কাজিরবাজার ডেস্ক :
পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষায় অবনতি, কাজ নেই, নতুন শিল্প নেই এবং দিল্লিতে কৃষক আন্দোলনের সমর্থনসহ একাধিক দাবিতে রাজ্যের প্রশাসনিক ভবন নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছিল বামপন্থী ১০টি ছাত্র ও যুব সংগঠন।
আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল নির্বাচনে তাদের জোটসঙ্গী কংগ্রেসের দুই শাখা সংগঠন যুব কংগ্রেস ও তাদের ছাত্র সংগঠন ছাত্র পরিষদকেও।
বাম ছাত্র ও যুবকদের বৃহস্পতিবারের (১১ জানুয়ারি) এই কর্মসূচি ঘিরে নবান্ন ভবন থেকে বহু দূরে কলকাতা করপোরেশন লাগোয়া ডোরিনা ক্রসিংয়ে মিছিল আটকাতে সমস্ত রকমের ব্যবস্থা নিয়ে রেখছিল কলকাতা পুলিশ।
মিছিল আটকাতে তৈরি করা হয় অস্থায়ী অ্যালুমিনিয়ামের প্রাচীর। বানানো হয় বাঁশের ব্যারিকেড, ওড়ানো হয় ড্রোন। মিছিলে বাধা দিতে রাখা কয়েক হাজার গ্যালনের কয়েকটি জলকামান ও পর্যাপ্ত পরিমাণে কাঁদানে গ্যাস। মোতায়েন করা হয় বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য এবং র্যাপিড অ্যাকশান ফোর্সের (র্যাফ) সদস্যদের।
কলকাতা ও হাওড়া শহরে মোট ছয়টি জায়গায় ব্যারিকেড দিয়ে মিছিলটি আটকানোর ব্যবস্থা করা হয়। এত আয়োজনের কারণ পুলিশ কর্মকর্তারা আন্দাজ করেছিলেন বামেদের মিছিল আইন আমান্য করেই নবান্নের পথে পা বাড়াবে। আর হলোও তাই।
বৃহস্পতিবার হাওড়া ও শিয়ালদহ স্টেশন থেকে বেলা ১১টা নাগাদ দুটি মিছিল মিলিত হয় কলেজ স্ট্রিটে। তারপর দুপুর ১টার সময় বামেদের মিছিল যাত্রা করে নবান্ন অভিমুখে। কোনো বাধা ও ব্যারিকেড মানবে না, এমন প্রত্যয় ছিল অংশগ্রহণকারীদের চোখে-মুখে।
বামেদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, দেড় মাস আগে এই কর্মসূচির কথা জানানো হলেও সহযোগিতা করেনি পুলিশ ও মমতার প্রশাসন। ফলে পুলিশ বাধা দিলে যেকোনো পরিস্থিতিই তৈরি হতে পারে। ফলে, সংঘাতের একটা বাতাবরণ তৈরি হবে তা আন্দাজ করেছিল শহরবাসীও।
ফলে বাম যুব সংগঠনের নবান্ন অভিযান ঘিরে দিনভর শহরজুড়ে ধুন্ধুমার চলে সারাদিন। রণক্ষেত্রের চেহারা নিলো শহর কলকাতা। কলকাতা করপোরেশন লাগোয়া ডোরিনা ক্রসিংয়ে মিছিল আসতেই বাধা দেয় পুলিশ। বাধা না মেনে ব্যারিকেড ভেঙে এগোতে থাকে ছাত্র-যুবদের মিছিল। পুলিশের দাবি তাদের দিকে মিছিলকারীরা বৃষ্টির মতো ইট-পাটকেল ছুড়ে মারে।
এক পর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু হয় মিছিলকারীদের। চালানো হয় জলকামান। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ও মিছিল ছত্রভঙ্গ করতে শুরু হয় লাঠিচার্জ। নিক্ষেপ করা হয় টিয়ারশেল। আহত হতে থাকেন বাম ছাত্র-যুবারা। অসুস্থ হয়ে পড়েন অনেকেই। রক্তাক্ত হয় রাজপথ।
পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশই ব্যবস্থা করে একাধিক অ্যাম্বুলেন্স। অ্যাম্বুলেন্স কম পড়ায় ব্যবহার করা গাড়ি ও বামেদের আনা ট্রাকটর।
এরপর মিছিল ছত্রভঙ্গ হয়ে ফের জমায়েত হয় শিয়ালদহ লাগোয়া মৌলালীতে। সেখানেই বসে পড়ে রাজপথ অবরোধ করেন বাম দলের নেতাকর্মীরা। পরে সেখানেও পুলিশ লাঠিচার্জ করে রাজপথে যান চলাচল স্বাভাবিক করে। বাম নেতাকর্মীদের অভিযোগ, শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ অন্যায়ভাবে নির্বিচারে লাঠিচার্জ করেছে।
তবে এদিন সকালে মিছিল শুরুর অনেক আগেই নবান্নের গেটে পৌঁছে যান কয়েকজন বাম সমর্থক। নবান্নের সামনে বিক্ষোভের জেরে ১০ থেকে ১২ জনকে সেখান থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।