পেঁয়াজ কেনার হিড়িক নেই

37

কাজিরবাজার ডেস্ক :
পেঁয়াজ নিয়ে আতঙ্ক কেটে যাওয়ায় ঢাকার নিত্যপণ্যের বাজার থেকে মসলা জাতীয় এই পণ্যটি কেনার হিড়িক নেই ভোক্তাদের। দাম বাড়ার খবরে যারা বেশি করে কিনে ঘরে মওজুদ করেছিলেন তারা এখন পেঁয়াজ পচে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন। গত তিন দিন যাবত আগের বেড়ে যাওয়া দামে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। নতুন করে দাম আর বাড়েনি। তবে স্বল্প আয়ের মানুষ টিসিবি ট্রাক থেকে পেঁয়াজ সংগ্রহ করছেন আগের মতোই লাইন ধরে। কারণ খুচরা বাজারের সঙ্গে টিসিবির পেঁয়াজের দামের পার্থক্য বাজারভেদে ৭০-৮০ টাকা। আগামী সপ্তাহ নাগাদ রাজধানীতে নতুন আমদানি করা পেঁয়াজ পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আসা শুরু হয়েছে। এছাড়া তুরস্ক, মিসর এবং চীনের পেঁয়াজ এখন বাংলাদেশের পথে। দেশের শীর্ষ স্থানীয় ভোগ্যপণ্য বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান এস আলম ও মেঘনা গ্রুপ দ্রুত পেঁয়াজ আমদানির প্রস্তুতি নিয়েছে। সরকারী-বেসরকারীখাত আমদানি কার্যক্রম গ্রহণ করায় বাজারে পেঁয়াজ নিয়ে আর আতঙ্ক নেই, উদ্বেগ কমেছে ভোক্তাদের।
জানা গেছে, প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত যেকোন মুহূর্তে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের আদেশ প্রত্যাহার করে নিতে পারে। এ লক্ষ্যে দু’দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে আলাপ-আলোচনা শুরু হয়েছে। রফতানি বন্ধ করায় ভারতের স্থানীয় কৃষকরা এখন ন্যায্যদাম থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। পেঁয়াজ পচে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন ভারতীয় রফতানিকারকরা। এছাড়া সাত দেশ থেকে যেভাবে পেঁয়াজ আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে বাংলাদেশ, তাতে ওই পেঁয়াজ দেশে এসে গেলে ভারতীয় পেঁয়াজের চাহিদা কমে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। গত বছর রফতানি বন্ধের পর কম দামেও তাদের আমদানিকৃত অতিরিক্ত পেঁয়াজ বাংলাদেশে রফতানি করা সম্ভব হয়নি (চাহিদার কারণে ভারত আমদানি করেছিল)। কারণ ওই সময় নতুন পেঁয়াজ উঠা শুরু হয় বাংলাদেশে। উপরন্তু কৃষকদের ন্যায্যদাম নিশ্চিত করতে চলতি বাজেটে আমদানির ওপর ৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এখন পেঁয়াজ আমদানি সহজ করতে শুল্ক প্রত্যাহার করা হচ্ছে।
এদিকে, পেঁয়াজের চলমান সঙ্কট নিরসনে এস আলম গ্রুপ মিসর ও তুরস্ক থেকে পেঁয়াজ আমদানি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এছাড়া মেঘনা গ্রুপও পেঁয়াজ আমদানি করবে। আগামী সপ্তাহে আমদানি ঋণপত্র খোলা হবে। বাল্ক ক্যারিয়ার জাহাজযোগে এ চালানের পেঁয়াজ আসবে চট্টগ্রাম বন্দরে। ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের পর পাইকারি ও খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়তে শুরু করে। মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানি হলেও তা চাহিদার তুলনায় কম। তবে পেঁয়াজের দাম বাড়ায় ব্যবসায়ীরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানির উদ্যোগ গ্রহণ করে। এ অবস্থায় সমুদ্রপথে পেঁয়াজ আমদানি করার সিদ্ধান্ত নেয় এস আলম গ্রুপ। এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, দেশের শীর্ষস্থানীয় ভোগ্যপণ্যের ব্যবসায়ীদের দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি করানো হবে। ব্যবসায়িক উদ্দেশে বা লাভের জন্য এ পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে না। এটি সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে ব্যবসায়ীরা করবেন। এর আগে ২০১৬ সালে এবং ২০১৯ সালে বড় শিল্প গ্রুপ পেঁয়াজ আমদানি করে বাজার স্থিতিশীল রাখতে ভূমিকা রেখেছিল। এসব পেঁয়াজের বেশিরভাগ সরকার কিনে নেবে। তবে টিসিবির বাইরে অন্যমাধ্যমে এসব পেঁয়াজ বিক্রি করা হতে পারে। ইতোমধ্যে অনলাইনে পেঁয়াজ বিক্রির ঘোষণা দিয়েছে টিসিবি। শীঘ্রই অনলাইনে টিসিবি বিক্রি কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে।
পেঁয়াজ কেনার হিড়িক নেই : শুক্রবার বাজার থেকে চাহিদার অতিরিক্ত পেঁয়াজ কিনেনি ভোক্তারা। সরেজমিনে ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, বাজারে দেশী পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়েছে। তবে বিক্রি হচ্ছে আগের বেড়ে যাওয়া দামে। খুচরা বাজারে আমদানিকৃত ভারতীয় বড় সাইজের পেঁয়াজ ৭০-৮০ এবং দেশী জাতের পেঁয়াজ ১০০-১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারভেদে দরদামের কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। পেঁয়াজ ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান বলেন, দেশী পেঁয়াজের সরবরাহ ভাল। পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের কোন সঙ্কট নেই। এছাড়া ভোক্তারাও পাল্লায় পাল্লায় পেঁয়াজ কিনছে না। তিনি বলেন, তিনদিন আগে অনেকে আতঙ্কিত হয়ে ২০-২৫ কেজি পর্যন্ত পেঁয়াজ কিনে নিয়েছেন। অথচ এটার প্রয়োজন ছিল না। পেঁয়াজ কিনছিলেন নবগ্রামের বাসিন্দা আসলাম আলী। তিনি বলেন, বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আসছে। তাই বেশি করে কেনার প্রয়োজন নেই। তিনদিন আগে যারা পাল্লায় পাল্লায় কিনছেন এখন তাদের পেঁয়াজ পচবে। কারণ পেঁয়াজ পচনশীল পণ্য। এটি ঘরে বেশিদিন মজুদ করে রাখা যায় না।
এদিকে, ভারতীয় অংশের বিভিন্ন স্থলবন্দরে শত শত ট্রাক পেঁয়াজ নিয়ে অপেক্ষা করলেও বাংলাদেশে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না বলে জানা গেছে। ট্রাকের গেটপাস থাকলেও এখন আর এপারে আসার অনুমতি দিচ্ছে না ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। এছাড়া বনগাঁয় আরও ৩৯টি ট্রাক এবং রানাঘাট রেলস্টেশনে তিনটি রেল ওয়াগন পেঁয়াজ নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে। অন্তত এক সপ্তাহ আগে রেলের এই পেঁয়াজগুলো ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে রানাঘাট স্টেশনে আনা হয়।