দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা সামাজিক প্রথায় গৃহকর্মীর শ্রমে সম্পৃক্ত হওয়া এক প্রকার রেওয়াজই বলা যায়। সম্পন্ন ঘরের গৃহকর্তা কিংবা কর্ত্রীরা তাদের আর্থিক সঙ্গতি অনুযায়ী সাংসারিক কাজকর্মের সহযোগিতার জন্য গৃহে নিযুক্ত করে একজন কর্মীকে। ভরণ-পোষণ এবং নির্দিষ্ট মাসোহারার বিনিময়ে একজন গৃহশ্রমিক সংসারে যাবতীয় কাজ করার চুক্তিতে আবদ্ধ থাকে। এদের কোন নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা থাকে না। উদয়াস্ত পরিশ্রম করে গৃহকর্ত্রীকে শুধু সাহায্য নয়, মনোরঞ্জন করতেও ব্যতিব্যস্ত থাকতে হয় সময় সময়। যারা কাজ করতে আসে তাদের অধিকাংশই শিশু নয়ত কন্যা। তারা জানেই না শ্রমের মর্যাদা কিভাবে নির্ণীত হয় কিংবা তাদের অধিকারের মাত্রাই বা কতখানি! আর তেমন সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে সিংহভাগ গৃহকর্তাই কসুর করেন না। শ্রমের মূল্য চুকাতে গিয়ে অনেককে অত্যাচার-নিপীড়ন যেমন সহ্য করতে হয়। একইভাবে হাড়ভাঙ্গা খাঁটুনির পর বিশ্রামেরও তেমন অবকাশ থাকে না। আন্তর্জাতিক শ্রম আইনে সব ধরনের পরিশ্রমের কিছু মূল্যমান নির্ধারণ করা আছে। গৃহর্কর্মীরা সেটা জানেও না। আবার গৃহকর্তারা জানার কোন তাগিদও অনুভব করেন না। তাই হরহামেশাই এসব গৃহশ্রমিকের ওপর অকথ্য অত্যাচারই শুধু নয়, তার চেয়েও বেশি ধর্ষণ এবং প্রাণ সংহারের মতো বীভৎস ঘটনাও সংবাদ মাধ্যমের খবর হয়ে আসে।
সমাজের বিত্তবান শ্রেণী যারা অর্থ সম্পদের পাহাড় তৈরি করে ঘরের নিভৃতে গৃহশ্রমিকদের ন্যূনতম মানবিক অধিকার থেকে যথাসম্ভব দূরে সরিয়ে রাখে, তেমন অপরাধীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ অত্যন্ত জরুরী। এমন অত্যাচার-নির্যাতনের বাস্তব প্রেক্ষাপটে ২০১৫ সালের ২১ ডিসেম্বর গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি অনুমোদন পেয়েও আজ অবধি আলোর মুখ দেখেনি। অর্থাৎ বিধিবদ্ধ ব্যবস্থাপনার ছিটেফোঁটা সুযোগ থেকেও তারা প্রায়ই বঞ্চিত। নিজেরাও বিন্দুমাত্র সচেতন নয় তাদের দাবি, অধিকার, সম্মান কিংবা মর্যাদা নিয়ে। আর যাদের কাছে তারা নিজেদের জিম্মি রেখে খাটা খাঁটুনি করে তারাও মানবিক দায়বদ্ধতার ধারও ধারেন না। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো জানাচ্ছে ২০১৪ সালের জাতীয় শিশুশ্রম জরিপ অনুযায়ী গৃহকর্মে নিয়োজিত ১ লাখ ২৫ হাজার শিশু কর্মীর বয়স ৫ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে। এর মধ্যে আবার ৮০%ই কন্যা শিশু। বিরাট আকারের এমন শ্রম বিনিয়োগকে মানবিক মর্যাদা দিতে গিয়ে প্রথমেই তাদের মূল্যবান শ্রমশক্তির স্বীকৃতি আবশ্যক। নীতিমালা ২০১৫-এর খসড়া মন্ত্রী পরিষদ সভায় অনুমোদন পেয়েছে।