কাজিরবাজার ডেস্ক :
বেসরকারি উদ্যোক্তাদের আগ্রহ নেই মডেল ফিলিং স্টেশনের। সঙ্গত কারণে এবার সরকার নিজেই উদ্যোগী হয়েছে৷ মুজিববর্ষ উপলক্ষে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) সারাদেশে মডেল ফিলিং স্টেশন নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে৷ জ্বালানির আধুনিক বিতরণ ব্যবস্থায় দেশীয় উদ্যোক্তাদের খুব একটা সাড়া পাওয়া যায়নি। সারাদেশের সব ফিলিং স্টেশনের মধ্যে মাত্র ৫টি এই কার্যাদেশ দেওয়া সম্ভব হয়েছিল। তবে এদের মধ্যে কেউ কেউ কাজ শুরুই করেনি।
এই অবস্থার মধ্যে বিপিসি জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের এক সভায় বলছে, কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ, পদ্মা সেতু এবং মিরেরসরাই বঙ্গবন্ধু অর্থনৈতিক অঞ্চলে মডেল ফিলিং স্টেশন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। তেল বিপণন কোম্পানি পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা নিজস্ব অর্থায়নে এগুলো বাস্তবায়ন করবে। জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব আনিছুর রহমান ওই সভায় বিপিসির এই উদ্যোগে সায় দেন এবং এই বিষয়ে কাজ শুরু করতে গুরুত্ব আরোপ করেন।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, দেশের প্রচলিত ফিলিং স্টেশনে বিশ্বের অন্য দেশগুলোর মতো গ্রাহকসেবার ব্যবস্থা থাকে না। কিন্তু এই মডেল স্টেশনগুলোতে সেবার সব আয়োজন থাকবে।
মডেল ফিলিং স্টেশনে থাকবে আধুনিক ফার্মেসি, খাবারের দোকান ও শৌচাগার। যাত্রীরা লম্বা রাস্তা ভ্রমণ করতে গিয়ে যাতে ক্লান্ত লাগলে বিশ্রাম নিতে পারেন সে আয়োজনও থাকবে কোনও কোনও ফিলিং স্টেশনে। সাধারণত ইউরোপ ও আমেরিকার স্টেশনগুলোতে এ ব্যবস্থা থাকে।
দেশের পেট্রোলপাম্পগুলোতে সাধারণত ডিজেল, অকটেন, পেট্রোল বিক্রি হয়ে থাকে। এছাড়া সিএনজি স্টেশনগুলোতে প্রাকৃতিক গ্যাসকে সিএনজিতে রূপান্তর করে সরবরাহ করা হয়। কিন্তু এখন জ্বালানি ব্যবহারের ধারণায় পরিবর্তন আসছে৷ ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অটোগ্যাস ব্যবহার শুরু হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় এলপিজিকে পরিবহনের জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়া সরকারের উদ্যোগে বিভিন্ন ফিলিং স্টেশনে সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে বৈদ্যুতিক যানের জন্য চার্জিং স্টেশন স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমান বিশ্ব ব্যাপকভাবে বৈদ্যুতিক যানের দিকে ঝুঁকছে। এই যানের জ্বালানি ব্যয় অন্তত কম। সাধারণ পেট্রোল ইঞ্জিনে এক কিলোমিটার পথ পারি দিতে ছয় থেকে দশ টাকার মতো খরচ হয়। সেখানে বৈদ্যুতিক যানে ৫০ পয়সার চেয়ের কম খরচ হয়। ফলে ভবিষ্যতে এসব ফিলিং স্টেশনগুলোতে বৈদ্যুতিক যানের জন্য চার্জিং স্টেশন স্থাপন করতে হবে।
এর আগে জ্বালানি বিভাগ থেকে জানানো হয়েছিল, তারা ৯টি মডেল পেট্রোল পাম্প স্থাপনের বিষয়ে অনাপত্তিপত্র দিয়েছিল। এরমধ্যে ৩টি তেল বিপণন কোম্পানির অর্থায়নে আর ৬টি ডিলারের অর্থায়নে নির্মাণ করা হবে। ডিলারের অর্থায়নে পদ্মা অয়েল কোম্পানির (পিওসিএল) মাধ্যমে ২টি, যমুনা অয়েল কোম্পানির (জেওসিএল) মাধ্যমে ২টি এবং মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড (এমপিএল)-এর মাধ্যমে ১টি- মোট ৫টি মডেল পেট্রোল পাম্প নির্মাণের জন্য লেটার অব ইনটেন্ট (এলওআই) বা প্রাথমিক সম্মতিপত্র ইস্যু করা হয়েছে। মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রতিটি কোম্পানিকে কমপক্ষে একটি করে মোট ৩টি মডেল ফিলিং স্টেশন স্থাপনের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
এ প্রসঙ্গে জ্বালানি সচিব আনিছুর রহমান বলেন, এই ধরনের ফিলিং স্টেশন নির্মাণের খরচ বেশি। তাই উদ্যোক্তাদের আগ্রহ কম। এই কারণেই এবার বিপিসির অধীন বিপণন সংস্থাগুলো তাদের নিজস্ব জায়গায় মডেল ফিলিং স্টেশন নির্মাণ করবে। এটা দেখে অন্যরাও উৎসাহিত হবে। তিনি জানান, নিজস্ব বিপিসির জমি ছাড়া পূর্বাচলে কয়েকটি স্টেশন নির্মাণের জন্য আমরা জমি চেয়েছি। পেলে সেখানেও নির্মাণ করা হবে।