পুরাতন খোয়াই নদী সংরক্ষণ ও সৌন্দর্য বর্ধনের দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান

14

পুরাতন খোয়াই নদীর পূর্ণাঙ্গ সীমানা চিহ্নিতকরণ, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান পুনঃ চালু, সংরক্ষণ ও সৌন্দর্য বর্ধনের দাবিতে হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি দিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জ ও খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপার। গতকাল ১৯ অক্টোবর (সোমবার) বাপা’র একটি প্রতিনিধিদল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে স্মারকলিপি হস্তান্তর করেন। এ সময় জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান স্মারকলিপি গ্রহণ করেন এবং যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের আশ^াস প্রদান করেন।
স্মারকলিপিতে বলা হয় হবিগঞ্জ শহরের জলাবদ্ধতা নিষ্কাশনের সবচেয়ে বড় আধার হচ্ছে পুরাতন খোয়াই নদী। মাছুলিয়া নামক স্থান থেকে হরিপুর-নাতিরাবাদ হয়ে মাছ বাজার পর্যন্ত পুরাতন খোয়াই নদীর দৈর্ঘ্য হচ্ছে ৫ কিলোমিটার। বর্ষা মৌসুমে শহরের বৃষ্টির পানি ধারণ ও পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় পুরাতন খোয়াই নদীর ভূমিকা অপরিসীম। যেকোন নগরে বারিপাত অঞ্চল বা ‘রিটেনশন পন্ড’ হচ্ছে ওই নগরে অবস্থিত প্রাকৃতিক জলাশয়সমূহ। পুরাতন খোয়াই নদী হবিগঞ্জের অন্যতম জলাধার। এই শহরের জন্য তাই পুরাতন খোয়াই নদী পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া এই শহরের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সৌন্দর্যবর্ধনের সাথে পুরাতন খোয়াই নদী একইসূত্রে গাঁথা। অথচ দুঃখজনক হলেও সত্য যে, কিছু স্বার্থান্বেষী মহল নদীটিকে অব্যাহতভাবে দখল করার কারণে এর শেষ চিহ্ন মুছে যেতে চলেছে। দীর্ঘদিন ধরে ভূমি দখলকারীদের অবৈধ দখল, ভরাট ও দূষণের কারণে পুরাতন খোয়াই নদীর অবস্থা চরমে পৌঁছেছে।
২০১৯ সনের সেপ্টেম্বর মাসে এই নদীর সীমানা নির্ধারণ ও উভয় পারের অবৈধ স্থাপনা দখল উচ্ছেদ প্রক্রিয়া চালু হয়েছিল প্রশাসনের পক্ষ থেকে। সে সময় ‘মাছুলিয়া থেকে শায়েস্তানগর’ পর্যন্ত নদী থেকে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও বর্তমানে তা বন্ধ আছে। অথচ প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল পুরাতন খোয়াই নদীর সম্পূর্ণ দখলমুক্ত করে সৌন্দর্যবর্ধন করা হবে।
এদিকে মাছুলিয়া থেকে শায়েস্তানগর পর্যন্ত উচ্ছেদকৃত অংশ পুনরায় দখল হয়ে যাচ্ছে। হবিগঞ্জবাসীর প্রাণের দাবী পুরাতন খোয়াই উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরুতে যে গতিতে পরিচালিত হয় তা ভাটা পড়াতে ইতিমধ্যেই জনমনে শঙ্কা তৈরি হয়েছে পূর্ণাঙ্গ নদীটি দখলমুক্ত করার ব্যাপারে।
স্মারকলিপিতে ৬টি দাবি উপস্থাপন করা হয়। দাবিগুলো হচ্ছেÑ ১) পুরাতন খোয়াই নদী থেকে সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে এবং নদী দখলকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ২) যথাযথ ও নির্মোহভাবে পূর্ণাঙ্গ সীমানা নির্ধারণ ও আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী স্থায়ী সীমানা চিহ্নিত করতে হবে। ৩) পুরাতন খোয়াই নদীকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে দ্রুত খনন করতে হবে। নদী পাড়ে ঘাস লাগানো গাছ রোপন, মানুষের বসার স্থান নির্মাণ করতে হবে। ৪) উদ্ধারকৃত অংশ দ্রুত খননের আওতায় আনতে হবে। মাছুলিয়া থেকে মাছ বাজার পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ পুরাতন খোয়াই নদী প্রকল্পের আওতায় আনতে হবে। পুরাতন খোয়াই নদী পুনরুদ্ধারে অংশগ্রহণমূলক ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। ৫) নদী রক্ষায় স্থানীয় প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও জনগণকে সম্পৃক্ত করে বিজ্ঞানসম্মতভাবে পরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করতে হবে এবং ৬) খোয়াই নদী সংশ্লিষ্ট গৃহীত প্রকল্প সম্পর্কে আমরা বিশদভাবে জানতে এবং মতামত দিতে চাই।
তোফাজ্জল সোহেল বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি, দখল-ভরাট ও দূষণে নদীটি ধবংস হবার কারণে হবিগঞ্জে শুধু পরিবেশ বিপর্যয়ই নয়, ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় নেমে এসেছে। সামান্য বৃষ্টিতেই হবিগঞ্জের মানুষ জলাবদ্ধতায় নিমজ্জিত হয়ে পড়ে। তাই অনতিবিলম্বে পুরাতন খোয়াই নদীটিকে রক্ষা করার বিকল্প নেই।
স্মারকলিপি হস্তান্তর করেন বাপা হবিগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক ও খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপার তোফাজ্জল সোহেল, বাপা সদস্য এডভোকেট বিজন বিহারী দাস, আমিনুল ইসলাম এবং মোঃ আবিদুর রহমান।
স্মারকলিপির অনুলিপি প্রেরণ করা হয় স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় এর মন্ত্রী ও সচিবগণ, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান, নির্বাহী প্রকৌশলী, পানি উন্নয়ন বোর্ড, হবিগঞ্জ এবং সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন-বাপা, কেন্দ্রীয় কমিটিকে। বিজ্ঞপ্তি