কাজিরবাজার ডেস্ক :
ব্যাংকের ঋণ পরিশোধের বিশেষ সুবিধার মেয়াদ আর বাড়ছে না। দুই বছর পর এই সুবিধা উঠিয়ে নিলো বাংলাদেশ ব্যাংক। ডিসেম্বরের মধ্যে ঋণের ২৫ শতাংশ পরিশোধ করেই খেলাপির বাইরে ছিলেন গ্রাহক। তবে বিশেষ এ সুবিধা তুলে নেওয়ার ফলে ডিসেম্বরের পর ঋণ পরিশোধ না করলেই গ্রাহক খেলাপিতে পরিণত হবেন।
মঙ্গলবার (২৮ ডিসেম্বর) কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আয়োজিত ব্যাংকার্স সভায় এ সিদ্ধান্তের কথা জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। সভা শেষে এ বিষয়টি নিশ্চিত করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ২০২১ সালে ২৫ শতাংশ ঋণ পরিশোধ করেই খেলাপির বাইরে ছিলেন গ্রাহক। বেশিরভাগ গ্রাহকই এই টাকা পরিশোধ করেছেন। কিছু গ্রাহক এখনো নতুন সুবিধার আশায় রয়েছেন। কিন্তু এই সুবিধা আর বাড়ানো হবে না।
তিনি আরও বলেন, ক্ষুদ্র গ্রাহকদের ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রেও বিশেষ সুবিধার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মাত্র ১৫ শতাংশ অর্থের মাধ্যমেই খেলাপি হওয়ার হাত থেকে বেঁচে যাবেন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা। এখানে বিশেষ সুবিধা হিসেবে আরও রাখা হয়েছে এক দশমিক ৫০ শতাংশ প্রভিশনে ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ। এ সুবিধা শুধু করোনাকালীন ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য।
এর আগে ১৫ ডিসেম্বর ব্যাংকখাতে ঋণ পরিশোধের মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়ানোর জন্য গভর্নর বরাবর আবেদন জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছিল ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআিই। সেই চিঠিতে বলা হয়, করোনার কারণে ব্যবসায়ীরা এখনো ভয়াবহ অবস্থা পার করছেন। তাই ২৫ শতাংশ পরিশোধের শর্ত শিথিল করে ঋণ শ্রেণীকরণ সুবিধার মেয়াদ আগামী বছরের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হলে ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন ব্যবসায়ীরা। তবে ব্যবসায়ীদের সে দাবিতে সায় দেয়নি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
চিঠিতে শর্ত শিথিলের প্রস্তাবে বলা হয়, ক্ষুদ্র, মাঝারি ও অন্যান্য শিল্প এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের বকেয়া ঋণের পরিমাণ ১০ কোটি টাকা বা তার কম হলে পরিশোধের ক্ষেত্রে প্রদেয় কিস্তিগুলোর কোনো প্রকার ডাউন পেমেন্ট না দিলেও মেয়াদোত্তীর্ণ হিসাবে শ্রেণীকরণ না করে ঋণ হিসাবটি পুনঃতফসিলকৃত বলে গণ্য করা। ১০ কোটি টাকার অধিক কিন্তু ৫০০ কোটি টাকা পর্যন্ত ২ শতাংশ পরিশোধ করা হলে ঋণখেলাপি (বিরূপমানের শ্রেণীকরণ) না করা। ৫০০ কোটি টাকার অধিক ঋণ ১ শতাংশ পরিশোধের শর্ত রেখে কাউকে খেলাপি না করার অনুরোধ জানানো হয়।
করোনাকালীন অর্থনীতির সংকট মোকাবিলায় ২০২০ সালজুড়ে ঋণের কিস্তির এক টাকা শোধ না করলেও গ্রাহককে খেলাপি করতে পারেনি ব্যাংক। চলতি বছর শুরু হয় ৮৮ হাজার ৭৩৪ কোটি ৬ লাখ টাকা খেলাপি ঋণ নিয়ে। এ বছর নতুন করে আগের মতো সব সুযোগ দেওয়া হয়নি। একজন গ্রাহকের যে পরিমাণ ঋণ পরিশোধ করার কথা, চলতি ডিসেম্বরের মধ্যে তার ২৫ শতাংশ পরিশোধ করলেও তাকে আর খেলাপি করা যাবে না। তবুও খেলাপি ঋণ বেড়েছে। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ব্যাংকখাতের খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়ায় ৯৯ হাজার ২০৫ কোটি টাকায়। বর্তমানে তা এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। সবশেষ ব্যাংকখাতের ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১২ লাখ ৪৫ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে ১ লাখ ১ হাজার ১৫০ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা মোট ঋণের ৮.১২ শতাংশ। চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১২ হাজার ৪১৬ কোটি টাকা।