হুমায়ুন কবির লিটন
আজ বিশ্ব পর্যটন দিবস (ডড়ৎষফ ঞড়ঁৎরংস উধু)।এবার করোনা মহামারিতেও সীমিত আকারে পালক হচ্ছে দিবসটি।সারা বিশ্বে বর্তমানে চলমান করোনা মহামারিতে অন্যতম ক্ষতিগ্রস্ত সেক্টর হচ্ছে পর্যটন। সরকারি বিধিনিষেধ করোনা ঝুঁকি থাকায় অন্যান্য বছরের তুলনা এবার এই দিবসটি সাদামাটা করে পালন করা হচ্ছে। নেই কোন বিশেষ আয়োজন।
প্রতি বছর ২৭ সেপ্টেম্বর তারিখে বিশ্বব্যাপী পালিত হয়ে থাকে বিশ্ব পর্যটন দিবস। জাতিসংঘের অধীনস্থ বিশ্ব পর্যটন সংস্থার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ১৯৮০ সাল থেকে সকল সদস্য দেশে এটি পালিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশেও এই দিনটি গুরুত্ব সহকারে পালন করা হয়। এবারের পর্যটন দিবসে শ্লোগান হচ্ছে “ভবিষ্যতের উন্নয়নে কাজের সুযোগ পর্যটনে”। মূলত সরকার পর্যটন শিল্পে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে চাচ্ছে। এরই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে পর্যটন বিষয় সংস্থাগুলো।
করোনা মহামারির কারণে বিগত বছরের তুলনায় এই বছর তেমন কোন আয়োজন না থাকলেও দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অধিনস্ত বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড ও বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন দিবসটি উপলক্ষে ঢাকা সহ সারাদেশে জুম মিটিং এর আয়োজন করেছে।
সারা দেশের ন্যায় সিলেটেও জেলা প্রশাসনের আয়োজনে জুম মিটিং এ অংশ নিবে, সিলেটের পর্যটন নির্ভর বিভিন্ন উপজেলা প্রশাসন, বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন সিলেট ইউনিট ও সিলেটের পর্যটন বিষয় বিভিন্ন সংগঠন।
এছাড়াও ভ্রমণ পিপাসুদের পর্যটন বিষয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সিলেট ট্যুরিজম ক্লাব এই দিনে নগরীর জিতুমিয়ার পয়েন্টে পর্যটন সচেতনতা বিষয় লিফলেট এবং বই বিতরণ করবে।
বাংলাদেশের জন্য এভারের বিশ্ব পর্যটন দিবস ২০২০ অনেক তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে বিদেশী পর্যটন আসা বন্ধ রয়েছে। এটা কবে চালু হবে বলা যাচ্ছে না। অভ্যন্তরীণ পর্যটন সীমিত আকারে শুরু হলেও এতে মানুষের আগ্রহ অনেক কম। এ অবস্থায় এই শিল্পে জড়িতরা বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বিশ্ব পর্যটন দিবসটির প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও পর্যটন কেন্দ্রের সাথে সেতুবন্ধন গড়ে তোলা। এছাডাও পর্যটনের ভূমিকা সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধিসহ সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক উপযোগিতাকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেয়া এ দিবসের অন্যতম লক্ষ্য।
২য় বিশ্বযুদ্ধের পরিসমাপ্তির পর বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের সম্প্রসারণের ফলশ্রুতিতে বিশ্বব্যাপী পর্যটন ব্যবসার প্রসার ঘটে। এ অবস্থায় পর্যটনের সাথে সংশি¬ষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তিবর্গ ও ভোক্তা শ্রেণীর সমন্বয গড়ে ওঠে আন্তর্জাতিক ভ্রমণবিষয়ক সংস্থা বা আইইউওটিও। এ সংস্থাটি বিশ্বব্যাপী পর্যটন ব্যবস্থার উন্নয়ন ও প্রসারের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও রাজস্ব আয়ে বিশেষ অবদান রাখার প্রেক্ষিতে পরবর্তীকালে জাতিসংঘের একটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান রূপে যুক্ত হয়। সংস্থাটির কার্যক্রম আরো জোরদার করার লক্ষ্যে জাতিসংঘের বাৎসরিক সম্মেলনের সময় এই সংস্থার সদস্যভুক্ত দেশগুলো বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিশদ আলোচনা-পর্যালোচনার মাধ্যমে করণীয় ঠিক করার মাধ্যমে বিশেষ অবদান রেখে যাচ্ছিল।
