কে.এম লিমন গোয়াইনঘাট থেকে :
করোনা সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় সারা দেশের ন্যায় গোয়াইনঘাটেও বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে কঠোর লকডাউন। লকডাউন বাস্তবায়নে উপজেলা প্রশাসন সকাল থেকেই বন্ধ করে দিয়েছে দূরপাল্লার পরিবহনসহ সব লোকাল বাস সার্ভিস। জরুরি পরিষেবা ছাড়া বন্ধ করা হয়েছে দোকানপাট, শপিং মল, ইজিবাইক, রিকশা, ভ্যান, লেগুনা, প্রাইভেট কার। অকারণে মানুষ যাতে বাইরে ঘোরাফেরা না করতে পারে, সে জন্য উপজেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত ও পুলিশ বাহিনী রয়েছে কঠোর ভূমিকায়।
লকডাউন চলাকালে কাঁচাবাজার, মাছের বাজারসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর দোকান, মুদিদোকান ও খাবারের দোকান সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত খোলা রাখা হবে। তবে সার্বক্ষণিক খোলা থাকবে ওষুধের মতো জরুরি পরিষেবার দোকান। হোটেল-রেস্তোরাঁ খোলা রাখলেও থাকছে না বসে খাওয়ার সুযোগ, কেবল পার্সেল নেওয়া যাবে। কাঁচাবাজারগুলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিচালনার জন্য যথাসম্ভব খোলা স্থানে সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া বন্ধ থাকবে সব পার্ক, রিসোর্টসহ পর্যটনকেন্দ্র, জনসমাবেশ, সামাজিক অনুষ্ঠান, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান। গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগ মাইকিং করে গতকাল সন্ধ্যা থেকে ইউনিয়ন কেন্দ্র থেকে এ বিষয়ে প্রচার করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার সরেজমিন গিয়ে দেখা যায় সকাল থেকে উপজেলার বাস টার্মিনাল গুলোতে ঠায় দাঁড়িয়ে রয়েছে দূরপাল্লাসহ আন্তজেলার সব পরিবহন। বাস কাউন্টারগুলো বন্ধ। ব্যস্ততম এলাকা উপজেলা সদর, বারহাল বাজার, জাফলংবাজার, মামার বাজার, মোহাম্মদপুর ও জাফলং পিকনিক স্পট একেবারে জনমানবশূন্য। কিছুক্ষণ পরপর পুলিশের টহলরত গাড়িগুলো দ্রুতগতিতে চলাফেরা করছে। মোড়ে মোড়ে থানা পুলিশের পাশাপাশি ট্যুরিস্ট পুলিশের টহল দলকে দেখা গেছে।
জাফলংয়ের মোহাম্মদপুর বাজারে বেলা ১১টার দিকে কয়েকটি দোকান খোলা ছিল। পরে গোয়াইনঘাট সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার প্রভাস কুমার সিংহ ও গোয়াইনঘাট থানার ওসি পরিমল চন্দ্র দেব’র নেতৃত্বে গোয়াইনঘাট থানা পুলিশ ও ট্যুরিস্ট পুলিশের একটি টহলদল এসে দোকানগুলো বন্ধ করে দেয়। আবারও দোকান খুললে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেয় পুলিশ। তবে নানা অজুহাতে মোটর সাইকেল চালকদের আনাগোনা লক্ষ করা গেছে।
এদিকে উপজেলার একাধিক প্রবেশদ্বারে পুলিশের চেকপোস্ট ও তদারকি ছিল চোখে পড়ার মতো।
গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পরিমল চন্দ্র দেব জাফলংয়ে টহল দেওয়ার সময় সাংবাদিকদের বলেন, লকডাউনের প্রথম দিনে অনেকে দোকানপাট খোলার চেষ্টা করেছেন। অনেকে অহেতুক মোটরসাইকেল চালিয়ে এদিক-ওদিক ঘোরাঘুরি করার চেষ্টা করছেন। পুলিশ কঠোর ভূমিকায় রয়েছে। করোনা সংক্রমণ কমাতে পুলিশ প্রয়োজন হলে আরও কঠোর হবে।
গোয়াইনঘাটের ইউএনও মোঃ তাহমিলুর রহমান বলেন, লকডাউন চলাকালে সকাল ৯টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত জরুরি নিত্য প্রয়োজনীয় দোকান খোলা রাখা যাবে। এ সময় সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। লকডাউনের সময় সাধারণ মানুষের চলাচল ও ভিড় এড়ানোর জন্য কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
উপজেলার একাধিক প্রবেশদ্বারে পুলিশের চেকপোস্ট থাকবে। এ সময় সীমান্তে পারাপার বন্ধ থাকবে। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে থাকবে ভ্রাম্যমাণ আদালত। বিধিনিষেধ অমান্যকারীদের জরিমানা করা হবে। তবে, তামাবিল স্থল বন্দরের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম চালু থাকলেও সেখানে সব ধরনের দোকানপাট বন্ধ থাকবে।
পাশাপাশি ইউএনও আরো বলেন সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে অনেকটা অনীহা রয়েছে। অনেকে করোনা সংক্রমণ নিয়ে চলাফেরা করছে। অনেকের একেবারেই কোনো উপসর্গ নেই। কিন্তু ওই ব্যক্তির দ্বারা অনেকে সংক্রমিত হচ্ছেন। এ কারণে করোনা প্রতিরোধ কমিটির সুপারিশে কঠোর লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। লকডাউন বাস্তবায়নে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন কঠোর ভূমিকায় থাকবে।