বাবরুল হাসান বাবলু তাহিরপুর থেকে :
‘আপনি জেলের জন্য রেডি হন, আপনার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ। আমরা সারাদিন অফিস ছেড়ে হাওরের বাঁধে রোদে পুড়বো আর আপনি সময় মত বাঁধের কাজ করবেন না তা তো হতে পারে না’। মঙ্গলবার মাঠিয়ান হাওরে বাঁধের কাজ দেখতে গিয়ে হাওরের গুরুত্বপূর্ণ বাঁধ আলমখালির ফসল রক্ষা বাঁধের ( ৭২ নং) পি আইসির সভাপতি আইনুল মিয়ার কাজের প্রতি চরম অসন্তোষ প্রকাশ করলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাহিরপুর।
শুধু তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নয়। এ বাঁধে ধীর গতিতে কাজ কারানোর কারণে হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ এর কেন্দ্রিয় কমিটির সভাপতি সহ স্থানীয় কৃষকরাও উদ্বিগ্ন রয়েছেন। আগাম বন্যা হলে বাঁধটি ঠেকানো কঠিন হয়ে পড়বে এমন আশংকা স্থানীয় লোকজনের। তাছাড়া একাধিকবার এ বাঁধটি ভেঙ্গে মাঠিয়ান হাওর তলিয়ে বোরো ফসল নষ্ট হয়েছে বলেও স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার উপজেলার মাটিয়ান হাওরের একাধিক ক্লোজার বাঁধ সহ ভিবিন্ন বেড়িবাধ ঘুরে দেখা যায় কোনটির কাজ শেষ হয়েছে, কোনটির কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। কোন কোন পিআইসি বেড়িবাঁধে লাগানো ঘাসে পানি দিচ্ছেন। কিন্তু হাওরের গুরুত্বপূর্ণ বাঁধ আলমখালি বাঁধে এসে দেখা যায় মাটির কাজ শেষ হলেও প্যালাসাইটিং এর কাজ শুরু করেন নি পিআইসি। সে সময় পিআইসির অবহেলার কারণে উপজেলা নির্বাহী অফিসার উত্তেজিত হয়ে কাজের প্রতি চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেন। আগামী দু এক দিনের মধ্যে অবশিষ্ট কাজ শেষ করে দিবেন বলে জানান, প্রকল্প পিআইসি আইনুল মিয়া। ইতিমধ্যে তিনি বাঁধের পশ্চিম দিকে হাওরের ভেতরে সামান্য কিছু বস্তা সেটিং করেছেন। কিন্তু নদীর দিকে এখনো পুরোটা বাঁধ অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। দ্রুত প্যালাসাইটিং এর কাজ শেষ না হলে আগাম বন্যা শুরু হলে বাঁধটি নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকতে হবে হাওর পারের কৃষকদের। তাছাড়া শনির হাওরে একাধিক বাঁধের কাজ শেষ হলেও হাওরের দক্ষিণ দিকে লালুর গোয়ালা নামক বাঁধটি নিয়েও হাওর পারের কৃষকরা উদ্বিগ্নের কথা জানিয়েছেন।
মাটিয়ান হাওর পারের বড়দল গ্রামের কৃষক আজারুল মিয়া জানান, একাধিকবার আলমখালি বাঁধ ভেঙ্গে মাটিয়ান হাওরের ফসল ডুবি হয়েছে। পাহাড়ি ঢল নামলে প্রথমে এ বাঁধটিতে আঘাত করে। প্রশাসন যেনো বাঁধটির প্রতি আরো মনযোগী হন বলেও তিনি জানান।
হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ কেন্দ্রিয় কমিটির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ান বলেন, আমারা তাহিরপুরের একাধিক হাওরে ক্লোজার ও বেড়িবাঁধ ঘুরে দেখেছি এর মধ্যে মাটিয়ান হাওরে আলমখালি ও শনির হাওরে লালুর গোয়ালা বাঁধটি কিছুটা ঝুঁকিতে রয়েছে। আমরা এ দুটি বাঁধের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহিরপুর মহোদয়কে অবহিত করেছি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড উপসহকারী প্রকৌশলী (তাহিরপুর দায়িত্বরত) রাকিবুল হাসান বলেন, তাহিরপুরে ৮৩ টি প্রকল্পের মধ্যে দু একটি প্রকল্প ব্যতীত সবকটি প্রকল্প কাজ শেষের পথে। এখন ঘাস লাগানোর কাজ চলছে।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার পদ্মাসন সিংহ বলেন, প্রতিনিয়ত আমি তাহিরপুরের সব কটি হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের খোঁজ খবর নিচ্ছি। আবহাওয়া ভালো আছে বলেই যে পিআইসিরা হাল ছেড়ে বসে থাকবে তা নয়। যে কোন সময় আগাম বন্যা হতে পারে। তাই আমাদের আগাম বন্যা মোকাবেলায় সকল ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে। সেই সাথে বোরো ফসল না উঠা পর্যন্ত প্রকল্পের লোকজনদেরও বাঁধে থাকতে হবে বলে তিনি জানান।