করোনা মহামারীতে একে অন্যের প্রতি যত্নবান হোন। এই জন্য নিজের, পরিবারের, সমাজের, দেশের, মোট কথা সকল পর্যায়ে হার্টকে সুস্থ রাখতে আন্তরিকতার সাথে কাজ করতে হবে।
গতকাল ২৯ সেপ্টেম্বর বিশ^ হার্ট দিবস উপলক্ষে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডশন সিলেট আয়োজিত আলোচনা সভা ও গণমুখী সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে ফাউন্ডেশনের সভাপতি সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডশন সিলেট এর সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম এনায়েত উল্লাহ্ এ কথা বলেন। তিনি আরো বলেন আমাদের উচ্চ রক্তচাপ এর চিকিৎসা কখনো বন্ধ করা ঠিক হবে না। প্রয়োজনে মেডিসিন এর পরিমাণ কমানো বাড়ানো যেতে পারে। তিনি বলেন এ বৎসর বিশ^ হার্ট দিবসে সবার কাছে আমাদের প্রত্যাশা ‘বৈশ্বিক মহামারীতে হৃদরোগীদের প্রতি যত্নবান হোন’। অধ্যাপক এম এনায়েত উল্লাহ্ বলেন কোভিড-১৯ ভীত না হয়ে নিয়মিত হার্টের চেকআপ করান। জরুরী প্রয়োজনে হাসপাতালে যান। চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য কর্মীর পরামর্শ ও সেবা গ্রহণ করুন।
ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডশন সিলেট এর পাবলিসিটি সেক্রেটারী আবু তালেব মুরাদের সঞ্চালনায় ও হাফেজ আব্দুল বাছির কর্তৃক কোরআন তেলাওয়াতের পর স্বাগত বক্তব্য রাখেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডশন সিলেট এর সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. মোঃ আমিনুর রহমান লস্কর। এর পর বিশ^ হার্ট দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘বৈশি^ক মহামারীতে হৃদরোগীদের প্রতি হৃদয়বান হোন’ এর উপর বক্তব্য রাখেন সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. মোহাম্মদ ইকবাল আহমদ, হৃদরোগ এবং কোভিড-১৯ নিয়ে সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. কৌশিক মজুমদার, হৃদরোগের লক্ষণ ও কারণ সম্পর্কে জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. ফারজানা তাজিন এবং হৃদরোগের প্রতিকার ও চিকিৎসা নিয়ে বক্তব্য রাখেন জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আব্দুল্লাহ ইবনে আমিন চৌধুরী।
সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. মোহাম্মদ ইকবাল আহমদ বলেন বৈশি^ক মহামারীর এই সময়ে হৃদরোগীরা দ্বিমুখী সমস্যার মধ্যে রয়েছেন। এক দিকে করোনা আক্রান্ত হলে হৃদরোগীরেদ জটিলতা বৃদ্ধি ও করোনা মারাত্মক আকার নিতে পারে। অন্য দিকে সংক্রময়ের ভয়ে তারা হার্টের নিয়মিত চেকআপ বা চিকিৎসা নিতে ভয় পেয়ে থাকে ফলে হৃদরোগীরা মারাত্মক ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে। ডা. ইকবাল বলেন মনে রাখতে হবে হার্ট অ্যাটাক এবং স্টোকের জটিলতা করোনা সংক্রময়ের মতোই ভয়াবহ।
সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. কৌশিক মজুমদার বলেন হৃদরোগ এবং স্টোক বিশে^র এক নম্বর ঘাতক ব্যাধি। বিশে^ প্রতি বছর ১ কোটি ৭৯ লক্ষ মানুষ হৃদরোগ ও স্টোকে আক্রান্ত হয়ে অকাল মৃত্যুবরণ করে। তিনি বলেন বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৮ সালে প্রকাশিত তথ্য মতে বাংলাদেশে মোট মৃত্যুর ৬৭ ভাগ হয়ে থাকে অসংক্রামক রোগের কারণে যার মধ্যে ৩০ ভাগ মৃত্যুই হৃদরোগ ও স্টোকের কারণে হয়ে থাকে।
জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. ফারজানা তাজিন বলেন সপ্তাহে কমপক্ষে ৫ দিন ৩০ মিনিট করে হাঁটুন বা হালকা ব্যায়াম করুন। তা না হলেও সপ্তাহে অন্তত ৭৫ মিনিট শারীরিক পরিশ্রম করুন। তিনি বলেন হার্ট ভালো রাখার সব চেয়ে ভালো উপায় ধূমপান বা তামাক সেবন থেকে দূরে থাকা। ধূমপান ছাড়া ২ বছরের মধ্যেই হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়।
জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আব্দুল্লাহ ইবনে আমিন চৌধুরী বলেন হৃদরোগ থেকে বাঁচতে হলে মিষ্টি ও মিষ্টি জাতীয় খাবার চকলেট না খেয়ে আম, জাম, কলা, আমড়া, পেয়ারা, পেপে বা অন্যান্য দেশীয় সহজলভ্য মৌসমী ফলমূল খান। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ ফলমূল ও শাকসবজি খান। তিনি আরো বলেন রক্তে কোলেস্টেরলের আধিক্যের কারণে পৃথিবীতে প্রতি বছর প্রায় ৪০ লক্ষ মানুষ মৃত্যুবরণ করে থাকে। তাই রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা পরিমাপ করুন। এর মাধ্যমে আপনার হৃদরোগের ঝুঁকি থাকলে তা জানতে পারবেন এবং হার্টকে সুস্থ রাখতে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে পারবেন এবং হুট করে মানুষ যদি শারীরিক সমস্যায় পতিত হয় সে ক্ষেত্রে তার আর্থিক একটি বাজেট তৈরী রাখা অতিব জরুরী।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডশন সিলেট এর সহ-সভাপতি অধ্যাপক ডা. সুধাংশু রঞ্জন দে, কার্যকরী কমিটির সদস্য ডা. এস এম হাবিবুল্লাহ সেলিম, মাসুদ আহমদ চৌধুরী, দৈনিক সিলেটের ডাকের বার্তা সম্পাদক সমরেন্দ্র বিশ^াস সমর, কিডনী ফাউন্ডেশনের ট্রেজারার জুবায়ের আহমদ চৌধুরী ও এসিআই এর আঞ্চলিক সেলস ম্যানেজার মোঃ সাইফুল আলম। বিজ্ঞপ্তি