হলে তালিকা প্রণয়নে অনিয়ম আর ত্রুটির কারণে শেষ পর্যন্ত প্রায় ১৪ লাখ পরিবার এ সহায়তা থেকে বাদ পড়ে। এ প্রসঙ্গে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, ৫০ লাখ পরিবারকে আড়াই হাজার টাকা করে দেয়ার কথা ছিল। সেখানে ৩৫ লাখের মতো পেয়েছে, বাকিরা কিন্তু পায়নি। এখানে আবার কথা রয়েছে- যারা পেল তাদের সবার প্রয়োজন ছিল কিনা এবং যারা বাইরে রয়ে গেল তারা কেন এই তালিকায় আসতে পারল না। তিনি বলেন, নগদ অর্থের বিলিবণ্টনের ক্ষেত্রেও স্বচ্ছতা এবং ব্যবস্থাপনার আরও উন্নয়ন দরকার।
রফতানি ও রেমিটেন্সে ভর করে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে অর্থনীতি ॥ রফতানি ও রেমিটেন্সের ওপর ভর করে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে দেশের অর্থনীতি। বিশেষ করে তৈরি পোশাক রফতানি গত কয়েক বছরের তুলনায় এখন বেশি হচ্ছে। রাজনৈতিক অস্থিরতার মুখে মিয়ানমার থেকে তৈরি পোশাক ক্রেতারা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। করোনা নিয়ে বিতর্ক থাকায় চীনে যাচ্ছে না ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা। অন্যদিকে ভিয়েতনামে পোশাকের দাম বেশি। এসব কারণে তৈরি পোশাকের বিদেশী ক্রেতাদের ভরসার জায়গা হয়ে উঠছে বাংলাদেশ। করোনা মহামারীর এই সময়ে পোশাক ও চামড়ার ওপর ভর করে দেশের রফতানি প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। এছাড়া প্রবাস আয়ে ভাল করছে বাংলাদেশ। রেমিটেন্স আহরণে প্রণোদনা দেয়ায় বিপুল পরিমাণ রেমিটেন্স আসছে। সম্প্রতি এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে গত ২০২০-২১ অর্থবছরের ১১ মাসের তথ্য তুলে ধরে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়, এক বছরের ব্যবধানে রফতানি আয়ে ১৩ দশমিক ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ও প্রবাসীদের পাঠানো বৈদেশিক মুদ্রার আয়ে ৩৯ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতির পুনরুদ্ধার অব্যাহত রয়েছে।
প্রধান দুই সূচক প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে লাফ এবং রফতানি আয়ের ভাল প্রবৃদ্ধির ওপর ভর করে করোনা মহামারীর মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বলে জানিয়েছে এডিবি। অর্থনীতির পরিস্থিতি নিয়ে এ বছরের এপ্রিলে প্রকাশিত ‘এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক ২০২১’ প্রতিবেদনের হালনাগাদ প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে নিয়ে এই আশার কথা বলা হয়েছে। তবে এপ্রিলের শুরুতে করোনাভাইরাস মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউ রুখতে দেশজুড়ে আরোপ করা বিধিনিষেধের কারণে ‘ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড যে বিঘ্নিত হয়েছে’ তাও এডিবির সম্পূরক প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। উন্নয়ন সংস্থাটি বলছে, অভ্যন্তরীণ চাহিদা কমে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতির গতি শ্লথ হওয়ায় এপ্রিল পর্যন্ত গত অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে বাংলাদেশে গড় মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশে, যা পুরো বছরের পূর্বাভাস ৫ দশমিক ৮ শতাংশের কিছুটা কম।
জানা গেছে, রফতানি আয় বাড়াতে রফতানি পণ্য উৎপাদন ও বিক্রিতে কর ও ভ্যাট ছাড় দেয়া হয়েছে চলতি বাজেটে। বিশেষ করে মেড ইন বাংলাদেশ খ্যাত ব্র্যান্ড সারাবিশ্বে ছড়িয়ে দিতে নতুন নতুন বাজার অনুসন্ধান, পণ্যের গুণগতমান বজায় রাখাসহ সরকারের বেশকিছু কর্মসূচী রয়েছে। এসব কর্মসূচী বাড়লে রফতানি আয় বাড়বে। এছাড়া বাংকিং চ্যানেলে বিদেশ থেকে রেমিটেন্স পাঠালে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। এতে বৈধ পথে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের পরিমাণও বেড়েছে। তবে বৈধ পথে আরও বেশি পরিমাণ রেমিটেন্স আনতে চায় সরকার। এজন্য স্বল্প আয়ের প্রবাসীদের রেমিটেন্স প্রেরণ ফি মওকুফ করার কথা ভাবা হচ্ছে। তবে ফি কমানোর প্রক্রিয়াটি বেশ জটিল। তাই প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৫০০ মার্কিন ডলার কিংবা এর চেয়ে কম রেমিটেন্স পাঠানো প্রবাসীদের প্রচলিত ২ শতাংশ প্রণোদনার পাশাপাশি অতিরিক্ত আরও ১ শতাংশ প্রণোদনা দেয়ার প্রস্তাব করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এ মতামত জানিয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক