সিন্টু রঞ্জন চন্দ :
নগরী ও দক্ষিণ সুরমা এলাকায় যাত্রীবেশী ছিনতাইকারীরা পেরোয়া হয়ে উঠেছে। গত রবিবার বেলা আড়াই টার দিকে নগরীর ভার্থখলা এলাকা থেকে ছিনতাইয়ের চেষ্টাকালে ৪ জন ও কুমারগাঁও বাস ষ্ট্যান্ড থেকে আরো ২ জনসহ ৬ দুর্বৃত্তকে গ্রেফতার করেছে দক্ষিণ সুরমা থানা ও জালালাবাদ থানা পুলিশ।
মহানগর পুলিশের মিডিয়া শাখা জানায়, রবিবার বেলা আড়াইটায় দক্ষিণ সুরমা থানাধীন ভার্থখলাস্থ বাবুল মিয়ার বাসার সামনে একটি ছিনতাইকারী দল যাত্রীদের সিএনজি চালিত অটোরিক্সায় তুলে ভয়ভীতি দেখিয়ে ও জোরপূর্বক তাদের কাছ থাকা মোবাইল, টাকা, স্বর্ণালংকার সহ মূল্যবান মালামাল ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে। খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে ৪ ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে- হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ থানার চাঁনপুর এলাকার মো. মোদ্দত আলীর পুত্র মো. রাজু আহমদ উরফে অকিল (২৪), সুনামগঞ্জের দিরাই থানার ভাটিপাড়া চৌধুরীর পাড়া এলাকার মৃত আব্দুস ছালামের পুত্র মো. শহীদ নূর (৩২), দোয়ারাবাজার থানার হরিপদনগর এলাকার মো. ইরফান আলীর পুত্র মো. সুয়েল মিয়া উরফে সোহেল (২৭) ও ছাতক থানার জাউয়াবাজার বড়খাপন এলাকার মৃত ইলিয়াছ আলীর পুত্র মো. সুমন আহমদ (২৮)।
অভিযানকালে পুলিশ ছিনতাই কাজে ব্যবহৃত একটি সিএনজিচালিত অটোরিক্সা (সিলেট-থ-১২-৬৬৪৪), ৩টি চাকু ও ৫টি মোবাইল সেট ফোন উদ্ধার করে পুলিশ। গ্রেফতারকৃত ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনে মামলা দায়ের করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, নগরীর দক্ষিণ সুরমার সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের প্রবেশমুখ হুমায়ুন রশীদ চত্ত্বর, কদমতলীর আশপাশ এলাকা, দক্ষিণ ক্বীন ব্রীজের পুলের মুখ ও ভার্থখলা এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে যাত্রী বেশী ছিনতাইকারীরা ওৎ পেতে বিভিন্ন নারী-পুরুষের দামী মোবাইলফোন, টাকা পয়সা হাতিয়ে নিচ্ছে। গত কয়েকদিন আগে হুমায়ুন রশীদ চত্ত্বর এলাকা থেকে যাত্রীবেশী ছিনতাইকারীরা দিন-দুপুরে এক কলেজ শিক্ষকের গলায় চাকু ধরে টাকা ও মোবাইলফোন ছিনিয়ে নিয়ে গেছে ওই চক্রটি। শুধু কলেজ শিক্ষক নয় এভাবে সর্ব শ্রেণীর মানুষের কাছ থেকে ছিনতাইকারী চক্রটি একই কায়দায় সবকিছু হাতিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
গতকাল রাতে এসব ঘটনার ব্যাপারে দক্ষিণ সুরমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: মনিরুল ইসলামের সাথে যোগযোগ করা হলে তিনি ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আমরা এসব ছিনতাইকারীদের গ্রেফতার করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। গত রবিবার যাত্রীবেশী যে ৪ জন ছিনতাইকারী গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের কাছ থেকে প্রাথমিকভাবে আমরা ওই চক্রটির সদস্যদের কাছ থেকে বেশ কিছু তথ্য পেয়েছি। তাদেরকে গ্রেফতারের জন্য অভিযান চলছে।
এদিকে, জকিগঞ্জের লোহার মহলের তৈমুজ আলীর অভিযোগের মাধ্যমে জানা গেছে, গত রবিবার বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে বাস যোগে জালালাবাদ থানার কুমারগাঁও বাসস্ট্যান্ডে নামেন। সেখান থেকে আম্বরখানা যাওয়ার জন্য তিনি একটি সিএনজিতে উঠেন। জালালাবাদ থানার শাহপুর তালুকদারপাড়ার শামসুদ্দীনের পুত্র ইমন আহমদ (২৭), বিশ্বনাথ থানার নোয়াগাঁও দশঘরের আব্দুল তাহিরের পুত্র বর্তমানে পাঠানটুলা এলাকার বাসিন্দা আরমান ওয়াহিদ আলী (২২), ছাতক থানার লাখেশ্বর গ্রামের মৃত তহুর আলীর পুত্র বর্তমানে নগরীর করেরপাড়ার বাসিন্দা জুবেল আহমদ (৩১) ও জালালাবাদ থানার গোয়াবাড়ীর মুন্না (২৫)সহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজন দুর্বৃত্ত অস্ত্রের মুখে জিম্মী করে তার কাছ থেকে ২ হাজার ২শ’ টাকা ছিনিয়ে নেয়। পরে ছিনতাইকারীরা এক পর্যায়ে বিকেল ৩ টার দিকে তাকে জিম্মী করে আম্বরখানা পয়েন্টে পৌছেন এবং সেখান থেকে তৈমুজ আলীর মোবাইল হতে ছিনতাইকারীরা তার আত্মীয়-স্বজনের কাছে ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবী করে অপর একটি সিএনজিতে করে তাকে মদিনা মার্কেট এলাকার কামার গলিতে নিয়ে যায়।
ঘটনার শিকার তৈমুজ আলী থেকে আরো জানা যায়, তার মোবাইল ফোন নাম্বার হতে তার ভাগ্নে শুক্কুর এর মোবাইল নাম্বার থেকে কল দিয়ে তার সাথে ফোনে আলাপ করে তাকে টাকা নিয়া আসতে বলে। ছিনতাইকারীদের কথামত তার ভাগ্নে শুক্কুর কামার গলি এসে তাকেও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে তার নিকট থেকে ২৮ আটাশ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়।
ছিনতাইকারীরা তৈমুজ আলীর নিকট আরও টাকা দাবী করিলে তিনি কুমারগাঁও তার এক ভাতিজার নিকট হতে ২০ হাজার টাকা নিয়ে দিবে বলে তাকে নিয়ে রাত সাড়ে ১১ টায় কুমারগাঁও বাসস্ট্যান্ডে এলে তিনি সিএনজি হতে নেমে দৌড়ে স্থানীয় লোকজনকে বিষয়টি জানালে স্থানীয় লোকজন ছিনতাইকারী ইমন আহমদ ও আরমান ওয়াহিদ আলীকে আটক করে থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করলেও অপর ছিনতাইকারীরা পালিয়ে যায়।
এ ব্যাপারে তৈমুজ আলী বাদী হয়ে গ্রেফতারকৃতসহ ৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো ৫/৬ জনকে আসামী করে জালালাবাদ থানায় দ্রুত বিচার আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। যার নং- ৮(০৮-০২-০২১)। উক্ত আসামীদ্বয়কে গতকাল বিধি মোতাবেক আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
জালালাবাদ থানার অফিসার ইনচাজ (ওসি) মোঃ নাজমুল হুদা খান জানান, পলাতক অন্যান্য আসামীদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।