ভূকম্পনে সচেতনতা

11

সিলেটে গত শনিবার সাত দফা এবং রবিবার ভোরে আরো এক দফা ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে। এ সময় দুটি ছয়তলা ভবন কিছুটা হেলে পড়েছে। রিখটার স্কেলে এসব ভূকম্পনের মাত্রা কম থাকলেও মানুষের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। বিজ্ঞানীরাও পর পর এত ভূকম্পনকে ভালো চোখে দেখছেন না। ভূমির গঠনগত বৈশিষ্ট্যের কারণে সিলেট অঞ্চল এমনিতেই ভূমিকম্প ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত। তাই অনেকেই মনে করছেন, পর পর এত ভূকম্পন বড় কোনো ভূমিকম্পের আলামত হতে পারে। সেই আশঙ্কা মাথায় রেখে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। নগরীর ঝুঁকিপূর্ণ ছয়টি মার্কেট, একটি দোকান ও একটি আবাসিক ভবন আগামী ১০ দিন বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জরুরি সেবা সংস্থাগুলোকে সতর্ক রাখা হয়েছে।
ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় আমাদের না আছে সচেতনতা, না আছে প্রস্তুতি। বাড়িঘর তৈরিতে কোনো নিয়ম-নীতি মানা হয় না। এমন অনেক বহুতল ভবন তৈরি হয়, যেগুলো ভূমিকম্প ছাড়াই হেলে বা ধসে পড়ে। ভূমিকম্প হলে এসব ভবনের অবস্থা কী হবে, তা ভাবতেও কষ্ট হয়। ডোবা-নালা ভরাট করে প্রয়োজনীয় ভিত্তি ছাড়াই ভবন তৈরি করা হয়। ভূমিকম্পের মতো বড় বিপর্যয়ে উদ্ধার তৎপরতা চালানোর মতো প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নেই বললেই চলে। বড় বড় শহরে অপরিকল্পিতভাবে এমন সব গলি-ঘুপচিতে বহুতল ভবন তৈরি হচ্ছে, যেখানে উদ্ধারকারী যন্ত্রপাতি পৌঁছানো যাবে না। যাদের এসব তদারকি করার কথা ছিল তারা কিছুই করে না। তার ওপর রয়েছে পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ এবং মাথার ওপর বিদ্যুতের জঞ্জাল। কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ মনে করেন, বড় কোনো শহরে বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে ভবনধসে যত মানুষ মারা যাবে, তার চেয়ে অনেক বেশি মানুষ মারা যাবে বিদ্যুৎ ও গ্যাসলাইন থেকে সৃষ্ট অগ্নিকাণ্ডে। তার পরও আমাদের নগর সম্প্রসারণে সঠিক পরিকল্পনা নেই। জানা যায়, ২০১৯ সালে এক জরিপের মাধ্যমে নগরের ২৩টি ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। পরে সিসিকের মালিকানাধীন কালেক্টরেট ভবন ও লালদীঘির দক্ষিণ পারের পৌর বিপণিকেন্দ্র ভেঙে ফেলে সিসিক। বাকি ২১টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন এখনো বিদ্যমান।
বাংলাদেশে ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকার যে মানচিত্র রয়েছে তাতে সিলেট ও চট্টগ্রাম উচ্চ ঝুঁকিপ্রবণ অঞ্চল। ডাউকি ফল্ট লাইনে থাকা সিলেট অঞ্চলে এর আগে বড় ভূমিকম্প হয়েছিল ১৮৯৭ সালে। রিখটার স্কেলে ৮ মাত্রার ওপরে থাকা সেই ভূমিকম্পে সিলেটে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। কাজেই সিলেট অঞ্চলে নগর পরিকল্পনায় অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হবে। যথাযথ পরীক্ষার মাধ্যমে সব ভবনের ভূমিকম্প-প্রতিরোধী সার্টিফিকেট নেওয়া বাধ্যতামূলক করতে হবে। দুর্যোগ মোকাবেলার প্রস্তুতি আরো শক্তিশালী করতে হবে।