বাবরুল হাসান বাবলু তাহিরপুর থেকে :
“রাইতে মেঘ অইলেও দিনে রইদ দিলে ধান কাডা মাড়ার কোন অসুবিধা নাই। মেঘ না অইলে সমইস্যা, দিন খরাইয়া থাকলে পরে নামলে আর উঠতো না”।
শনির হাওর পার মধ্য তাহিরপুর গ্রামের সামনে ধান মাড়া খলাইতে কৃষক আবুল কালাম মিয়ার সাথে কথা বলতে বলেতে তিনি স্থানীয় ভাষায় কথা উপরোক্ত কথা গুলো বলেন।
তার মতে রাতে কিছু কিছু ঝড় বৃষ্টি হলেও সমস্যা নাই। দিনে রোদ উঠছে প্রতিদিন। বৈশাখ মাস যদি বৃষ্টি না হয় তাহলে আবার সমস্যা। কোন কারণে যদি আবহাওয়া বৈরী হয় তাহলে বৃষ্টি বাদল নামলে সহসা আর রোদে দেখা পাবেন না বলে তিনি অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন। সেই সাথে বলেন, স্বস্তি নিয়ে এবার তিনি ধান কাটছেন। শুধু কৃষক কালাম মিয়া নন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার অনেক কৃষকের মনেই কিছুটা স্বস্তি বিরাজ করছে।
বৈশাখ মাসের শুরু থেকেই হাওরে পুরোদমে ধান কাটা শুরু হয়েছে। একদিকে ধান কাটছেন অন্যদিকে মাড়াই দিয়ে রোদে শুকিয়ে কৃষক গোলায় ধান তুলেছেন। তাই মাড়াই খলাতে আর ধানের ঝাক চোখে পড়ছে না। আবহাওয়া ভালো তাই কৃষকরে মনও ভালো। অনেকটা স্বস্তি নিয়েই কৃষক ধান কাট মাড়াই কাজে ব্যস্ত দিন পার করছেন। শ্রমিক সংকট না থাকা, ধান কাটার রিপার মেশিন দিয়ে ধান কাটতে পারায় কৃষকদের মনে কিছুটা স্বস্তি বিরাজ করছে। এ অবস্থায় আবহাওয়া যদি অনুকূলে থাকে তাহলে কৃষক কোন প্রকার ক্ষতি ছাড়াই ধানের রোপণকৃত জমির ফসল ঘরে তুলতে পারবেন। এমনটাই জানালেন হাওর পারের একাদিক গ্রামের কৃষক।
শনির হাওর পার জয়নগর গ্রামের কৃষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, হাওরে দেশী জাতের ধান ও ব্রিআর ২৮ জাতের ধান কাটা প্রায় শেষ। দু’একদিনের মধ্যে ব্রি আর ২৯ ধান কাটা শুরু হবে।
মাটিয়ান হাওর পার বড়দল গ্রামের কৃষক আশরাফুল আলম বলেন, বিগত বছর গুলোতে মাটিয়ান হাওরে ফসল ডুবির কারণে হাওরে এখন আগাম জাতের ধান চাষাবাদ বেশী করেন কৃষক। আবহাওয়া ভালো রয়েছে এ অবস্থা আরো দু চারদিন থাকলে মাটিয়ান হাওরে আর কোন ফসল থাকবে না বলেও তিনি জানান।
খোঁজ নিয়ে জানা যায় উপজেলার ২৩ টি ছোট বড় হাওরে ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে ইরি বোরো ধান চাষাবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে ব্রি আর ২৮ ও ব্রি আর ২৯ জাতের ধান বেশী চাষাবাদ করেছেন কৃষক। বৈশাখ মাসের শুরু থেকে ২৮ ধান পাকতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে ২৮ জাতের ধান কাটা প্রায় শেষ। বর্তমানে ব্রি আর ২৯ জাতের ধান পাকতে শুরু করছে। আবহাওয়ার বিভিন্ন পূর্বাবাসের কারেন প্রথম দিকে কৃষক কিছুটা চিন্তিত ছিলো। বর্তমানে আবহওয়া ভালো থাকায় কৃষক আর তেমন চিন্তিত নন। অনেকটা স্বস্তি নিয়ে ও কোন প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়াই কৃষক বোরো ধান কেটে ঘরে তুলছেন। ফলনও হয়েছে বেশ। বিঘা প্রতি ২৮ ধান ১৪ থেকে ১৫ মণ, ২৯ ধান ১৮ থেকে ২০ মণ হয়েছে কৃষকের জমিতে। বর্তমানে ধানের বাজার দরও ভালো রয়েছে।
তাহিরপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বোরহান উদ্দিন বলেন, ধানের ফলন এবার ভালো হয়েছে। কোন প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়াই কৃষক ধান কাটছেন এবং সুন্দরমতধান কাটতে পেরে মনে কিছুটা আনন্দও বিরাজ করছে।
তাহিরপুর উপজলা কৃষি কর্মকর্তা হাসান উদ দৌলা বলেন, তাহিরপুর উপজেলার বিভিন্ন হাওরে ৪৫ ভাগ ধান কাটা শেষ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে আছে। সপ্তাহ খানেক আবহাওয়া এ রকম থাকলে ধান কাটা শেষ হয়ে যাবে।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার পদ্মাসন সিংহ বলেন, আমি শনি, মাটিয়ান সহ বেশ কয়েকটি হাওর ঘুরে কৃষকের ধান কাটার খোঁজ খবর নিয়েছি। আবহাওয়া ভালো থাকায় কৃষক মনে স্বস্তি নিয়েই ধান কাটছেন।