কানাইঘাট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিভিন্ন খাতের টাকা আত্মসাৎ প্রমাণিত হলে দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা

14

কানাইঘাট থেকে সংবাদদাতা :
কানাইঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিভিন্ন খাতের লক্ষ লক্ষ টাকা জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাতের ঘটনার সাথে হাসপাতালের কেউ জড়িত থাকলে তদন্ত পূর্বক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগের সহকারী পরিচালক ডাঃ মোঃ আনিসুর রহমান ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা এম. গৌছ আহমদ চৌধুরী জানিয়েছেন।
বুধবার হাসপাতালের ২০১৯-২০ সহ বিভিন্ন সালের উন্নয়ন খাত সহ একাধিক তহবিলের লক্ষ লক্ষ টাকা হাসপাতালের সদ্য বদলীকৃত টিএইচও ডাঃ শেখ শরফ উদ্দিন নাহিদ ও অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার অপারেটর শামীম আহমদ কর্তৃক ভুয়া বিল-ভাউচার তৈরি করে আত্মসাতের অভিযোগ এনে কানাইঘাট বাজারের নাঈম এন্ড ফাহিম রেস্টুরেন্টের স্বত্ত্বাধিকারী আব্দুল মান্নান ও অভিযোগের সাক্ষীরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিলেটের বিভাগীয় পরিচালক ডাঃ রাজিয়া সুলতানা বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এ সময় অভিযোগের বাদী ব্যবসায়ী আব্দুল মান্নান সহ সাক্ষীরা সহকারি পরিচালক ডাঃ আনিসুর রহমান ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা এম. গৌছ আহমদ চৌধুরীর সাথে সাক্ষাৎ করে হাসপাতালের অফিস সহকারী শামীম আহমদ গত ১০ বছর ধরে হাসপাতালে কর্মরত থেকে ভুয়া বিল-ভাউচার তৈরি করে হাসপাতালের বিভিন্ন খাতের লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাতের ঘটনা তুলে ধরে বিষয়টি তদন্ত পূর্বক খতিয়ে দেখার জন্য দাবী জানান। এ সময় তারা বলেন, আমরা কোন হাসপাতালের দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ পেলে সেটা তদন্ত করে দেখি, আপনারা সুনির্দিষ্ট বেশ কিছু অভিযোগ তুলে ধরে দরখাস্ত দিয়েছেন অতি শীঘ্রই তদন্ত পূর্বক হাসপাতালের অর্থ আত্মসাতের ঘটনার সাথে বিদায়ী টিএইচও ডাঃ শেখ শরফ উদ্দিন নাহিদ ও অফিস সহকারী শামীম আহমদ সহ কারো সম্পৃক্ততা পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে, এক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।
অভিযোগকারীরা বলেন, হাসপাতালের বিভিন্ন সালের বিল-ভাউচার উপজেলা ট্রেজারী অফিস থেকে উত্তোলন এবং কাগজপত্র যাচাই করলে হাসপাতালের বিভিন্ন উন্নয়ন সহ সেবাখাতের লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাতের ঘটনা বেরিয়ে আসবে বলে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের জানান। দায়েরকৃত অভিযোগের বাদী ব্যবসায়ী আব্দুল মান্নান দরখাস্তে উল্লেখ করেছেন, করোনাকালীন লকডাউন চলাকালে তার নাঈম এন্ড ফাহিম রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকলেও হাসপাতালের টিএইচও ডাঃ শেখ শরফ উদ্দিন ও অফিস সহকারী শামীম আহমদ সম্পূর্ণ ভুয়া পৃথক দুইটি বিল-ভাউচার তৈরি করে ১ লক্ষ ৫৫ হাজার ৫’শ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এমন সংবাদ শুনে আব্দুল মান্নান কানাইঘাট ট্রেজারী অফিস থেকে পৃথক দু’টি ভাউচার উত্তোলন করে দেখেন ভুয়া বিল-ভাউচারে সীল ও স্বাক্ষর জালিয়াতি করা হয়েছে।
একই ভাবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কাদির ভেরাইটিজ ষ্টোরের নামে ভুয়া ভাউচার তৈরি করে স্টেশনারী মালামাল ক্রয় বাবদ আরো প্রায় ১ লক্ষ ২২ হাজার ৮৬৪ টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন ভুয়া শ্রমিক পরিচয়ে পৃথক পৃথক বিল-ভাউচার তৈরি করে লক্ষাধিক টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। ভাউচারে যাদেরকে শ্রমিক হিসেবে ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে সেই সব ঠিকানায় কোন শ্রমিকের সন্ধান পাওয়া যায়নি।
এমতাবস্থায় ডাঃ শরফ উদ্দিন নাহিদ ও শামীম আহমদের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সহ বিভিন্ন দফতরে বেশ কয়েকটি অভিযোগ দায়ের করা হলেও অদ্যবধি পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে কোন ধরনের ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনা প্রকাশের পর কেবল মাত্র ডাঃ শেখ শরফ উদ্দিন নাহিদ অন্যত্র বদলী হয়েছে, কিন্তু অফিস সহকারী শামীম আহমদ এখনো স্বপদে বহাল থেকে অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি ধামাচাপা দেয়া সহ অভিযোগ প্রত্যাহার করার জন্য ভয়ভীতি সহ নানা ধরনের তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে সচেতন মহল জানান। অবিলম্বে বিষয়টি সঠিক তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবীও জানিয়েছেন তারা।