কাজিরবাজার ডেস্ক :
আজ সোমবার পবিত্র হজ্ব। লাখ লাখ নয়- করোনা মহামারীর দ্বিতীয় হজ্বে এবার মাত্র ৬০ হাজার হজ্বযাত্রী সমবেত হবেন আরাফাতের ময়দানে। তারা মীনা থেকে আরাফাতের ময়দানে যাবেন। মীনায় ফজরের নামাজ আদায় করেই লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক ধ্বনিতে হজ্ব যাত্রীরা আরাফাতের ময়দানে গিয়ে নিজ নিজ খিমায় তশরীফ নেবেন। এখানেই দিন ভর ইবাদত বন্দেগিতে মশগুল থাকবেন তারা। আল্লাহর অশেষ রহমতের ময়দান আরাফাতে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করার নামই হজ্ব। এর আগে-পরে অন্য আনুষঙ্গিক কাজ করার মাধ্যমে হজের পরিপূর্ণতা দেয়া হয়।
গতকাল (রবিবার) মিনার মাঠে দিনভর ইবাদত বন্দেগিতে মশগুল ছিলেন সব হজ্বযাত্রী। করোনা মহামারীতে এবারও কঠোর স্বাস্থ্যবিধি ও নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে হজ্ব পালনের সুব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। সোমবার বাদ ফজর হজ্ব যাত্রীরা আরাফাতের ময়দানে গিয়ে সমবেত হবেন। তাদের বহন করার জন্য রয়েছে বিশেষ ট্রেন সার্ভিস। রয়েছে বাসেরও ব্যবস্থা। মীনা থেকে আরাফাতের দূরত্ব বেশি না হওয়ায় অনেকে হেঁটেও রওনা হবেন। তবে বাংলাদেশী হজ্বযাত্রীদের বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত করে দেয়া হয়েছে। কিছু হজ্ব যাত্রী ভিড় এড়াতে মসজিদে নামিরাহর কাছে অবস্থান করার জন্য ফজরের নামাজের আগেই রাত তিনটার দিকে মিনার মাঠ থেকে আরাফাতের উদ্দেশে রওনা হবেন। আরাফাতের অবস্থান সম্পর্কে হাদিস শরিফে বলা আছে- হজ্বের মোট ফরজ কাজ হচ্ছে ৩টি। ইহরাম বাঁধা, ৯ জিলহজ্ব নির্দিষ্ট সময়ে উকুফে আরাফায় অবস্থান করা ও কাবাঘরে তাওয়াফ করা। ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক হজের প্রধান রুকন উকুফে আরাফায় অবস্থান করাটা ফরজ। তাই আজ মিনার মাঠে ফজরের নামাজের পরপরই হজ্বযাত্রীরা আল্লাহর নৈকট্য লাভ ও তামাম জিন্দেগির গুনাহ মাফ করার একান্ত বাসনা নিয়ে রওনা দেবেন আরাফার অভিমুখে। এখানে জোহরের ওয়াক্ত থেকে শুরু হবে উকুফের সময়। এদিন জোহরের ওয়াক্ত থেকে সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যস্ত সময়ের মধ্যে যে ব্যক্তি আরাফায় উপস্থিত হবেন- তার জন্য সূর্যাস্ত পর্যন্ত উকুফ করা ওয়াজিব। কেউ সূর্যাস্তের পূর্বে পৌঁছতে না পারলে আগত রাতের সুবেহ সাদিক পর্যন্ত সময়ের মধ্যে জ্ঞাত ও অজ্ঞাতসারে কিছুক্ষণ অবস্থান করলেও উকুফের ফরজ আদায় হয়ে যাবে।
