করোনায় ভারতে ৪২ লাখ মানুষের মৃত্যুর শঙ্কা

7

কাজিরবাজার ডেস্ক :
আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা ওয়ার্ল্ডোমিটারস ডট ইনফোর হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশ সময় শুক্রবার পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১৬ কোটি ৯৭ লাখ ১৯ হাজার ৪৯৮ জন। এর মধ্যে ৩৫ লাখ ২৭ হাজার ১৬৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসা গ্রহণের পর সুস্থ হয়ে উঠেছে ১৫ কোটি ১৪ লাখ ৫৮ হাজার ৫৭১ জন।
এদিকে মার্কিন সংবাদ মাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসের হিসেবে ভারতের পরিস্থিতি আরও অনেক খারাপ হতে পারে। এতে পরিস্থিতি সর্বোচ্চ খারাপ হয়ে থাকলে ভারতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৪২ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। তবে ভারত সরকার এই প্রতিবেদনকে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে তা প্রত্যাখ্যান করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে পরিস্থিতি দৃশ্যমান তাতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ভারতে ৬ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। তবে প্রকৃতপক্ষে সম্ভাব্য যে পরিস্থিতি ভারতে চলমান তাতে ১৬ লাখ মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা করা হয়েছে প্রতিবেদনে। আর পরিস্থিতি যদি সবচেয়ে খারাপ হয়ে থাকে তবে করোনা আক্রান্ত হয়ে ভারতে ৪২ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। তবে বৃহস্পতিবার ভারত সরকার এই প্রতিবেদনকে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে তা প্রত্যাখ্যান করেছে। ভারত সরকার বলছে, এর কোন প্রমাণ নেই। সংবাদ সম্মেলনে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, প্রতিবেদনে সম্পূর্ণ মিথ্যা বলা হয়েছে এবং তা পুরোপুরি একপাক্ষিক অনুমাননির্ভর।
করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে ভারত : করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে একরকমের নাকাল ভারত। দেশটির বিভিন্ন রাজ্য সর্বশক্তি দিয়ে ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে ও মানুষের জীবন রক্ষার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এর সঙ্গে আবার তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা থেকে প্রস্তুতিও নিতে শুরু করেছে বিভিন্ন রাজ্য। আর এ প্রস্তুতিতে সবচেয়ে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে শিশুদের। কারণ আশঙ্কা করা হচ্ছে, তৃতীয় ঢেউয়ে শিশুদের ওপরই সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে। অক্সিজেন প্লান্ট বসানো, করোনার পরীক্ষাগার বাড়ানোর পাশপাশি রাজ্যগুলো এবারে মনোযোগ দিচ্ছে করোনা আক্রান্ত শিশুর চিকিৎসায়। এর অংশ হিসেবে যেসব ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে তার মধ্যে রয়েছে- পেডিয়াট্রিক বেডগুলো গুছিয়ে আনা, ১২ বছরের কম বয়সী শিশুদের বাবা-মায়ের টিকার আওতায় আনা, শিশুদের কেন্দ্রে রেখে বিভিন্ন প্রটোকল তৈরি করা ইত্যাদি।
সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে, লকডাউন উঠে যাচ্ছে দিল্লীতে : ভারতে দ্বিতীয় দফায় করোনার প্রকোপে সবচেয়ে বিপর্যস্ত দিল্লীতে ভাইরাসটির সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসায় লকডাউন সংক্রান্ত বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। দিল্লীর মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল শুক্রবার এই ঘোষণা দিয়েছেন। কেজরিওয়াল এ ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, আগামী সোমবার থেকে ‘আনলক-পর্ব’ শুরু হচ্ছে দিল্লীতে। লকডাউন বিধিনিষেধ মেনে চলার জন্যই দিল্লীতে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। তার জন্য রাজধানীর দুই কোটি মানুষকে ধন্যবাদও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
