প্রতিবছর পবিত্র রমজান আসার কিছুকাল আগে থেকেই গণমাধ্যমকর্মীরা সতর্ক হন। তারা ঘন ঘন বাজার পরিদর্শন করেন। সব ধরনের নিত্য ভোগ্যপণ্যের দরদাম নোট করেন। সংবাদপত্রের সম্পাদকীয় বিভাগও বিশেষ দৃষ্টি রাখে বাজারদর সংক্রান্ত তথ্যের দিকে। প্রতিদিন মানুষের খাদ্যতালিকায় যা থাকে সেগুলোর সরবরাহ কিংবা দামের ক্ষেত্রে অস্বাভাবিকতা তৈরি হলে সংবাদপত্রের পাতায় সে সংক্রান্ত তথ্য আসার আগেই সাধারণ মানুষের ভেতর প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। হাটে-বাজারে অফিস-আদালতে এ নিয়ে আলোচনা হয়, নানা অসন্তোষ দেখা দিতে থাকে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মধ্যবিত্ত শ্রেণীর সীমিত ও সুনির্দিষ্ট আয়ের কারণে তাদের প্রতিটি পর্যায়ের বাজেট থাকে। বছরের শুরুতে বাড়িওয়ালারা ভাড়া বাড়ায়। তাতে বছরের শুরুতেই নতুনভাবে সঙ্কটের মধ্যে পড়েন মানুষ। এরপর ধাপে ধাপে নিত্যপণ্যের দামে উর্ধগতি দেখা দিলে স্বাভাবিকভাবেই মানুষের বাজেটে টান পড়ে। তাতে তাদের কষ্ট হয়। বাজেট ঘাটতি পোষানোর জন্য বাধ্য হয়েই কিছু কিছু পণ্যক্রয়ের পরিমাণ তারা কমিয়ে দেন। চাপ পড়ে স্বাস্থ্যের ওপর। প্রয়োজনীয় পুষ্টির যোগান না দিতে পারলে শরীর নামক যন্ত্রটি তো বিপন্ন বোধ করবেই। তাই গণমানুষের দর্পণ সংবাদপত্র নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার দিকে তীক্ষ নজর রাখে। পবিত্র রমজানে দ্রব্যমূল্য পাগলা ঘোড়ার রূপ নেয়ার বিষয়টি প্রায় নিয়মিত। সেটি কিছুতেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না। রোজা আসার এক দেড় মাস আগে থেকেই পণ্যের দরের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা মাত্রই মানুষ অসহায় ও ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। হঠাৎ করেই মুরগিসহ কয়েকটি খাদ্যপণ্যের মাত্রাতিরিক্ত দাম বেড়ে গেছে। নিত্যপণ্যের বাজারে যেমন গরুর মাংস, মুরগির দাম বেড়েছে, তেমনি খুচরা বাজারে ভোজ্যতেল, চালও বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামে। এটিকে অশনিসংকেত বললে ভুল হবে না। অবশ্য গত কয়েক মাস যাবতই বাজারে চালের দামের উর্ধগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। দেশের মানুষের প্রধান খাদ্যটির দামই যদি এভাবে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে তাহলে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস ওঠার উপক্রমই হবে। যা অনাকাক্সিক্ষত।
সব ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকা সত্ত্বেও রমজানের আগেই নিত্যপণ্যের দাম আরেক দফা বাড়িয়ে দিয়েছে অসাধু চক্র। রমজানে ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ, চিনি, ডালসহ অন্য আরও কিছু পণ্যের বাড়তি চাহিদা তৈরি হয়। চাহিদার সঙ্গে দাম যাতে না বাড়ে, সেজন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সংস্থাগুলো দৃশ্যত কিছু বিশেষ ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। কিন্তু ইতিবাচক ফল লাভে কি সমর্থ হয় সেসব ব্যবস্থা? করোনা-দুর্যোগে অনেকের আয়-রোজগার কমে গেছে, অনেকেই হয়ে পড়েছেন কর্মহীন। আমরা আশঙ্কা করছি, করোনা পরিস্থিতিতে সামনের দিনগুলোয় বাজার ব্যবস্থার অস্থিতিশীলতা মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে আসতে পারে। গত রমজানে বাজারে তদারকি বাড়িয়ে, অভিযান চালিয়ে জরিমানা করেও অসাধুদের অপতৎপরতা খুব একটা বন্ধ করা যায়নি। অসাধু সিন্ডিকেট কখনোই শীতনিদ্রায় যায় না, তারা সদাজাগ্রত। পণ্য আমদানি, সরবরাহ, বাজার ব্যবস্থাপনা- সবদিকে নজরদারি ও পর্যালোচনা এবং অসাধু দমন অভিযান চালু রেখে খাদ্যপণ্যের দাম মানুষের ক্রয়ক্ষমতার সীমার মাঝেই রাখতে হবে।