বদলির কারণে উন্নয়ন প্রকল্প যেন বাধাগ্রস্ত না হয় – প্রধানমন্ত্রী

37
গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে রাজধানীর শেরে-বাংলা নগর প্রান্তে এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অংশগ্রহণ করেন একনেক চেয়ারপার্সন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

কাজিরবাজার ডেস্ক :
সড়ক নির্মাণের সময় পানি চলাচলের বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। প্রয়োজনে পর্যাপ্ত পরিমাণে কালভার্ট-ব্রীজ নির্মাণ করার নির্দেশনাও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কর্মকর্তাদের বদলিজনিত কারণে যাতে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত না হয় সে বিষয়ে নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী।
মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এ নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণভবন থেকে একনেক সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনা। একনেক সভায় পাঁচ হাজার ১৮৯ কোটি ৬৯ লাখ টাকা খরচে তিনটি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে সরকার দেবে দুই হাজার ৮৫৫ কোটি আট লাখ, সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ৬৩ কোটি ৮৫ লাখ এবং বিদেশী ঋণ দুই হাজার ২৭০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা।
সভা শেষে শেরেবাংলা নগর এনইসি সম্মেলন কক্ষে পরিকল্পনা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোঃ আসাদুল ইসলাম প্রকল্পের সার্বিক বিষয় উপস্থাপন করেন। এ সময় সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মোঃ মামুন-আল-রশীদ, শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য (সচিব) মোসাম্মৎ নাসিমা বেগম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন তুলে ধরে সিনিয়র সচিব আসাদুল ইসলাম বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় প্রয়োজনীয় কর্মকর্তারা হঠাৎ বদলি হলে যাতে দ্রুত নতুন লোকদের প্রশিক্ষিত করা হয় সে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, কর্মকর্তাদের বদলিজনিত কারণে যাতে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত না হয়। কর্মকর্তাদের অরিয়েন্টেশনের দ্রুত ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া রাস্তা নির্মাণের ক্ষেত্রে যাতে পানি চলাচল বাধাগ্রস্ত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখারও নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, রাস্তা তৈরির সময় পর্যাপ্ত ব্রিজ, কালভার্ট রাখতে হবে এবং প্রয়োজনে হাওড়-বাওড় অঞ্চলে রাস্তা এলিভেটেড করতে হবে, যাতে করে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট না হয়। মামলা জটের কারণে অনেক প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি হয় এই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন তুলে ধরে সিনিয়র সচিব বলেন, মামলার কারণে প্রকল্প বিলম্ব হয়। উদ্যোগী মন্ত্রণালয় যেন প্রকল্পের মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করে এই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন। মামলার কারণে যাতে কোনভাবেই প্রকল্প বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত না হয়।
পরিকল্পা বিভাগের সচিব আরও জানান, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সরকারী তহবিল থেকে ৬৩ কোটি টাকা ব্যয়ের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তবে এক্ষেত্রে তিনি বলেছেন, ভবিষ্যতে সিটি কর্পোরেশনগুলোকে অর্থনৈতিকভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে হবে, যাতে প্রকল্প বাস্তবায়নে তারা বেশিরভাগ ব্যয় মেটাতে পারে।
সচিব জানান, একনেক সভায় মোট তিনটি প্রকল্পের মধ্যে দুটি সংশোধিত এবং একটি নতুন প্রকল্প। সংশোধিত দু’টিই সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের। সেগুলো হলো ‘সোনাপুর (নোয়াখালী)- সোনাগাজী (ফেনী)- জোয়ারগঞ্জ (চট্টগ্রাম) সড়ক উন্নয়ন (দ্বিতীয় সংশোধন) প্রকল্প। প্রকল্পটির মূল খরচ ছিল ১৭২ কোটি ৬৫ লাখ, প্রথম সংশোধনীতে হয় ১৮৫ কোটি ৯৬ লাখ এবং দ্বিতীয় সংশোধনে ব্যয়ের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়াল ২৯৩ কোটি পাঁচ লাখ টাকা। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে শুরু হওয়া প্রকল্পটি ২০১৮ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা থাকলে এখন তা বাড়িয়ে করা হলো ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত।
ব্রিফিং-এ জানানো হয়, ‘সাসেক সড়ক সংযোগ প্রকল্প : এলেঙ্গা-হাটিকামরুল-রংপুর মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ’ প্রকল্পটি ৫ বছরে অগ্রগতি মাত্র ১১ শতাংশ। এই অবস্থায় ব্যয় বাড়ল ৪ হাজার ৭৬৩ কোটি ৩৭ লাখ টাকা, যা মোট অনুমোদিত ব্যয়ের ৪০ শতাংশ। সেইসঙ্গে মেয়াদ বেড়েছে ৩ বছর ৪ মাস। প্রকল্পটির মূল অনুমোদিত ব্যয় ছিল ১১ হাজার ৮৯৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ২ হাজার ৫৪৪ কোটি টাকা এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) থেকে ৯ হাজার ৩৫৪ কোটি ৯৬ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।
এখন প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে ৪ হাজার ৭৬৩ কোটি ৩৭ লাখ টাকা বাড়িয়ে প্রকল্পটির মোট ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ১৬ হাজার ৬৬২ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে সরকারের তহবিল থেকে ৫ হাজার ৩৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকা এবং এডিবির ঋণ থেকে ১১ হাজার ৬২৫ কোটি ৭২ লাখ টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর।
এছাড়াও অনুমোদিত নতুন প্রকল্পটি হলো স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের ‘ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকার ট্রাফিক অবকাঠামো উন্নয়নসহ সড়ক নিরাপত্তা’। এতে খরচ হবে ৩১৯ কোটি ২৩ লাখ টাকা। ২০২০ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।
সভায় কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মোঃ শাহাব উদ্দিন এবং ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী অংশগ্রহণ করেন। সভায় মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সচিব এবং উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।