লোভাছড়া কোয়ারী থেকে নৌপথে পাথর পরিবহনে প্রশাসনের বাধা, প্রতিবাদে মাঠে নেমেছেন পাথর ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা

8
লোভাছড়া কোয়ারী থেকে পাথর পরিবহনে বাধা প্রদান করায় অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচি চলাকালে বক্তব্য রাখছেন আওয়ামী লীগ নেতা জামাল উদ্দিন।

কানাইঘাট থেকে সংবাদদাতা :
সিলেট পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক কানাইঘাট লোভাছড়া পাথর কোয়ারী থেকে গত শুকনো মৌসুমে উত্তোলনকৃত ১ কোটি ৫ লক্ষ ঘনফুট পাথর জব্দ নিয়ে অচলাবস্থা সৃষ্টি হওয়ায় পাথর ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা মারমুখী হয়ে উঠেছেন। প্রশাসনের বাধার মুখে নৌপথে পাথর পরিবহনে বিঘ্ন সৃষ্টি হওয়ায় গত কয়েকদিন থেকে পাথর ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা প্রশাসনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনে মাসখানেক থেকে নানা ধরনের কর্মসূচী ও নৌপথে পাথর পরিবহনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পাথর ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ২০/২৫ দিন পূর্বে কয়েকজন পাথর ব্যবসায়ী পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক তাদের পাথর জব্দ করায় চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রীট মামলা করলে উচ্চ আদালত কোয়ারী থেকে পাথর পরিবহনের অনুমতি দিয়েছেন। কিন্তু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ও সিলেটের জেলা প্রশাসক, পুলিশ প্রশাসন, আদালতের নির্দেশ না মেনে তাদের পাথর পরিবহনে বাধা দিয়ে আসছেন। যার কারণে তাদের উত্তোলনকৃত পাথর পরিবহন ও বিক্রি করতে না পেরে বাধ্য হয়ে প্রশাসনের এমন হটকারী সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছেন। গত বুধবার কোয়ারীতে টাস্কফোর্সের অভিযানে অর্ধশতাধিক পাথর বোঝাই নৌকা-বলগেটের ইঞ্জিনের ক্ষতিসাধন করা হলে পাথর ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা টাস্কফোর্সের অভিযানের বিরোধিতা করেন। পরে তারা উপজেলা পরিষদের সামনের সড়কে জড়ো হয়ে মানববন্ধন করেন এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বারিউল করিম খানের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ এনে তার অপসারণ দাবী করে লাগাতার উপজেলা প্রশাসন চত্ত্বরে অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচী ঘোষণা করেন। এছাড়া ব্যবসায়ীরা কোয়ারীর লোভা ও সুরমা নদীর বিভিন্ন এলাকায় থানা পুলিশের বাধায় আটকে পড়া প্রায় দুই শতাধিক পাথর বোঝাই বাহন নৌপথে ছেড়ে দেয়ার সময় থানা পুলিশ সেইগুলো বুধবার সন্ধ্যার দিকে সুরমা নদীর মুশাহিদ সেতুর পাশের্^ আটক করে রাখলে কয়েক’শ পাথর ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা নৌপথে পুলিশের সাথে তর্কবিতর্কে জড়িয়ে পড়ে বিক্ষোভ করেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচীর অংশ হিসেবে পাথর ব্যবসায়ী ও শ্রমিক ঐক্য পরিষদের উদ্যোগে বেলা ১টার দিকে উপজেলা প্রশাসন চত্ত্বরে প্রায় দুই ঘন্টা অবস্থান করে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সভা করেন পাথর ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা। তখন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মুমিন চৌধুরী ও নির্বাহী কর্মকর্তা বারিউল করিম খানের উপস্থিতিতে, উপজেলা হলরুমে মাসিক সমন্বয় কমিটির সভা চলছিল। উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পাথর ব্যবসায়ী আব্দুল হেকিম শামীমের সভাপতিত্বে অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচীকালে পাথর ব্যবসায়ীরা তাদের বক্তব্যে বলেন, উচ্চ আদালতের অনুমতি থাকার পরও নির্বাহী কর্মকর্তা ও সিলেটের প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তা তাদের বৈধ পাথর পরিবহনে মাস খানেক দিন থেকে বাঁধা দিয়ে আসছেন। তারা বার বার প্রশাসনের স্মরণাপন্ন হলেও কোন ধরনের প্রতিকার পাচ্ছেন না। উল্টো তাদের পাথর বোঝাই বাহন ভাংচুর করা হচ্ছে, নৌপথে তাদের পাথর বোঝাই বাহন আটক করে হয়রানী করা হচ্ছে। এতে করে তারা বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। সমস্ত পুঁজি খাটিয়ে পাথর খরিদ করে সেই পাথর এখন পরিবেশ অধিদপ্তর অবৈধভাবে জব্দ করে রেখেছে। এ সময় পাথর ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা বলেন, কী দোষ করেছি আমরা? আজ সমন্বয় কমিটির সভা চলছে, আমরা অবস্থান কর্মসূচী পালন করছি যেন প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা আমাদের দুঃখ, কষ্ট বুঝেন এবং পাথর পরিবহনের সুযোগ করে দেন কিন্তু প্রশাসনের কর্মকর্তা কিংবা জনপ্রতিনিধিরা আমাদের একটু শান্তনাও দেননি। আগামী দুই দিনের মধ্যে তাদের পাথর পরিবহনের সুযোগ করে না দেওয়া হলে জৈন্তিয়া ১৭ পরগনার মুরব্বীয়ানদের সমন্বয়ে সকল ব্যবসায়ী ও শ্রমিক সংগঠন একজোট হয়ে প্রশাসনের এমন হটকারী সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ, মানববন্ধন, প্রতিবাদ সমাবেশ, অবস্থান কর্মসূচী সহ যে কোন ধরনের কঠোর কর্মসূচী গ্রহণ করতে বাধ্য হবেন। অবস্থান কর্মসূচীকালে বক্তব্য রাখেন, উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি জামাল উদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাজমুল ইসলাম হারুন, জেলা পরিষদ সদস্য আলমাছ উদ্দিন, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহাব উদ্দিন, যুবলীগের আহ্বায়ক পাথর ব্যবসায়ী এনামুল হক, পৌর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক পাথর ব্যবসায়ী খাজা শামীম আহমদ শাহীন সহ আরো অনেকে।