করোনার ভয়ঙ্কর দ্বিতীয় ঢেউয়ের সংক্রমণে জনজীবন অস্থির-দিশেহারা। মারাত্মক ছোঁয়াচে এই ব্যাধিকে নিয়ন্ত্রণ করতে অবরুদ্ধতার কঠিন জাল বিস্তার করতে হয়েছে ২০২০ সালের মার্চ থেকে। গত বছরের শেষের দিকে এবং ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি ও মার্চের প্রথম সময় করোনার শনাক্ত এবং মৃত্যুর হার নিম্নগামী হয় কিছুটা। সে সময় স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে না ফেলতেই আবারও মার্চের মাঝামাঝি থেকে করোনা নতুন বৈশিষ্ট্যে ভিন্ন রূপান্তরের মধ্যে আবারও জনজীবনকে আক্রান্ত করে। সংক্রমণ এবং মৃত্যুর উর্ধগতি রোধ করতে সরকার পুনরায় প্রাথমিকভাবে শিথিল লকডাউন এবং পরবর্তীতে অবরুদ্ধতার কঠিন নিয়ম জারি করলে আবারও দেশ এক সঙ্কটাপন্ন অবস্থার মুখোমুখি হয়। গত ৫ এপ্রিল থেকে চলমান মে পর্যন্ত যে লকডাউনের দৃশ্য অবলোকন করা যাচ্ছে তা সত্যিই অবর্ণনীয়। নামেমাত্র কঠোর অবরুদ্ধতার মধ্যে ব্যক্তিগত যান চলাচলের প্রচন্ড ভিড় রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কে দৃশ্যমান। শুধু গণপরিবহন ছাড়া। যাত্রীবাহী বাস, লঞ্চ স্টিমার, রেলসহ বৃহদাকার কিছু যন্ত্রযানের ওপরও কড়া নজরদারি এখনও চলছে। সঙ্গত কারণে সারা বাংলাদেশের পরিবহন শ্রমিকরা এক চরম অনিশ্চয়তায় তাদের মূল্যবান সময় কাটাচ্ছে। বিভিন্ন টার্মিনালে পরিবহন শ্রমিকরা একতাবদ্ধ হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে তাদের যৌক্তিক দাবি-দাওয়া নিয়ে। মূল দাবি-গণপরিবহন খুলে দিতে হবে। সব কিছুর ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে দেয়া হলেও ভারি ও বৃহৎ যন্ত্রযানকে এখনও সেই স্থবিরতা থেকে মুক্ত করা যায়নি। ফলে দেশের ৭০ থেকে ৮০ লাখ পরিবহন শ্রমিকের রুজি-রোজগার এখন হুমকির মুখে। সড়ক পরিবহনে প্রায় ৫০ লাখ শ্রমিক এবং রেল থেকে অন্যান্য পরিবহনে আরও ৩০ লাখ শ্রমিক এই মুহূর্তে নিজেদের সংসার নিয়ে বিপর্যস্ত, দিশেহারা। তাদের আয়-রোজগারের পথও একেবারে বন্ধ। তবে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে লকডাউন তুলে নেয়া হয়েছে ঈদের বাজারকে জমজমাট করতে। শুধু গণপরিবহনের বেলায় আলাদা ব্যবস্থা কেন এমন প্রশ্নও আসে সংশ্লিষ্ট নেতৃবৃন্দ এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষ থেকে। তাদের দাবি গত বছরে করোনা দুর্ভোগে যখন গণপরিবহন উন্মুক্ত করা হয়, সে সময় তারা নিয়মমাফিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিধি মানতে সচেষ্ট ছিলেন। সবার আগে ভাবতে হবে প্রায় ৮০ লাখ পরিবহন শ্রমিকের প্রতিদিনের জীবনযাত্রার দুর্ভোগের বিষয়টি। তাদের নগদ অর্থসহ পরিমাণ মতো খাদ্যপণ্য সহায়তা করা একান্ত জরুরী। সুতরাং সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি এবং সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার ওপর কঠোর নজরদারি আরোপ করে গণপরিবহনে সীমিত আকারে উন্মুক্ত করে দিলে গত বছরের মতো অসহনীয় দৃশ্য প্রতিরোধ করা সম্ভব হতে পারে।