কাজির বাজার ডেস্ক
যান পারাপারের সামর্থ্য হারিয়েছে সিলেটের ঐতিহ্যের স্মারক প্রায় শতবর্ষী কিনব্রিজ। সুরমার দুই পারের মানুষের যোগাযোগ সহজ করতে কিনব্রিজের পাশে নতুন একটি সেতু নির্মাণের দাবি সিলেটবাসীর দীর্ঘদিনের। সাবেক স্পিকার হুমায়ূন রশীদ চৌধুরী সুরমার উপর একটি ঝুলন্ত সেতুর স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন সিলেটবাসীকে।
এরপর সুরমার ওপর তিনটি আরসিসি সেতু হয়েছে। কিন্তু কিনব্রিজের পাশে বসেনি কোনো সেতুর পিলার। সিলেটবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কিনব্রিজের পাশে একটি দৃষ্টিনন্দন সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রæতি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অবশেষে প্রধানমন্ত্রীর সেই প্রতিশ্রæত প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে। কিনব্রিজের পাশে নতুন একটি সেতু নির্মাণে ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগে সম্মত হয়েছে নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এনডিবি)।
সওজ সূত্র জানায়, এনডিবি বাংলাদেশের পাঁচটি প্রকল্পে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে। প্রতিটি প্রকল্পে ঋণদানকারী ব্যাংকটি ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে। এ প্রকল্পগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে সিলেট নগরীর সুরমা নদীর ওপর কিনব্রিজের পাশে নতুন একটি সেতু নির্মাণ। প্রকল্পগুলো নিয়ে গত ২২ জানুয়ারি সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের কনফারেন্স রুমে এনডিবি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরী সভাপতিত্ব করেন।
সওজ সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী আমির হোসেন জানান, কিনব্রিজের পাশে নতুন সেতু নির্মাণে এনডিবি দেবে ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, আর বাকি টাকা দেবে বাংলাদেশ সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিলেটের একটি জনসভায় এ সেতুটি নির্মাণের প্রতিশ্রæতি দিয়েছিলেন। তাই প্রকল্পটিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
সওজ সূত্র আরো জানায়, ইতোমধ্যে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের একটি দল পরিদর্শন করে গেছে। তারা সুরমা নদীর নাব্য এবং সেতুটি কতটুকু উঁচু হবে তা পর্যবেক্ষণ করেছে। এখন সওজের পক্ষ থেকে ‘প্রি ডিটেইলস প্রজেক্ট প্রোফর্মা-পিডিপিপি’ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। সেখান থেকে পাঠানো হবে এনডিবিতে।
নির্বাহী প্রকৌশলী আমির হোসেন আরও জানান, পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ সেতুটি হবে টোল ব্রিজ। এ সেতুর ওপর দিয়ে যাতায়াতকারী যানবাহন থেকে টোল আদায় করা হবে।
জানা গেছে, সুরমা নদীর ওপর ১৯৩৬ সালে স্টিল স্ট্রাকচার দিয়ে নির্মিত হয় ব্রিজ। সেতুটি নির্মাণ করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। আসাম প্রদেশের সাবেক গভর্নর মাইকেল কিনের নামানুসারে সেতুটির নামকরণ হয় কিনব্রিজ। প্রায় শতবর্ষী সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়লে সম্প্রতি ২ কোটি ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে মেরামত করে বাংলাদেশ রেলওয়ে। কিন্তু সংস্কারের পরও পুরোপুরি ঝুঁকিমুক্ত না হওয়ায় সেতুটি দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। বর্তমানে এটি পদচারী সেতু হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ওই সেতু দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সুরমার দুই পারের জনসাধারণের যোগাযোগ সহজ করতে নতুন একটি সেতু নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা আরও প্রকট হয়।