কাজিরবাজার ডেস্ক :
কক্সবাজারের বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ‘ধারণার চেয়ে কম’ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন জন্স হপকিন্স বিশ^বিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা। উখিয়ার কুতুপালং শরনার্থী শিবির নিয়ে তারা দুশ্চিন্তার কথা জানিয়েছেন।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, উত্তরের চেয়ে তাদের মডেল এখন বেশি প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। সবচেয়ে বেশি চিন্তা কক্সবাজারের কুতুপালং ক্যাম্প নিয়ে। পাঁচ বর্গমাইল এলাকার এই ক্যাম্পে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা অন্তত ৬ লাখের মতো রোহিঙ্গা আশ্রিত। এই এলাকাটি এই গ্রহের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ জায়গা।
জন্স হপকিন্স বিশ^বিদ্যালয়ের সংবাদবিষয়ক ওয়েবসাইটে বুধবার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ওপর করোনা পরিস্থিতি নিয়ে একটি প্রতিবেদনে একথা বলা হয়েছে। গত মার্চে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্তের পরই জন্স হপকিন্স সেন্টারের বিজ্ঞানীরা কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে নিয়ে ভাবতে শুরু করেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য গেল মার্চ থেকে গবেষণা করছেন ব্লুমবার্গ স্কুল অব পাবলিক হেলথের বিজ্ঞানী পল স্পিগেল এবং ইন্টারন্যাশনাল হেলথ অ্যান্ড এপিডেমিওলজির শন ট্রুইলোভ।
ট্রুইলোভ তার একটি গবেষণায় দেখিয়েছেন, বাংলাদেশের অন্য অঞ্চলের চেয়ে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ডিপথেরিয়া এবং অন্য ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন ৬০ শতাংশ বেশি। যে কারণে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যেকোনো সংক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে বলে তিনি সতর্ক করেছিলেন।
তবে এখনও ঠিক কী কারণে ক্যাম্পে এত ‘কম’ মানুষ আক্রান্ত হলেন, সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে বিজ্ঞানীরা আরও গবেষণা করতে চান। পৃথিবীর অন্য কোনো অঞ্চলে (এত কম আক্রান্ত হয়েছে) এমন আর কোনও জায়গা রয়েছে কি-না, সেটি জানতেও তারা নতুন মডেল তৈরির কথা জানিয়েছেন। তবে স্পিগেল প্রাথমিকভাবে মনে করছেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তরুণদের সংখ্যা বেশি। তাই হয়তো তাদের সমস্যাও কম।
জন্স হপকিন্সের প্রতিবেদনে ট্রুইলোভকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, শুরু থেকেই বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে আসছেন যে আন্তর্জাতিক মহলের সাহায্য ছাড়া ক্যাম্পে থাকা রোহিঙ্গাদের বাঁচানো অসম্ভব।’
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ঝুঁকি সম্পর্কে ধারণা পেতে ক্যাম্পের ডেমোগ্রাফিক্স অনুসারে বিজ্ঞানীদের তৈরি করা সংক্রমণের একটা মডেলে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভয়াবহ পরিস্থিতি সম্পর্কে ‘অনেকাংশে নিশ্চয়তা’ দেয়া হয়। বলা হয়, স্থানীয় চিকিৎসা পদ্ধতির সহায়তা না পেলে ক্যাম্পের পরিস্থিতি সামাল দেয়া কষ্টকর হবে।
হপকিন্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিজ্ঞানী পল স্পিগেল এই ফলাফল জাতিসংঘে দেয়ার পর সংস্থাটি নড়েচড়ে বসে। আর বাংলাদেশের কর্মকর্তারাও বিষয়টি অনুধাবন করে ব্যবস্থা নিতে শুরু করেন।
পল স্পিগেল বলেন, ‘বাংলাদেশ আইসোলেশন সেন্টার তৈরি করে। কিছু পিসিআর মেশিন আনে। একইসঙ্গে আইসিইউ বেডও বাড়ানো হয়। তবে বাজে অবস্থা এখনো আসেনি। যদি সেটি আসে, তাহলে আমি বলব, ভালোই বিপদ বাড়বে।’