চিকিৎসকদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ॥ যে কোন পরিস্থিতিতে দায়িত্ব ভুলে যাবেন না

31
অ্যানাস্থেসিওলজিস্টস বাংলাদেশ সোসাইটি আয়োজিত “দি ফার্স্ট ইন্টারন্যাশনাল ই-কনফারেন্স অন ক্রিটিক্যাল কেয়ার এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেকোন পরিস্থিতিতে চিকিৎসকরা নিজেদের দায়িত্ব ভুলে যাবেন না এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, মানবতার সেবাই একজন চিকিৎসকের প্রথম ও প্রধান কাজ। চিকিৎসা একটি মহান পেশা। একজন অসুস্থ মানুষের সেবা করে একজন চিকিৎসক মূলত মানবতার সেবা করেন। ফলে আপনি যখন ডাক্তার হবেন, আপনার প্রথম ও প্রধান কাজ হবে মানবতার সেবা করা। আশা করি, যেকোন পরিস্থিতিতে আপনারা (চিকিৎসক) আপনাদের দায়িত্ব ভুলে যাবেন না। শনিবার বাংলাদেশ সোসাইটি অব এ্যানাস্থেসিওলজিস্টস আয়োজিত ‘ক্রিটিকাল কেয়ার-২০২০’ শীর্ষক প্রথম আন্তর্জাতিক ই-সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এ আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী আসন্ন শীতে বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের আরও বিস্তার রোধ করার বিষয়ে দৃঢ় সংকল্প ব্যক্ত করে এই মহামারী চলাকালীন মানবতার সেবা অব্যাহত রাখার জন্য চিকিৎসকদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আমরা আশাবাদী যে, আগামী দিনগুলোতেও আমরা এই রোগের আরও প্রবল বিস্তার রোধ করতে সক্ষম হব। এখন পর্যন্ত আমরা ভাগ্যবান, কেননা এই রোগের সংক্রমণ এবং মৃত্যুর হার উভয়ই বাংলাদেশে খুব কম।
ভার্চুয়াল এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার রেকর্ডে বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারের প্রচেষ্টার সঙ্গে চিকিৎসকসহ সকল স্বাস্থ্যকর্মীদের শ্রম ও ত্যাগের কথা তুলে ধরে বলেন, আমাদের প্রচেষ্টা এবং চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের কঠোর পরিশ্রমই পারে বাংলাদেশে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে। আমাদের সৌভাগ্য বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ এবং মৃত্যুহার দুটোই কম। আশা করি আগামী দিনগুলোতে এই মহামারীর আরও বিস্তার রোধ করতে আমরা সক্ষম হবো।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী কোভিড-১৯ মোকাবেলায় জরুরী ভিত্তিতে দুই হাজার চিকিৎসক এবং ৫ হাজার নার্সসহ মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট নিয়োগসহ সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। করোনা মহামারী মোকাবেলায় দায়িত্ব পালনকালে এ্যানাস্থেসিওলজিস্টসহ উল্লেখযোগ্য চিকিৎসক করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার কথা উল্লেখ করে সরকারপ্রধান তাদের ত্যাগের কথা স্মরণ করেন এবং তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও স্বজন হারানো পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। দেশের স্বাস্থ্য সেক্টরের উন্নয়নে সরকারের উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের স্বাস্থ্য সেবা উন্নত করতে আমার সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। স্বাস্থ্য সেবা পাওয়া মানুষের মৌলিক অধিকার। তাই আমরা শয্যা সংখ্যা বাড়িয়ে, ডাক্তার ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগসহ আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজনসহ চিকিৎসার সেবা সম্প্রসারণ করেছি।
তিনি বলেন, গত কয়েকবছরে আমরা দেশে বেশ কয়েকটি নতুন বিশেষায়িত হাসপাতাল স্থাপন করেছি। আমাদের শক্তিশালী বেসরকারী সেক্টরও চিকিৎসা সেবা প্রদানে এগিয়ে এসেছে। গ্রামের মানুষকে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা প্রদানে আমরা প্রায় ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র করেছি। সেখানে ৩০ প্রকার ওষুধ বিনামূল্যে সরবরাহ করছে সরকার।
এ্যানাস্থেসিওলজির গুরুত্ব তুলে ধরে সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা আরও বলেন, সার্জারির আগে, চলাকালীন সময়ে ও পরে রোগীদের পেরিওপারেটিভ যত্নের সঙ্গে এ্যানাস্থেসিওলজির বিষয়ে সর্বত্রই বিশেষ মনোযোগ বাড়ছে। এর কারণ এর আওতায় এনেস্থেসিয়া, নিবিড় যত্নের ওষুধ, ক্রিটিক্যাল জরুরী ওষুধ ও ব্যথার ওষুধ। বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম নয়। আমরা তাদের অবদানকে যথাযথভাবে স্বীকৃতি দেব।
তিনি বলেন, সঙ্কটাপন্ন রোগীদের ম্যানেজমেন্টের পাশাপাশি এ্যানাস্থেসিওলজিস্টরা অপারেশন থিয়েটারে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। কোভিড-১৯ মহামারীতে আমাদের এ্যানাস্থেসিওলজিস্টরা আইসিইউতে এবং আইসিইউ’র বাইরের কোভিড-১৯ রোগী ম্যানেজমেন্টে দুর্দান্ত কাজ করে চলছেন। এ সময় তিনি গুরুতর রোগীদের সেবায় সর্বশেষ জ্ঞান ও প্রযুক্তি দিয়ে নিজেদের প্রস্তুত রাখতে এ্যানাস্থেসিওলজিস্টদের প্রতি অনুরোধ করেন।
বাংলাদেশ সোসাইটি অব এ্যানাস্থেসিওলজিস্টসের ভূমিকার প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে সোসাইটি অব এ্যানাস্থেসিওলজিস্টস কোভিড আইসিইউ ম্যানেজমেন্টে জাতীয় নির্দেশিকা প্রস্তুত করতে সহায়তা করেছে। তারা সারাদেশে আইসিইউ সেবা কার্যক্রম সম্প্রসারণ এবং করোনা রোগী ম্যানেজমেন্টে আইসিইউ ডাক্তার এবং স্টাফদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে।