জেড.এম. শামসুল :
আজ পহেলা ফেব্রুয়ারি। ভাষা অর্জনের স্মৃতিবাহী ভাষা শহীদের মাস। ছাত্র-জনতার রক্তমাখা এ মাস, মায়ের ভাষা প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে কয়েক যুগের জমে থাকা কম্পিত ক্ষোভের গর্জে উঠার মাস। মায়ের ভাষার মান রক্ষা করতে সেদিন অকুতোভয়ে ছাত্র-জনতার বুকের তাজা রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল রাজপথ। তাদের এ আত্মাহুতির মধ্য দিয়ে আমাদের মুক্তির পথচলা শুরু হয়। ভাষা শহীদ সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারের আত্মদান বৃথা যায়নি বলেই ৫৪, ৬২, ৬৬ ও ৬৯’র রক্ত ঝরানো সিঁড়ি বেয়ে মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের অভিষ্ট লক্ষ্যে উপনীত হবার প্রতিশ্রুতিতে জাতীয় জীবনের এক অনন্য মাস। এ মাসে কয়েকজন তরুণের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি তার মায়ের ভাষা রক্ত সহ স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখা শুরু করে। এ মাস আসলেই আমাদের স্বজন আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি তার মায়ের ভাষা রক্ষা সহ স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখা শুরু করে। এ মাস আসলেই আমাদের স্বজন হারানোর ব্যথা জাগরিত হয়। “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী, আমি কি ভুলিতে পারি” ছেলে হারা শত মায়ের অশ্রু ঝরা এই ফেব্রুয়ারী। আজ থেকে ৫৯ বছর পূর্বে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রীয় ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার দাবীতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পিছনে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছিলেন সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার। সে সময়ের শহীদদের বীরত্বপনা আজ বাংলাদেশের ভৌগলিক সীমারেখার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। একুশে ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে অভিষিক্ত হয়েছে। একুশে ফেব্রুয়ারী থেকেই বাঙালি বিরোধী সকল ষড়যন্ত্র চূর্ণ করে আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে শুরু হয় একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ। প্রতি বছর নানা আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার রক্তাক্ত সেই দিন বাঙালি জাতি স্মৃতিতে অম্লান করে রেখেছে। এদিন বাঙালি জাতি শহীদ মিনারে প্রফাতফেরির মধ্য দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে। সেদিনের আত্মত্যাগের ধ্বনি একুশে ফেব্রুয়ারীর সুর বাঙালি জাতিকে বিষণœ করে তোলে। একুশে ফেব্রুয়ারীকে কেন্দ্র করে বাংলা একাডেমী প্রতি বছর অনুষ্ঠানমালা সহ রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন পৃথক পৃথক অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করে। বাংলাকে রাষ্ট্রীয় ভাষায় প্রতিষ্ঠা করতে বাঙালি জাতি বহু ত্যাগ তিতিক্ষা আর বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে বাংলার রাজপথ রঞ্জিত করে অমিত ভাষা দিবস বিশ্বের প্রতিটি দেশের মানুষের কাছে স্মরণীয় করে রাখতে ইউনেস্কো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। শহীদদের প্রতি সম্মান জানিয়েছে, ভাষা শহীদদের প্রতি বিশ্বের প্রতিটি জাতি সম্মান জানায়। বাঙালি জাতি তার মাতৃভাষা রক্ষা আন্দোলন সূদূর বৃটিশ আমল থেকে শুরু করে। দেশ বিভাগের পূর্বে আলীগড়ের মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য্য ডঃ জিয়া উদ্দিনই প্রথম উর্দ্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব উত্থাপন করলে পূর্ব বাংলায় প্রতিবাদের জন্ম নেয়। প্রথমত ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ এ ধরণের প্রস্তাবের তীব্র বিরোধীতা করেন এবং বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবী উত্থাপন করেন। অনেকের মতে ১৩৫৪ বাংলার মধ্যবর্তী সময় থেকেই অর্থাৎ দেশ বিভাগের পূর্ব থেকেই বাংলাভাষা রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় অন্তর্ভূক্ত করার আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে। মূলত ১৯৪৮ সালের ১ ফেব্রুয়ারী তৎকালীন পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ফজলুর রহমানের বাসায় অধ্যাপক আব্দুল কাসেমের নেতৃত্বে, রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের এক প্রতিনিধি সভায় পাকিস্তানের সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা থেকে বাংলা ভাষাকে বাদ দেয়ার কারণ জানতে পারেন। এ বিষয় নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সাথে ভাষা সংগ্রাম পরিষদ প্রতিনিধিদের সাথে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। তখন থেকেই বাঙালি জাতি ভাষা আন্দোলন শুরু করে। এ মাসের শুরুতে বাঙালি জাতি রাষ্ট্রীয়ভাবে বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে।