শহীদ মিনার নিয়ে ষড়যন্ত্র

18

শহীদ মিনার নিয়ে আজও ষড়যন্ত্র শেষ হয়নি, যে কোনো অজুহাত নিয়ে সাম্প্রদায়িক শক্তি ষড়যন্ত্র করতে দ্বিধা বোধ করেনি। তাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসীদেরকে সচেতনতার সহিত এগিয়ে আসতে হবে।
শহীদ মিনার বিরোধী চক্র সুদীর্ঘ কাল থেকে ষড়যন্ত্র করে আসছে। দেশ বিভক্তির পর বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে যে সব শহীদরা স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিয়েছিল তাদের স্মরণে নির্মিত শহীদ মিনার গুলো হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর নেতৃত্বে এদেশীয় সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী শহীদ মিনার ভেঙ্গে ফেলতে কম চেষ্টা করেনি। তৎকালীন সময়ে দেশের সংস্কৃতিমনা বাঙালি জাতি ইটের গাঁথুনি করে অস্থায়ী শহীদ মিনার তৈরি করে শহীদদের স্মরণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করছে।
দেশ বিভক্তির পর-পরই বাঙালি জাতির মায়ের ভাষা কেড়ে নিতে চাইলে বাঙালি সংস্কৃতিমনা মানুষ শোষক পাকিস্তানিদের উপর ক্ষেপে উঠে। ঢাকা সহ সর্বত্র রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই বিক্ষোভ করতে থাকে। বাংলা ভাষার দাবিতে সমস্ত বাংলার মানুষ জেগে উঠে। ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলে বিক্ষোভ, মিছিল, সভা-সমাবেশ। এ সময়ের মধ্যে ভাষা আন্দোলনকারিদের বিরুদ্ধে চলে হিংস্র জানোয়ারের মতো নির্যাতন, গ্রেফতারি পরোয়ানা, প্রগতিশীল রাজনৈতিক ব্যক্তিদের উপর হুলিয়া। কিন্তু শোষক দল বাঙালিদেরকে দমিয়ে রাখতে পারেনি।
৫২ এর ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠার দাবিতে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করতে গেলে ঘাতক পাকিস্তানি বাহিনীর পোষা পুলিশের হাতে প্রাণ দেন, সালাম, বরকত, জব্বার সহ অসংখ্য বাঙালি সন্তানরা। তদের তাঁজা রক্তে রঙ্গিত হয় ঢাকার রাজ পথ। তবে ভাষা আন্দোলনে গর্জে উঠে বাঙালি জাতি।
মহান ভাষা আন্দোলনে শহীদ বীর বাঙালি সন্তানদের স্মরণে ৫২ এর ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরগুলিতে শহীদ মিনার তৈরি করে শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর প্রথা শুরু হয়।
৫২ এর শহীদদের স্মরণে স্থাপিত শহীদ মিনার এ দেশের সাম্প্রদায়িক শক্তি তাদের দোসর ঘাতক বাহিনীর সহযোগিতায় অনেক স্থানে শহীদ মিনার স্থাপনে বাধার সৃষ্টি করে। ৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধের পর ৭২ সাল থেকে দেশের জন্য যারা প্রাণ দিয়ে গেছেন, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে স্থানে-স্থানে শহর ও থানা শহর গুলোতে শহীদ মিনার তৈরি করা হয়।
এক সময়ে সিলেট শহরে শহীদ মিনারে সিলেটের সর্বস্তরের রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন গুলো ২১ ফেব্রুয়ারিসহ স্বাধীনতা সংগ্রামে শহীদদের স্মরণে শহীদ দিবসে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হতো। ৮০ দশকে সিলেটের প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল গুলো একত্রিত হয়ে সদর হাসপাতালের পূর্বাংশে সিলেটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এ শহীদ মিনারে ও একটি গোষ্ঠী বার-বার ভেঙ্গে দেয়ার চেষ্টা করেছে।
বাঙালি জাতি যতদিন বেঁচে থাকবে ততদিন শহীদ মিনারে শহীদদের স্বরণে পুষ্পস্তবক অর্পণ প্রথা চালু থাকবে। তাই শহীদ মিনারের সঠিক মর্যাদা রক্ষা করতে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে, যা সকল সচেতন মহলের কাম্য।