বিশ্ব পর্যটন সংস্থা কর্তৃক নির্ধারিত বিশ্বের ৬টি পর্যটন অঞ্চল
১৯৭০ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর তারিখে সংস্থাটির বার্ষিক সম্মেলনে এর নাম, লক্ষ্য, উদ্দেশ্য পুনঃমূল্যায়ন ও নির্ধারণ করা হয় এবং তখন থেকে এটি “বিশ্ব পর্যটন সংস্থা” নামে চিহ্নিত করার বিষয়ে সদস্যদের মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়, যার কার্যক্রম নতুন নামে ১৯৭৪ সাল থেকে শুরু হয়। ১৯৮০ সালের বার্ষিক সম্মেলনে, এই সংস্থার গঠনের দিবসে অর্থাৎ ২৭ সেপ্টেম্বর তারিখে বিশ্বব্যাপী পর্যটন দিবস পালনের বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে ১৯৯৭ সালে তুরস্কে অনুষ্ঠিত বার্ষিক সম্মেলনে এতে একটি স্বাগতিক দেশ নির্বাচনের মাধ্যমে বিশ্ব পর্যটন দিবস পালনের কার্যক্রমে আরো গতিশীলতা আনয়ণের পক্ষে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়।
বিশ্ব পর্যটন সংস্থার সদর দফতর স্পেনের মাদ্রিদে অবস্থিত। সংস্থায় দাপ্তরিক কাজের সুবিধার্থে আরবী, ইংরেজি, ফরাসি, রুশ এবং স্প্যানিশ ভাষা ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বিশ্ব পর্যটন সংস্থায় ১৫৫টি দেশ, ৭টি অঙ্গরাজ্য এবং চার শতাধিক সহযোগী সদস্য রয়েছে। সহযোগী সদস্যদের মধ্যে রয়েছে – বেসরকারী প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পর্যটন সংস্থা এবং স্থানীয় পর্যটন কর্তৃপক্ষ।
সচিবালয়ে নেতৃত্বে রয়েছেন একজন মহাসচিব। জর্দানের নাগরিক তালেব রিফাই ২০১০ সাল থেকে বর্তমান মহাসচিবের দাযত্বি পালন করছেন। তাঁকে সহযোগিতা করছেন ১১০ জন পূর্ণকালীন কর্মকর্তা-কর্মচারী। এছাড়াও, তাঁর অধীনস্থ হিসেবে রয়েছেন একজন উপ-মহাসচিব। কর্মকর্তাগণ সংস্থা সদস্যভূক্ত দেশগুলোর চাহিদা মোতাবেক পর্যটন বিষয়ক রূপরেখা ও কার্যপদ্ধতি প্রণয়ন করে থাকেন। সহযোগী সদস্যগণ মাদ্রিদভিত্তিক সংস্থাটির পূর্ণকালীন নির্বাহী পরিচালকদের সহায়তা লাভ করেন। সচিবালয় থেকে জাপান সরকারের অর্থায়ণে ওসাকায় অবস্থিত আঞ্চলিক সহায়তা কেন্দ্র সরাসরি নিয়ন্ত্রিত হয়।
সীমিত আকারে হলেও এবারের “বিশ্ব পর্যটন দিবসে” বিশ্ব পর্যটন সংস্থা পাশাপাশি বিশ্বের অনেক দেশ তাদের পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে নানা কর্মসূচী পালন করবে।
বাংলাদেশ পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনার এক জনপদ। করোনাকালে ব্যপক ক্ষতির সম্মুখিন এই শিল্প। তাই এবারের বিশ্ব পর্যটন দিবসে বাংলাদেশের উচিৎ কিভাবে এই শিল্পকে বাঁচানো যায় সেই দিকে লক্ষ্য রাখা। মহামারির পর কি করে বেশী বেশী বিদেশী পর্যটক বাড়ানো যায় সেই দিকে নজর দেওয়া এবং দেশের বাহিরে প্রচার বাড়ানো। পর্যটন দিবসে অনেক বেশী কাজ করার চেয়ে কয়েকটি মৌলিক বিষয়ে নজর দিলেই একদিন বাংলাদেশ হয়ে উঠবে এ অঞ্চলের একটি অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র। এগুলো হলো ভ্রমণের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা, সড়ক উন্নয়ন এবং বিদেশীদের জন্য বাংলাদেশ ভ্রমণ অনেক বেশি সহজ করে তোলা। আমাদের দেশীয় সাংস্কৃতিক পুরাকীর্তি ও সম্পদকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিয়ে আসা। নানা মাধ্যমে বাংলাদেশকে প্রচারণায় নজর দেয়া। ট্যুর অপারেটর ও দক্ষ ট্যুর গাইড় তৈরী করা এবং ট্যুরিজম বিষয়ক ক্লাব বা সংগঠকে আরো বেশী সহায়তা করা। তা হলেই বাংলাদেশে বাড়বে পর্যটক সংখ্যা। তবেই সফল হবে এবারের বিশ্ব পর্যটন দিবস সফল হবে পর্যটন বর্ষ ২০২০। ঘুরে দাঁড়াবে বাংলাদেশের পর্যটন।
লেখক: ট্যুর অপারেটর -পর্যটন সংগঠক ও ট্যুর গাইড, সভাপতি: সিলেট ট্যুরিজম ক্লাব।