ওসমানীনগর থেকে সংবাদদাতা :
ওসমানীনগর উপজেলা কার্যালয়ের পার্শ¦বর্তী ইলাশপুর গ্রামের আমেরিক প্রবাসী রণজিৎ ভট্টাচার্য্যরে বাড়িতে ভাড়া থাকেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অফিসের নাজির প্রভাংশু শেখর দাস। প্রভাব খাটিয়ে ওই প্রবাসীর বাড়িতে সরকারি টিউবওয়েল স্থাপন করে দেন তিনি। শুধু তাই নয়, সরকারি সোলার প্যানেলও স্থাপন করেছেন ওই বাড়িতে। তবে এগুলো কিসের বিনিময়ে করেছেন জানা না গেলও ওই বাড়ির পার্শ্ববর্তী এক ধর্ণাঢ্য ব্যক্তির বাড়িতে ১৫ হাজার টাকার বিনিময়ে সম্প্রতি একটি সরকারি টিউবওয়েল স্থাপন করে দিয়েছেন ওই প্রভাংশু শেখর। অথচ একটি টিউবওয়েল পাওয়ার জন্য এলাকার গরীব জনগোষ্ঠি জনপ্রতিনিধিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে হতদরিদ্রদের পাশ কাটিয়ে সরকারি টিউবওয়েল অনৈতিক সুবিধাভোগের মাধ্যমে বড়লোকের বাড়িতে গেলেও বিষয়টি যেন দেখার কেউ নেই।
জানা যায়, উপজেলা নন-গেজেটেড এমপ্লয়িজ ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক প্রভাংশু শেখর দাস উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের নাজির হলেও বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে গড়ে তুলেছেন শক্তিশালী সিন্ডিকেট। এ সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে উপজেলা পর্যায়ের বিভিন্ন উন্নয়ণ কর্মকান্ড।
একাধিক সূত্রে জানা যায়, হতদরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিতদের নিরাপদ পানি নিশ্চিত করতে উপজেলা পর্যায়ে এডিবি, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল, সিলেট জেলা পরিষদ ও এলজিএসপি’র মাধ্যমে সরকারি টিউবওয়েল স্থাপন বাস্তবায়ন করা হয়। জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা। কিন্তু তাদের পাশ কাটিয়ে অণৈতিক সুবিধা নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রভাব খাটিয়ে টিউবওয়েল স্থাপনের কাজ বাস্তবায়ন করছেন। দীর্ঘদিন একই উপজেলায় কর্মরত থাকার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তারা গড়ে তুলেছেন শক্তিশালী সিন্ডিকেট। উপজেলার সর্বত্র প্রভাব বিস্তারকারী এ সিণ্ডিকেটের মূলে রয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের নাজির ও উপজেলা নন-গেজেটেড এমপ্লয়িজ ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক প্রভাংশু শেখর দাস।
অভিযোগ উঠেছে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের নাজির প্রভাংশু শেখর দাস ও প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে কর্মরত একাধিক কর্মকতা-কর্মচারী যোগসাজশে সরকারি সৌর বিদ্যুৎ ও টিউবওয়েল নিয়ে শুরু হয়েছে বাণিজ্য। এতে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে উপজেলার জৈনেক্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, উপজেলার ইলাশপুর গ্রামের বাসিন্দা শিক্ষক তপন কুমার দেব। গত ৫ মাস আগে প্রভাংশু শেখর দাসের মাধ্যমে টাকার বিনিময়ে তার বাড়িতে স্থাপন করেছেন সরকারি ডিপ টিউবওয়েল ও ঘরে লাগিয়েছেন সৌর বিদ্যুৎ। গুপ্তপাড়া গ্রামের শিক্ষক শেখর দেব অনুরূপ ভাবে প্রভাংশু শেখর দাসের সাথে সখ্যতা গড়ে তার বাড়িতেও নিয়ে গেছেন সরকারি টিউবওয়েল। যদিও সরকারি এসব সুবিধা ভোগ করার মতো অসচ্ছল তারা নন।
এ ব্যাপারে ওসমানীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের নাজির প্রভাংশু শেখর দাস বলেন, এসব আমার জানা নেই। এটা আমার ডিপার্টমেন্টও নয়।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ওসমানীনগরে অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. লায়েছ মিয়া তালকুদার বলেন, উপজেলা পর্যায়ে এডিবি, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল, জেলা পরিষদ ও এলজিএসপি’র মাধ্যমে টিউবওয়েল বাস্তবায়িত হয়। আমরা শুধু জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতাধীন টিউবওয়েলগুলো জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে অত্যন্ত স্বচ্ছতার ভিত্তিতে বাস্তবায়িত করি। আমার জানামতে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের বরাদ্দকৃত টিউবওয়েল স্থাপনে কোন অনিয়ম হয়নি। তারপরও খোঁজ নিয়ে দেখবো।
সার্বিক বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছাঃ তাহমিনা আক্তার বলেন,সরকারী টিউবওয়েল জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতায়। সেগুলো জনপ্রতিনিধিরা বিতরণ করেন। সেখানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের কারো হাত নেই।