হাদিস মোতাবেক আরাফায় পৌঁছে উকুফের আগে গোসল করা সুন্নত। অনেকে গোসল না করে শুধু অজু করেই সামান্য খাবার খেয়ে নামাজের প্রস্তুতি নিয়ে থাকেন। আজকের করণীয় হচ্ছে- আরাফার কেন্দ্রবিন্দু মসজিদে নামিরার জামায়াতে অংশগ্রহণ করা। ইমামের পেছনে এক সঙ্গে একই আজানে জোহর ও আছর আদায় করতে হয়। কিন্তু মসজিদে নামিরায় জায়গা সঙ্কুলান না হওয়ায় নিজ নিজ খিমায় বা তাঁবুতে জোহর ও আছর আলাদা পড়ার নিয়ম। তবে এ নিয়ে মতবিরোধও রয়েছে। নিজের তাঁবুতে যদি কেউ মসজিদে নামিরার জামায়াতের সঙ্গে তাল মিলিয়ে জোহর ও আছর একত্রে পড়তে চান, সেটাও সহীহ্ হয়ে যায়। এ নিয়ে বিবাদে না জড়ানোই শ্রেয় বলে মনে করেন মসজিদে নামিরার খতিব। হাদিস অনুযায়ী উকুফে আরাফায় অন্যতম করণীয় হচ্ছে দোয়া-মোনাজাত করা। এখানে দোয়া কবুল হওয়ার ওয়াদা রয়েছে। তাই পূর্ণ এক্বিনের সঙ্গে দোয়া করতে হয়। উত্তম হচ্ছে কিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে একেবারে সূর্যাস্ত পর্যন্ত দোয়া করা। এত দীর্ঘ সময় দাঁড়ানো কঠিন হওয়ায় প্রয়োজনে বসে বিশ্রাম নিয়ে আবার দাঁড়িয়ে দোয়া শুরু করা যেতে পারে।
হাদিসে রয়েছে- আরাফাতের ময়দানে সূর্যাস্ত পর্যন্ত থাকার পর একজন হজ্ব যাত্রীর আসল হজ্ব হয়ে যায়। সূর্যাস্তের পর সবাই হাজী হিসেবে গণ্য হবেন। আরাফাত ময়দান থেকে সূর্যাস্তের পর মাগরিবের নামাজ না পড়েই মুজদালিফার দিকে সব হাজী রওনা হবেন। আরাফা বা হজের দিনটি মুসলমানদের জন্য সারাবছরের সেরা দিন। এটি বিশ্ব মুসলমানের মহাসম্মিলনের দিন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘আরাফার দিন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার বান্দাদের এত অধিক সংখ্যক জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন যা অন্য দিনে দেন না। তিনি এ দিনে বান্দাদের নিকটবর্তী হন ও তাদের নিয়ে ফেরেশতাদের কাছে গর্ব করে বলেন,‘তামরা কি বলতে পার আমার এ বান্দাগণ আমার কাছে কী চায়। তাই এ দিন বেশি বেশি ইবাদত-বন্দেগিতে মনোনিবেশ করা অপরিহার্য। আরাফার দিনে আমরা নিচের আমলগুলো করতে পারি-এক. রোজা রাখা। নবী করিম (স.) বলেন, আরাফার দিনের রোজার ব্যাপারে আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী যে, তিনি এ রোজা দ্বারা পূর্ববর্তী এক বছরের এবং পরবর্তী এক বছরের গোনাহ মাফ করে দেবেন। তবে আরাফার ময়দানে অবস্থানকারী হাজীরা এ দিন রোজা রাখবেন না। দুই. বেশি বেশি দোয়া ও এস্তেগফার পড়া। এ দিনে দোয়া ও তওবা কবুলের সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। নবী কারীম (স) বলেছেন, ‘সবচেয়ে উত্তম দোয়া হলো আরাফার দিবসের দোয়া। আর সর্বশ্রেষ্ঠ কথা যা আমি বলি ও নবীগণ বলেছেন, তা হলো-উচ্চারণ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুওয়া আ’লা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদির। অর্থ : ‘আল্লাহ ব্যতীত সত্যিকার কোন মাবুদ নেই। তিনি একক তার কোন শরিক নেই। রাজত্ব তারই আর সকল প্রশংসা তারই প্রাপ্য, এবং তিনি সর্ব বিষয়ে শক্তিমান।’ তিন. জিকির ও তাসবিহ পাঠ করা। চার. কোরান তিলাওয়াত। পাঁচ. মহানবীর প্রতি বেশি বেশি সলাত ও সালাম পাঠানো। ছয়. যাবতীয় হারাম কাজ থেকে বিরত থাকা।