এ সংক্রান্ত একটি চিঠি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিবের কাছে পাঠিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এ প্রস্তাব পর্যালোচনা করে দেখছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। পর্যালোচনা শেষে সরকারের সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে আলোচনার পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে বলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের মতামত মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। এখন মন্ত্রণালয় সরকারের অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করে যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে, পরবর্তী সময়ে সেটাই কার্যকর হবে। তবে ২ শতাংশ প্রণোদনা দেয়ার ফলে রেমিটেন্স অনেক বেড়েছে। এক্ষেত্রে আরও সুবিধা দেয়া হলে রেমিটেন্স আরও বাড়বে।
দরিদ্রদের জন্য ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকার প্রণোদনা : কোরবানি ঈদের আগে দরিদ্রদের জন্য আরও ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। কোভিডে ক্ষতিগ্রস্ত নিম্ন আয়ের দিনমজুর, সড়ক ও নৌপরিবহন শ্রমিক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ২ হাজার ৫০০ টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। ঈদের পর লকডাউনকালে ওএমএসের মাধ্যমে কমদামে চাল ও আটা বিতরণ করে নগর দরিদ্রদের স্বস্তি দেয়া, বিদেশ ফেরত ও কর্মহীন হয়ে গ্রামে ফেরাদের কর্মসৃজনেও বরাদ্দ রাখা হয়েছে। সারাদেশে ৩৩৩ নম্বরে অনুরোধের প্রেক্ষিতে খাদ্য সহায়তা দেয়া এবং করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পর্যটন খাতের হোটেল, মোটেল, থিমপার্ক ও রিসোর্টগুলোর কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য ৪ শতাংশ সুদে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল হিসেবে ব্যাংক ব্যবস্থার মাধ্যমে ঋণ বিতরণে তহবিল গঠন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় পাঁচটি পৃথক প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, যাতে মোট সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ২ হাজার ২০০ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। আর পর্যটন খাতে ঋণ দেয়ার জন্য ১০০০ কোটি টাকার একটি পৃথক তহবিল গঠন করা হয়েছে, যেখানে ঋণের সুদে ভর্তুকি দেবে সরকার। এ প্রসঙ্গে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে যে পাঁচটি প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে, তারা সবাই আগের প্যাকেজগুলো থেকে বাদ পড়েছে। এসব খাতের সহায়তা পাওয়া খুবই জরুরী ছিল। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কায় সরকার নতুন এই প্রণোদনা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এক বছর ধরে ক্ষতিগ্রস্ত যেসব খাত মোটেই সরকার থেকে কোন সহায়তা পায়নি, এবার তাদেরকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তারা জানান, দিনমজুর, পরিবহন শ্রমিক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা এর আগে ২৫০০ টাকার আর্থিক সহায়তা পাননি। গত ঈদ-উল-ফিতরের আগেই পরিবহন শ্রমিকদের সহায়তা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে শ্রমিকদের তালিকা পেতে বিলম্ব হওয়ায় তা তখন বিতরণ করা সম্ভব হয়নি।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে দেশের সড়ক ও নৌ খাতে যাত্রীবাহী যানবাহনের শ্রমিক সংখ্যা প্রায় ৩২ লাখ। এর মধ্যে প্রায় ২.৩৭ লাখ শ্রমিক নগদ সহায়তা পাবেন, যা মোট শ্রমিকের ৭.৪০ শতাংশ। করোনার কারণে দেশের বিভিন্ন খাতে নিয়োজিত দিনমজুর ও ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও সহায়তা পায়নি। তাই এসব খাতের ক্ষতিগ্রস্ত নিম্ন আয়ের ১৭ লাখ ২৪ হাজার ৪৭০ জনের মধ্যে আর্থিক সহায়তা হিসেবে ৪৫০ কোটি টাকা বিতরণ করা হবে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মোঃ হেলাল উদ্দিন বলেন, সরকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের আর্থিক সহায়তা দেয়ার যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা খুবই প্রশংসনীয়। তবে দেশে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর সংখ্যা অনেক বেশি। উপকারভোগীদের তালিকা যেন স্বচ্ছতার সঙ্গে করা হয়। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সুবিধা আগে নিশ্চিত করতে হবে।