প্রতিবেশী দেশ ভারতে করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। দৈনিক আক্রান্তের হার চার লাখ এবং দৈনিক মৃতের সংখ্যা চার হাজার ছাড়িয়েছে। হাসপাতালগুলোতে রোগীদের ঠাঁই হচ্ছে না। অক্সিজেন সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। অক্সিজেনের অভাবে প্রতিদিন অনেক রোগীর মৃত্যু হচ্ছে। ভারতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এমন ভয়াবহ রূপ নেওয়ার জন্য বিশেষজ্ঞরা ভাইরাসের ডাবল ও ট্রিপল মিউট্যান্ট ধরণকে দায়ী করছেন, যেগুলো ভারতীয় ধরণ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, ভাইরাসের সেই ধরণ কোনোভাবে প্রবেশ করলে বাংলাদেশের অবস্থাও ভারতের মতো কিংবা তার চেয়েও ভয়াবহ হয়ে পড়তে পারে। এরই মধ্যে বেনাপোল দিয়ে আসা ছয় যাত্রীর দেহে সেই ভাইরাস শনাক্ত করা গেছে। তাদের হাসপাতালে রাখা হয়েছে। কিন্তু কে জানে অজান্তে আরো কত আক্রান্ত ব্যক্তি দেশে প্রবেশ করে গেছে?
বিভিন্ন তথ্য থেকে জানা যায়, ভারতীয় ধরণগুলোর সংক্রমণ ক্ষমতা সাধারণ করোনাভাইরাসের চেয়ে ৩০০ গুণ বেশি। এগুলো শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা ধ্বংস করে দেয়। তা ছাড়া খুব দ্রুত আক্রান্ত ব্যক্তির ফুসফুসসহ কিছু অঙ্গের কার্যক্ষমতা নষ্ট করে দেয় এবং আক্রান্ত ব্যক্তি মারা যায়। ভারতের তুলনায় আমাদের হাসপাতাল, চিকিৎসকের সংখ্যা, অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা অনেক কম। তাই অনেকেই আশঙ্কা করছেন, ভারতীয় ধরণ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে বহু মানুষ প্রায় বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে। তাঁদের মতে, ভাইরাস ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও বাংলাদেশে অনেক বেশি। ভারতে বিভিন্ন জায়গায় লকডাউন অনেক বেশি কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। আমাদের এখানে লকডাউন দেওয়া হলেও প্রায় কেউই তা মানছে না। ঈদের আগে দোকান, শপিং মল, মার্কেট খুলে দেওয়া হয়েছে। বেসরকারি অফিস, কারখানা খোলা রয়েছে। গণপরিবহনও চলছে। কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানার শর্ত দেওয়া হলেও প্রায় কোথাও তা মানা হচ্ছে না। মার্কেট, শপিং মলগুলোতে দেখা যাচ্ছে উপচে পড়া ভিড়। সামাজিক দূরত্ব মানা তো দূরের কথা, অনেকে মুখে মাস্কও পরছে না। এর মধ্যে শুরু হয়েছে ঈদে বাড়ি ফেরা। দূরপাল্লার বাস বন্ধ রাখা হয়েছে। ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। এমনকি ফেরিঘাটে বিজিবি মোতায়েন করেও বাড়ি ফেরা যাত্রীদের আটকানো যাচ্ছে না। তারা ফেরিঘাটের আশপাশের এলাকা থেকে ঝুঁকি নিয়ে ছোট ছোট নৌযানে নদী পার হয়ে নানা ধরনের যানবাহনে গাদাগাদি করে বাড়ি ফিরছে। এসব কারণে অনেক বিশেষজ্ঞ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, ঈদের পরপরই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ব্যাপক হতে পারে।
নতুন করে টিকা প্রদান বন্ধ হয়ে গেছে। অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা না আনা গেলে সপ্তাহখানেকের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজের টিকা প্রদানও বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এ অবস্থায় করোনা প্রতিরোধেই জোর দিতে হবে সবচেয়ে বেশি। লকডাউন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।