বিদেশীদের ডাটাবেজ

17

বিশ্বায়নের যুগে কোন দেশেরই একক ও বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকার উপায় নেই। কোন একটি দেশের পক্ষে একেবারে স্বনির্ভর হয়ে ওঠাও সম্ভব নয়। মানুষ, সমাজ ও রাষ্ট্র নানাভাবে নানা উপায়ে পরস্পর নির্ভরশীল, তা সে ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে চিকিৎসা, শিল্প থেকে তথ্যপ্রযুক্তি- যে কোন মাধ্যমেই হোক না কেন! তদুপরি জীবন-জীবিকার অনিবার্য প্রয়োজন ও অন্বেষণে সৃষ্টির সেই আদিকাল থেকেই চলছে মানুষের অভিবাসন প্রক্রিয়া, এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাতায়াত সর্বোপরি ভাগ্যান্বেষণে বসতি স্থাপন। বর্তমানে যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনৈতিক টানাপোড়েনকবলিত বিশ্বে এই অভিবাসন প্রক্রিয়া আরও বেড়েছে। এই যেমন, মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর অত্যাচার, গণহত্যা, লুণ্ঠন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগের ফলে রাখাইন থেকে বিতাড়িত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থী। অনুরূপ হয়েছে ও হচ্ছে ইরাক, সিরিয়া, লেবানন, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান, নাইজেরিয়া ও মেক্সিকোসহ বেশ কয়েকটি দেশে। বাংলাদেশও এই বৃত্তের বাইরে নয়। বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গা শরণার্থী বাদেও প্রতিবেশী দেশ ভারত-শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটানসহ অন্যান্য দেশের নাগরিকের সংখ্যা কত, সে সম্পর্কে কোন সুস্পষ্ট তথ্য-প্রমাণাদি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দফতরগুলোর হাতে নেই। এই কাজ নথিভুক্তকরণসহ সম্পাদনের দায়িত্ব প্রধানত কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জনশক্তি ও শ্রমকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের। শরণার্থী হিসেবে বসবাসকারী বিদেশী নাগরিকের বাইরেও প্রচুর সংখ্যক বিদেশী বাংলাদেশে অবস্থান করছেন জীবন-জীবিকার সূত্রে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান, কলকারখানা, মেগাপ্রকল্পসহ সুবৃহৎ নির্মাণ শিল্পে। তাদের একটি বড় অংশ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিতেও অবদান রাখছে নিঃসন্দেহে। এই সংখ্যা কয়েক লাখের কম হবে না। তবে বাংলাদেশে অবস্থান করে যারা ভাল আয়-উন্নতি করছেন, তাদের সবাই এনবিআরের তালিকাভুক্ত এবং যথানিয়মে আয়কর দেন কি-না সে বিষয়ে প্রশ্ন রয়েছে। অন্যদিকে অনেকেই আবার অবস্থান করছেন অবৈধভাবে। ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও ফিরে যাননি নিজ দেশে। বরং জড়িয়ে পড়েছেন নানা অপকর্ম ও অপরাধে, যেগুলোর মধ্যে রয়েছে জাল ডলার বেচাকেনা, উপহার প্রেরণ নিয়ে প্রতারণা, স্থানীয় অপরাধীদের সঙ্গে যোগসাজশে অপরাধে জড়িয়ে পড়া, সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ ছড়ানো এটিএম বুথে জালিয়াতি, মাদক পাচার ইত্যাদি। বাংলাদেশে অবস্থানরত সকল বিদেশীর পূর্ণাঙ্গ ডাটাবেজ তৈরি হলে এসব অপরাধ প্রবণতা অনেকাংশে হ্রাস পাবে। এর পাশাপাশি বাংলাদেশের অবস্থানরত সকল বিদেশীর ডাটাবেজটিও সর্বদাই পূর্ণাঙ্গ ও আপডেট করে রাখতে হবে।