এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ভাঙ্গা দোয়ারাবাজারের জোড়খলা বেড়িবাঁধে স্লুইস গেইট, নির্মাণের দাবী এলাকাবাসীর

3

দোয়ারাবাজার থেকে সংবাদদাতা :
দীর্ঘ এক যুগেরও অধিক সময় ধরে ভাঙ্গনের শিকার হচ্ছে জোড়খলা আবোড়া বেড়িবাঁধ। হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ খ্যাত এই বেড়িবাঁধটি কোনোবার-ই টেকানো যায়নি। প্রতি বছরই আকস্মিক বন্যায় বাঁধ ভাঙ্গছে আর ভাঙ্গনের বিপরীতে বাঁধ নির্মাণের জন্য দেওয়া হচ্ছে মোটা অঙ্কের বরাদ্দ। কৃষকদের পক্ষ থেকে বার বার স্লুইস গেইট নির্মাণের দাবী জানানো হলেও তা এখনো উপেক্ষিত। সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের আলীপুর ও নূরপুর এলাকায় জোড়খলা বেড়িবাঁধটির অবস্থান। পশ্চিমদিকে কানলার হাওর আর পূর্ব দিকে খাসিয়ামারা নদী থাকায় ভৌগলিক অবস্থানগত কারণে বর্ষাকালে উজানে থেকে আসা পাহাড়ী ঢলের বন্যার পানির স্রোত সরাসরি জোড়খলা বেড়িবাঁধে এসে আঘাত হানে। এতে বাঁধের পেটফোলা নামক অংশে ভাঙ্গন সৃৃষ্টি হয়ে হাওরের বোরো ফসলি জমি তলিয়ে যায়। বার বার বাঁধ ভাঙ্গনের ফলে ইতোমধ্যে কয়েক শতাধিক হেক্টর বোরো ফসলি জমি পলি ও বালি পড়ে ভরাট হয়ে গেছে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে হাওরের বোরো ফসল। শুধু বোরো ফসলই নয়, বাঁধ ভেঙ্গে প্রতিবছরই প্লাবিত হয় সুরমা ইউনিয়নের আলীপুর, নূরপুর, সোনাপুর, বৈঠাখাইসহ আশপাশের ১৫টি গ্রাম। বন্যা প্রতিরোধে এই বাঁধ কাজে না আসায় প্রতিবছরই বাঁধ নির্মাণে একদিকে সরকারের মোটা অঙ্কের টাকা অপচয় হচ্ছে অপরদিকে কৃষকসহ হাওরের আশপাশের গ্রামের বাসিন্দারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বার বার বাঁধ নির্মাণ করতে গিয়ে বাঁধের আশপাশের জমিতে মাটি সংকুলান না হওয়ায় গত কয়েক বছর ধরে বাঁধ নির্মাণে মাটি সংকট দেখা দিয়েছে।
জানা যায়, ২০১৮ সালে সোনাপুর থেকে জোড়খলা হয়ে সুলতানপুর পর্যন্ত ফসল রক্ষা বাধ নির্মাণে বরাদ্দ ধরা হয়েছিল ২০,০০,০০০ (বিশ লক্ষ) টাকা। কিন্তু ওই বছরই বন্যায় বাঁধে ভাঙ্গন সৃষ্ট হওয়ায় বাধঁটি কোনো কাজে আসেনি হাওরের কৃষকদের। পরের বছর ২০১৯ সালে একই বাঁধের ফোল্ডার-২ এর ভাঙ্গন রোধকল্পে ও পুনরাকৃতিকরণ কাজে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩,৮৩,৭৩০ (তেরো লক্ষ তিরাশি হাজার সাতশত তিরিশ) টাকা। গত বছর ২০২০ সালে এই বাঁধ পুনর্নির্মাণে বরাদ্দ ধরা হয়েছিল ২৪,০০,০০০ (চব্বিশ লাখ) টাকা। আবারো ভাঙ্গন সৃষ্টি হওয়ায় চলতি বছর একই বাঁধ নির্মাণে তিনটি পিআইসিতে সর্বমোট বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৩৩,০০,০০০ (তেত্রিশ লাখ) টাকা। এভাবে প্রতি বছর বাঁধ নির্মাণের বরাদ্দ বাড়লেও স্লুইস গেইট না থাকায় কোনোভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না এই বেড়িবাঁধটি। প্রত্যেক বছর বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার বাবাদ সরকারের কোটি টাকা বেহাত জলে ভেসে যাচ্ছে। হাওরের ফসল রক্ষার্থে এবং আগাম বন্যা প্রতিরোধে জোড়খলা বেড়িবাঁধের পেটফোলা অংশে দ্রুত স্লুইস গেইট নির্মাণ করা হোক এমনটাই দাবী স্থানীয় বাসিন্দা ও হাওরের কৃষকদের। এদিকে (৫ ফেব্রুয়ারি) সোমবার সকাল এগারোটায় ৫ কিলোমিটার জোড়খলা বেড়িবাঁধ ও ক্লোজার (ফোল্ডার-২, ফোল্ডার-৩) এলাকা পরিদর্শন করেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের সিলেট বিভাগীয় অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোঃ শহীদুল ইসলাম, পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী (সুনামগঞ্জ পওর-২) শামসুদ্দোহা, পাউবোর দোয়ারাবাজার শাখার উপনির্বাহী প্রকৌশলী সমসের আলী, উপসহকারী শাখা কর্মকর্তা আবু সায়েম সফিউল ইসলাম, আওয়ামীলীগ নেতা এখলাস ফরাজী প্রমুখ। মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে পাউবোর দোয়ারাবাজার উপজেলা শাখার উপসহকারী শাখা কর্মকর্তা আবু সায়েম সফিউল ইসলাম জানান, জোড়খলা বেড়িবাঁধের পেটফোলা নামক অংশে স্লুইস গেইট নির্মাণের একটি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছিল। প্রস্তাবিত এই স্লুইস গেইটটি খুব শীঘ্রই টেন্ডার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।