হবিগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
সারাদেশে কঠোর লকডাউন চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় শায়েস্তাগঞ্জেও চলছে লকডাউন। ঢাকা সিলেট মহাসড়কের প্রতিটি পয়েন্টে পয়েন্টে রয়েছে পুলিশের চেকপোস্ট।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢাকা সিলেট মহাসড়কে কিছু পণ্যপরিবহন গাড়ি ব্যতীত অন্য কোনো যানবাহন নেই। এই করোনার প্রাদুর্ভাবে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। অনেকেরই আয়ের পথ বন্ধ হওয়ার উপক্রম। এমন পরিস্থিতিতে জীবন জীবিকা নিয়ে দুশ্চিন্তায় শ্রমজীবী মানুষ। এভাবে চলতে থাকলে জীবন টিকিয়ে রাখাই মুশকিল হয়ে পড়বে।
শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার অলিপুরে বিশাউরা গ্রামের টমটম চালক রাজিব মিয়া জানান, গাড়িতে করে মসলা নিয়ে এসেছিলেন, এখন মহাসড়কে গাড়ি নিয়ে উঠতে পারছেন না, পুলিশ ধরলেই গুণতে হবে জরিমানা। তিনি আরো জানান, রমজান মাস শুরু হয়েছে, ঘরে খাবার নেই, পেটের দায়ে ঝুঁকি নিয়েই বের হয়েছেন টমটম নিয়ে।
সুতাং বাজারের টমটম চালক ইয়াকুব মিয়া জানান, সুতাং বাজার থেকে অলিপুর আসতে মহাসড়কের মাত্র ২০-২৫ গজ সড়ক ব্যবহার করে আমরা গাড়ি নিয়ে আসি। কিন্তু এই সামান্য সড়ক ব্যবহার করতেই পুলিশের যন্ত্রণায় পড়তে হয়।
তিনি আরো জানান, টমটম পুলিশ ধরলেই পার্কিং-এর টাকাসহ ৩ হাজার টাকা জরিমানা গুণতে হয়। মালিকের গাড়ি চালিয়ে ৩ হাজার টাকা জমা এক মাসেও করতে পারি না, এ পর্যন্ত আমার গাড়ি দুইবার পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে, পরে টাকা দিয়ে ছুটিয়ে নিয়ে এসেছি।
অন্যদিকে, জরুরি চিকিৎসা সেবা নিতেও মানুষ গাড়ি পাচ্ছেন না, রাস্তায় বসে বসে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে অনেককেই। মাধবপুর থেকে আসা জরিনা বেগম হবিগঞ্জে যাবেন ডাক্তার দেখাতে, অলিপুর এসে অপেক্ষা করেও গাড়ি পাচ্ছেন না। হবিগঞ্জের বানিয়াচং-এর দক্ষিণ সাংগর এলাকার লাকি আক্তার ও আব্দুল খালেক শায়েস্তাগঞ্জে ভিক্ষা করেন। এখন দোকানপাট বন্ধ থাকায় তারা ভিক্ষাও পাচ্ছেন না। আবার গাড়ি না পাওয়ায় বেশি টাকা দিয়েও বাড়িতে ফিরতে পারছেন না।
নুরপুর ইউনিয়নের সিএনজিচালক সজন মিয়া জানান, ঘরে বাজার নেই, গাড়ি নিয়ে বের হয়েছি, কিছু টাকা রোজগার না করতে পারলে না খেয়ে রোজা রাখতে হবে।
চল্লিশোর্ধ্ব জামাল মিয়া সংসার চালান ফুটপাতে ব্যবসা করে। করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় বেচাকেনা কম। বন্ধ হওয়ার উপক্রম ব্যবসা। তাই জীবিকা নিয়ে পড়েছেন দুশ্চিন্তায়।
এভাবেই করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে টানা লকডাউনে দিনমজুররা পড়েছেন বিপাকে, কাজ নেই। তাই বন্ধ উপক্রম আয়ের পথ।
মহামারির কারণে কর্মহীন হয়ে পড়ায়, দীর্ঘ হচ্ছে হতাশা। তাই সরকারের কাছে সহযোগিতা চান মানুষগুলো। আবার যাতে কাজে ফিরতে পারেন, সেজন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের।
শায়েস্তাগঞ্জে লকডাউনের সর্বশেষ অবস্থা জানতে মুঠোফোনে কথা হয় শায়েস্তাগঞ্জ হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মাঈনুল ইসলামের সাথে। তিনি জানান, শায়েস্তাগঞ্জের মহাসড়কে প্রতিটি স্ট্যান্ডে আমাদের ফোর্স দায়িত্ব পালন করছেন। শায়েস্তাগঞ্জে সব ধরনের যাত্রীবাহী গাড়ি চলাচল ও দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। সবকিছু সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক কঠোরভাবেই লকডাউন পালিত হচ্ছে।
এ ব্যাপারে শায়েস্তাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অজয় চন্দ্র দেব জানান, শায়েস্তাগঞ্জ থানার পক্ষ থেকে তিনটি জায়গায় চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। আমরা সরকারের নির্দেশনামতে কঠোর লকডাউন নিশ্চিত করতে কাজ করছি। শায়েস্তাগঞ্জে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে, তবে কেউ যদি করোনার টিকা নেওয়ার জন্য যায় বা জরুরি চিকিৎসা নেওয়ার জন্য যায় তাদের গাড়ি ছেড়ে দেওয়ার জন্য আমরা নির্দেশ দিয়েছি।