ব্রিটেনে জনসনের এক ডোজের টিকার অনুমোদন : জনসন এ্যান্ড জনসনের তৈরি এক ডোজের করোনা টিকা ব্যবহারের জন্য অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাজ্য। দেশটির ওষুধ প্রশাসন কর্তৃপক্ষ শুক্রবার এ অনুমোদন দেয়। চূড়ান্ত ট্রায়াল অনুযায়ী মহামারী করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে এই টিকা ৬৬ শতাংশ কার্যকর। মার্কিন কোম্পানি জনসন এ্যান্ড জনসনের টিকার অনুমোদনকে স্বাগত জানিয়ে ব্রিটিশ স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক বলেছেন, ‘যুক্তরাজ্যের ব্যাপক সফল টিকাদান কর্মসূচী এতে করে আরও বেগবান হবে। মানুষকে দেয়ার জন্য আমাদের হাতে এখন চারটি টিকা রয়েছে।’
কিশোরদের টিকা দেবে জার্মানি, সমালোচনার ঝড় : আগামী ৭ জুন থেকে জার্মানিতে ১২ কিংবা তার বেশি বয়সীরা কোভিড-১৯ টিকার জন্য আবেদন করতে পারবেন। তবে নানা কারণেই জার্মান সরকারের নেয়া এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দেশটিতে সমালোচনার ঝড় উঠছে। এই খবর জানিয়েছে জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলে। দেশটির চ্যান্সেলর এ্যাঞ্জেলা মেরকেল স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার জার্মানির ফেডারেল ও রাজ্য সরকারগুলো নেয়া এই সিদ্ধান্তের ঘোষণা দিয়েছেন। প্রাপ্তবয়স্কদের মতো কিশোরদের ক্ষেত্রেও টিকা বাধ্যতামূলক করা না করা হলেও বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক দানা বাঁধছে।
দিল্লীতে মহামারী ঘোষণা : কালো ছত্রাকের সংক্রমণ বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে ভারতের পশ্চিমবঙ্গসহ কয়েকটি রাজ্যের পর এবার দিল্লীতে মহামারী ঘোষণা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দিল্লীর উপরাজ্যপাল অনিল বাইজাল মহামারী রোগ আইন-১৮৯৭ এর আওতায় কিছু বিধিবিধান জারি করেন।
দিল্লীতে বর্তমানে কালো ছত্রাকে সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা ৭৭৩ জন। বৃহস্পতিবার একদিনে রাজ্যটিতে ১৫৩ জনের শরীরে এ ছত্রাকের সংক্রমণ ধরা পড়ে। পরিস্থিতির ভয়াবহতাকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে দিল্লীর উপ-রাজ্যপাল অনিল বাইজাল কালো ছত্রাককে মহামারী রোগ হিসেবে ঘোষণা দেন। মঙ্গলবার পশ্চিমবঙ্গে এ রোগকে মহামারী ঘোষণা করা হয়। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের সচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগম এক স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, রাজ্যের কোথাও কোন মিউকরমাইকোসিসের রোগী ধরা পড়লে তা মুখ্য স্বাস্থ্য কর্মকর্তার অফিসকে জানাতে হবে। রোগী কোথাকার বাসিন্দা, তার কী চিকিৎসা চলছে জানাতে হবে তাও। এছাড়া বিজ্ঞপ্তিতে রোগটির চিকিৎসা সম্পর্কিত নির্দেশিকাও দেয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারসহ একাধিক রাজ্য এই সংক্রমণকে ১৮৯৭ সালের মহামারী আইনের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে। চিকিৎসকরা বলছেন, করোনা থেকে সেরে ওঠার পর এই রোগের সংক্রমণের প্রবণতা বেশি। বহু ক্ষেত্রে অক্সিজেনের নল থেকেও কালো ছত্রাক ছড়াতে পারে। করোনার চেয়ে ছত্রাক আক্রমণ ভারতের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে। দেশটির চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের আশঙ্কা এখনই দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে ছত্রাকে আক্রান্ত ও মৃত্যু আরও বাড়তে পারে। ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী সৌদানন্দ গৌড়া সম্প্রতি বলেন, আমরা এই রোগের বিস্তার ঠেকাতে কাজ করছি। দেশটির বিজ্ঞানীরা বলেছেন, কালো ছত্রাকের চেয়ে সাদা ছত্রাক আরও বেশি বিপজ্জনক ও প্রাণঘাতী। করোনা থেকে সেরে ওঠার পর অনেকে ছত্রাকে আক্রান্ত হচ্ছেন। করোনার চিকিৎসায় শরীরে অতিরিক্ত স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ প্রয়োগের ফলে ছত্রাকের আক্রমণ ঘটছে। বিরল রোগটির বৈজ্ঞানিক নাম মিউকোরমাইকোসিস। মিউকোর নামে একটি ছত্রাকের সংস্পর্শে এলে এই সংক্রমণ হয়। সাধারণত এই ছত্রাক পাওয়া যায় মাটি, গাছপালা, সার এবং পচন ধরা ফল ও শাকসবজিতে। এই ছত্রাক সাইনাস, মস্তিষ্ক এবং ফুসফুসকে আক্রান্ত করে। ডায়াবেটিস, ক্যান্সার বা এইচআইভি/এইডস যাদের আছে, কিংবা করোনা বা অন্য কোন রোগের কারণে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুবই কম এই মিউকোর থেকে তাদের সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি।