শিপন আহমদ ওসমানীনগর থেকে :
বছর দেড়েক পূর্বে ওসমানীনগর উপজেলার পূর্ব তিলা পাড়া গ্রামের বাড়ি থেকে নিখোঁজ হন মানসিক ভারসাম্যহীন লায়েক মিয়া (২৬)। হারিয়ে যাওয়ার পর বহুদিন লায়েকের খোঁজ করেছেন বৃদ্ধমাতা সুনরী বিগেমসহ স্বজনরা। এক পর্যায়ে নিখোঁজ লায়েককে ফিরে পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছিল হতদরিদ্র পরিবারটি। সম্প্রতি ওসমানীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ শ্যামল বনিকের সাবির্ক প্রচেষ্টায় যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর সহযোগিতায় হারিয়ে যাওয়ার দেড় বছর পর বৃদ্ধ সুনরী বেগম ফিরে পেয়েছেন তাঁর হারিয়ে যাওয়া সন্তান লায়েক মিয়াকে। প্রায় এক সপ্তাহের দীর্ঘ প্রচেষ্টায় লায়েককে সাতক্ষীরা থেকে নিয়ে এসে বৃহস্পতিবার ওসমানীনগর থানা পুলিশ উপজেলার বুরুঙ্গা ইউনিয়নের পূর্ব তিলা পাড়া গ্রামে তাঁর বৃদ্ধ মাসহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন থানার ওসি শ্যামল বনিক, উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শিপন আহমদ, এসআই মলাই মিয়া, সাংবাদিক, অনান্য পুলিশ সদস্যসহ স্থানীয় বাসিন্দারা।
পুলিশ ও পরিবারের ধারণা, মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় লায়েক একা একাই বা কারও সাহায্যে সাতক্ষীরা জেলা সদরে যায়। পরবর্তীতে মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় পেয়ে সদর থানার লাভসা গ্রামের মৃত শেখ মতিউর রহমানের পুত্র শেখ আনোয়ারুল ইসলাম আনু তাকে অশ্রয় দেন এবং দেখাশুনার দায়িত্ব পালন করেন। তবে লায়েক মানসিক প্রতিবন্ধী হওয়ায়। আশ্রয়দাতা ওই পরিবারটি তাহার পরিচয় সঠিক ভাবে শনাক্ত করতে পারেনি বলে জানা যায়।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বুরুঙ্গা ইউনিয়নের আব্দুর রহমান ও সুনরী বেগম দরিদ্র দম্পতির ৫ ছেলে ও ১ মেয়ের মধ্যে ছোট পুত্র লয়েক কিশোর বয়স থেকেই অনেকটা মানসিক ভারসাম্য হীন। বয়স বাড়ার সাথে সাথে তাঁর মানসিক ভারসাম্যহীনতা বৃদ্ধি পেতে থাকে। এমতাবস্থায় প্রায় বছর দেড়েক পূর্বে হঠাৎ করে নিখোঁজ হয়ে পড়েন লায়েক। বৃদ্ধ মা সুনরী বেগমসহ হতদরিদ্র ভাইরা তাঁদের সব আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীর বাড়িতে খোঁজ-খবরসহ সিলেটের বিভিন্ন স্থানে খোঁজার পর কোনো প্রকার সন্ধান না পেয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে লায়েককে পাওয়ার আশা ছেড়ে দেন তারা। সম্প্রতি ওসমানীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ শ্যামল বনিক থানার ফেসবুক আইডিতে নিখোঁজ লায়েকের ছবি, নাম, দিয়ে সহযোগিতা চেয়ে পোস্ট করেন। ফেসবুকে লায়েকের ছবি ও নাম ঠিকানা দেখে বুরুঙ্গা ইউনিয়নের বাসিন্দা যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী থাকে চিনতে পেরে ওসির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তখন জানতে পারেন, লায়েক সাতক্ষীরা জেলা সদরে একটি পরিবারের আশ্রয়ে রয়েছে। পরবর্তীতে লায়েকের হতদরিদ্র পরিবারের সাথে যোগাযোগ করার পর গত শনিবার (২৫ এপ্রিল) এ ব্যপারে ওসমানীনগর থানায় সাধারণ ডায়রী করেন লায়েকের দিনমজুর ভাই ছালিক মিয়া। অবশেষে সাধারণ ডায়েরীর সূত্র ধরে আনানুগ প্রক্রিয়া অবণম্ভন করে থানার ওসি শ্যামল বণিকের সার্বিক দিক নির্দেশনায় এসআই মলাই মিয়ার নের্তৃত্বে ওসমানীনগর থানা পুলিশের একটি টিম সাতক্ষীরা জেলার সদর উপজেলার লাভসা গ্রামে গিয়ে মৃত শেখ মতিউর রহমানের পুত্র শেখ আনোয়ারুল ইসলাম আনুর নিকট থেকে লায়েক আহমদকে প্রথমে সাতক্ষীরা থানায় নিয়ে আসেন সেখান থেকে আইনি প্রক্রিয়া শেষে বৃহস্পতিবার সকালে ওসমানীনগর থানায় নিয়ে এসে বিকালে মানসিক প্রতিবন্ধী লায়েক আহমদকে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেন ওসি শ্যামল বনিক। নিখোঁজ লায়েককে ফিরে পেয়ে লায়েকের বাড়িতে এক হৃদয় বিদায়ক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। লায়েক আহমদকে পেয়ে তার বৃদ্ধমা সহ পরিবারের সদস্যরা আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। এ সময় লায়েকের বৃদ্ধ মায়ের হাতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ইফতারী করার জন্য ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করেন ওসি শ্যামল বনিক।
বৃদ্ধ সুনরী বেগম বলেন, নিখোঁজের পর বহু জায়গায় খোঁজাখুঁজি করে সন্ধান না পাওয়ায় আমরা হতদরিদ্র পরিবার তাঁর আশা ছেড়ে দিলেও আমার নিরব চোখের পানি এক মুহূর্তে জন্য বন্ধ হয়নি। সম্প্রতি থানা পুলিশসহ আনোয়ার চৌধুরীর মাধ্যমে সন্ধানের খবর পেয়ে বিশ্বাস করতে পারি নাই। এখন লায়েককে ফিরে পেয়ে আমরা আনন্দে আত্মহারা। আজ থেকে থানার ওসি স্যার শ্যামল বনিকসহ আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর আমার হতদরিদ্র পরিবারটি চির দিনের জন্য ঋণ হয়ে গেলাম।
ওসমানীনগর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আনা মিয়া বলেন, ওসি শ্যামল বনিক থানায় যোগদানের পর থেকে তাঁর মানবিক কার্যক্রমগুলো খুবই প্রশংসনীয়। মানসিক ভারসাম্যহীন লায়েকের পরিচয় শনাক্তের জন্য ফেইসবুকে পোস্ট দেয়ার পর ওসমানীনগর বিশ^নাথের গন মানুষের নেতা আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর সার্বিক সহযোগিতায় লায়েককে ফিরিয়ে এনে তার পরিবারের কাছে ভালোভাবে হস্তান্তর করা হয়েছে জেনে খুবই ভালো লাগছে। বৃদ্ধ মা তার হারিয়ে যাওয়া সন্তানকে খুঁজে পেয়েছেন এটা সত্যিই অনেক আনন্দের। আমি আশাবাদি জনগণের কল্যাণে পুলিশ কর্মকর্তা শ্যামল বনিকের এমন মানবিক কাজগুলি অব্যাহত থাকবে।
ওসমানীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ শ্যামল বনিক জানান, মানসিক প্রতিবন্ধী লায়েক আহমদের প্রাথমিক খোঁজ পাওয়ার পর ফেইসবুকে পোস্ট দিয়ে তাঁর সঠিক পরিচয় শনাক্তকরণের কাজ চালিয়ে যাই। পরবর্তীতে পরিবারের পক্ষ থেকে সাধারণ ডায়রীর প্রেক্ষিতে দীর্ঘ প্রচেষ্টায় তাকে সাতক্ষীরা থেকে নিয়ে এসে বৃহস্পতিবার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছি। পুলিশ সাধারণ জনগণের বন্ধু হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে আমার সার্বিক অব্যাহত প্রচেষ্টার অংশ হিসাবে টিম ওসমানীনগরের এসব মানবিক উদ্যোগ অব্যাহত রয়েছে। সকলের সহযোগিতায় কার্যক্রমকে আরও এগিয়ে নেয়া সম্ভব বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।