স্টাফ রিপোর্টার :
হাইকোর্টের আদেশ থাকার পরেও বিনা নোটিশে রাতের বেলা টাস্কফোর্স পরিচালনা করে জরিমানা আদায়ের মাধ্যমে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিলুর রহমান আদালতের আদেশ অমান্য করেছেন বলে দাবি করেন মেসার্স জালালাবাদ লাইম মেনুফ্যাকচারার্স এন্ড ট্রেডিং এসোসিয়েশনের ব্যবস্থাপনা অংশীদার মো. আফছর উদ্দিন। এ অভিযানের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি হাইকোর্টের আদেশ বাস্তবায়ন ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষে উক্ত অফিসারের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপও চেয়েছেন।
রোববার সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন মো. আফছর উদ্দিন। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, মেসার্স জালালাবাদ লাইম মেনুফ্যাকচারার্স এন্ড ট্রেডিং এসোসিয়েশনের নামে গোয়াইনঘাট উপজেলার চৈলাখেল মৌজার ৩য় খন্ডে ১৯৭২ সালে ৬ দশমিক ৫৮ একর ভূমি খনিজ সম্পদ উত্তোলনের জন্য সরকার কর্তৃক অধিগ্রহণ করা হয় এবং প্রয়োজনীয় টাকা পয়সা প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে ৭৮ দশমিক ২৭ একর ভূমি সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্তৃপক্ষ থেকে মাইনিং লিজ প্রদান করা হয়। যেখান থেকে চুনাপাথর উত্তোলন করা হয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। তবে প্রশাসনের একটি দুর্নীতিবাজ চক্রের দ্বারা অবৈধভাবে বাধা প্রদান আসতে থাকে অনবরত, এই বাধা-প্রদান অনবরত থাকার কারণে ২০০৭ সালে এসোসিয়েশন হাইকোর্টের রিট পিটিশন (নম্বর ৯৯৬১/২০০৭) দায়ের করলে হাইকোর্ট পাথর উত্তোলনের জন্য যেন কোন বাধা প্রদান না করা হয় সে নির্দেশনা দেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘হাইকোর্টের আদেশ পেলেও পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ (ব্যুরো অব মিনারেল) থেকে এসোসিয়েশনের লিজ বাতিল হয়ে গেছে বলে চিঠি প্রদান করা হয়। পরে ওই লিজ বাতিলের বিরুদ্ধে তারা আবারও হাইকোর্টে রিট (নম্বর ৩২১৮/২০২০) করেন। পরে হাইকোর্ট সন্তুষ্ট হয়ে লিজ বাতিলের চিঠি অবৈধ এবং এসোসিয়েশনের ভোগদখল বজায় রেখে আদেশ দেন।’
তিনি দাবি করেন, তাদের লিজভুক্ত এসব জায়গা ইসিএ ভুক্ত নয়, যা বারবার জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের অবহিত করা হয়েছে। এরপরেও হাইকোর্টের আদেশ না মেনে উপজেলা প্রশাসন সেখান থেকে পাথর উত্তোলনে বাধা প্রদান করে আসছে। সর্বশেষ গত ২২ ফেব্রুয়ারি রাত ৯টায় গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিলুর রহমান টাস্কফোর্স নিয়ে সাইটে যান। পরে তিনি সেখানে কর্মরত কোম্পানীর স্টাফদের শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করে এবং পানি চলাচলের রাস্তা বন্ধ করা হয়েছে উল্লেখ করে তাৎক্ষণিক ৫ লাখ টাকা জরিমানা করেন। কোনো প্রকার আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে ইউএনওর এমন আচরনে হতভম্ব হয়ে পড়ি। তাকে হাইকোর্টের আদেশের কথা বললে তিনি দাম্ভোক্তি করে বলেন, হাইকোর্ট কিংবা কাগজপত্র উনি বুঝেন না। এখানে তার মুখের কথাই আইন।’
তিনি বলেন, ‘সিলেট বিভাগের চুনাপাথর, পাথর ও বালু অন্যতম প্রাকৃতিক সম্পদ। পাথর যে পদ্ধতিতে উত্তোলন হয়, ঠিক একইভাবে বালুও উত্তোলন হয়। বালুর ক্ষেত্রে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই, কিন্তু চুনাপাথর ও পাথর নিয়ে যত বিধি নিষেধ। মূলত, বিদেশ থেকে পাথর আমদানী সিন্ডিকেটের কারণেই দেশীয় পাথরকোয়ারীগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। আর তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে প্রশাসন। এ কারণে রাতের বেলায়ও টাস্কফোর্স পরিচালনা করা হচ্ছে। হাইকোর্টের আদেশ থাকা সত্বেও বিনা নোটিশে এ অভিযানের বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেন তিনি।’ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আব্দুল মোমিন চৌধুরী, শিবলী চৌধুরী, আব্দুল ওয়াহেদ চৌধুরী, ইমন আহমেদ আবিদ, মাসুদ আলম মুসা প্রমুখ।