বাজার পরিস্থিতি

6

পবিত্র শবে বরাতকে উপলক্ষ করে আর এক দফা বেড়েছে নিত্য ভোগ্যপণ্যের দাম। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ডাল বিশেষ করে বুটের ডাল, চিনি, ভোজ্যতেল, ঘি, গরম মসলা, পেস্তা-বাদাম-কিসমিস, সুগন্ধি চাল, গরু-খাশি-মুরগির মাংসের দাম। এ সময়ে উৎসব উপলক্ষে সর্বস্তরের মানুষ বেশি করে কিনে এসব পণ্য। প্রায় একটা হিড়িক পড়ে যায় কেনাকাটায়। টিসিবি ট্রাকসেলে কয়েকটি নিত্যপণ্য বিক্রি করলেও সেগুলো মূলত শহরকেন্দ্রিক এবং পরিমাণেও যথেষ্ট নয়। ফলে ধনী ও সচ্ছল মধ্যবিত্তরা পরিস্থিতি সামাল দিতে পারলেও নিম্নমধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত ও গরিবদের মধ্যে পরিলক্ষিত হয় আর্থিক টানাপোড়েন। এর সঙ্গে বাড়তি উপদ্রব ও খরচ হিসাবে যুক্ত হয়েছে করোনা মহামারীজনিত স্বাস্থ্যবিধি মানাসহ ওষুধপত্রের খরচ। সরকারের নানা উদ্যোগ ও আন্তরিক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ ও কষ্ট যে অনেকাংশে বেড়েছে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। এই পরিস্থিতিতে অচিরেই আসছে পবিত্র রমজান এবং বাংলা নববর্ষ। বাঙালীর জীবনে অন্যতম অনুষঙ্গ এই দুটি পার্বণকে ঘিরে ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে সাজসাজ রব। সেই ক্ষেত্রে সরকার ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে বাজার পরিস্থিতি সামাল দিতে এখন থেকেই গ্রহণ করতে হবে ব্যাপক প্রস্তুতি, যা তারা গ্রহণ করবে বলেই প্রত্যাশা।
সম্প্রতি চাল-ডাল ভোজ্যতেলসহ কয়েকটি নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে আসন্ন রমজানে দ্রব্যমূল্য স্বাভাবিক স্থিতিশীল ও সহনশীল রাখতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণসহ জনসাধারণকে প্রত্যাশিত সেবা দিতে এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোজায় যাতে নিত্যপণ্যের দাম না বাড়ে, সে জন্য যথাযথ উদ্যোগ নিতে সংশ্লিষ্ট বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও ট্যারিফ কমিশনকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ এবং পরামর্শ দেয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে। এর জন্য দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষণে নিয়মিত বাজার তদারকি বাড়ানোসহ মনিটরিংয়ের ওপর সবিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়। বিশেষ করে পেঁয়াজ, ভোজ্যতেল, চাল, ডাল, আটা, চিনি, ছোলা, খেজুর, মুরগি, মাছ ও তরল দুধসহ রমজানে বেশি ব্যবহৃত হয় এমন সব নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ ও সরবরাহের ব্যাপারে জোর দেয়া হয় সর্বাধিক। কেননা রোজার মাসে এসব পণ্যের চাহিদা বেড়ে যায় বহুগুণ। কিছু অসৎ ব্যবসায়ী ও মজুদদার সুযোগ নিয়ে থাকেন, যা কাম্য নয় কোন অবস্থাতেই।
নিত্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখাই মূল বিবেচ্য বিষয়। এ ব্যাপারে বাণিজ্য সচিব আশস্ত করেছেন- সামনে রমজানের সময় কোন ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়বে না। সরকার এবার বাজার ব্যবস্থাকে স্থিতিশীল রাখাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, কৃষি ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে একটি বিশেষ কমিটি। তবে শুধু রমজান নয়, সারা বছর কমিটি তার কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে বলেই প্রত্যাশা। সাধারণ মানুষও চায় এবার থেকে বাজার ভোক্তাদের নিয়ন্ত্রণেই থাকবে।