মরণ ফাঁদ মহাসড়কের ওসমানীনগর অংশ, ১৩ দিনে ঝরলো ১২ প্রাণ

14

শিপন আহমদ ওসমানীনগর থেকে :
সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের ওসমানীনগর অংশে সড়ক দুর্ঘটনায় লাশের মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে। সড়কেই স্বপ্ন বিলিন হচ্ছে মানুষের। অকালে ঝরে পড়ছে তাজা প্রাণগুলো। দুর্ঘটনার শিকার হয়ে অনেকেই চির দিনের জন্য পঙ্গুত্ব বরণ করে শয্যাশায়ী হয়ে জীবন পার করছেন। সম্প্রতি ক্রমেই সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষজন উদ্বিগ্ন রয়েছেন। গাড়ী চলাচলের গতিবেগের নির্দেশনার আইন থাকলেও মহাসড়কের ওসমানীনগর অংশে তা মানা হচ্ছে না। তাই অনতিবিলম্বে মহাসড়ককে চার লেনে উন্নিতকরণের কাজ দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি উঠেছে।
এদিকে, মহাসড়কে ত্র“টিপূর্ণ কাগজ নিয়েও দূরপাল্লার বিলাসবহুল যানবাহনগুলো চলাচল করছে। এসব গাড়ির চালকদের অধিকাংশই লাইসেন্সধারী নয় বলে মনে করছেন অনেকেই। অনেক চালকরা আবার ছোট গাড়ীর লাইসেন্স দিয়ে বড় ও দূরপাল্লার গাড়ীগুলো চালিয়ে আসছেন বলেও জানা গেছে। দুর্ঘটনার পর দূরপাল্লার গাড়ীর অভিযুক্ত চালক ও মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হলেও আইনের ফাঁকে তারা অনায়াসেই পার পেয়ে যাচ্ছেন। মূলত মহাসড়কে তিন চাকার অটোরিক্সার চলাচল, ভাঙ্গা সড়কে দীর্ঘদিন থেকে কোন সংস্কার কাজ না করায় বিষয়টি নিয়ে জনমনে ক্ষোভের শেষ নেই।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের ওসমানীনগর অংশ যেন মৃত্যুকূপে পরিণত। কারোনা মাহামারির কারণে লকডাউন থাকায় দূরপাল্লার যান চলাচল বন্ধ থাকায় কিছুটা দুর্ঘটনা কমে আসলেও যান চলাচল স্বাভাবিক হওয়ায় ওসমানীনগরে সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। মহাসড়কের ওসমানীনগরে অংশে বড় বড় সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যাও বেশি। সব মিলিয়ে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের ওসমানীনগর অংশ যেন মরণ ফাঁদে পরিণত। মাত্র ১৩ দিনের ব্যবধানে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের ওসমানীনগর অংশে ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটলেও বড় দুই দুর্ঘটনায় নারী ও শিশুসহ নিহত হয়েছেন ১২ জন। দুই পরিবার একসাথে ৯ জনকে হারিয়ে দুটি পরিবারই যেন নিঃস্ব। এছাড়া আরো তিনটি পরিবারও দিশেহারা।
সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮ টার দিকে উপজেলার ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা সিলেটগামী যাত্রীবাহী মামুন পরিবহন বাস (ঢাকা মেট্রা-ব ১৪- ৯৮৪৮) ও শেরপুরগামী সিএনজি চালিত অটোরিক্সা (মৌলভীবাজার -থ ১১-৩৬৯১) সিলেট ঢাকা মহাসড়কের গজিয়া গ্রীণ বার্ড কিন্ডার গার্টেন এর সামনে আসলে যাত্রীবাহী বাস ও সিএনজি চালিত অটোরিক্সাকে চাপা দিলে সিএনজি অটোরিক্সা ধুমড়ে মুছড়ে যায়। এ সময় একই পরিবারের ৪ জন সহ ৬ নিহত হয়েছেন। মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন আরও ২ জন। এর আগে গত ৩১ জুলাই সকালে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের উপজেলার বরায়া চাঁনপুর নামক স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের ৫ জনসহ ৬ জন নিহত হন।
ওসমানীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ শ্যামল বণিক বলেন, মহাসড়কের দায়িত্ব হাইওয়ে পুলিশের উপর ন্যস্ত। তারপরও মানবিক কারণে ওসমানীনগর থানার পুলিশের পক্ষ থেকে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সবার মধ্যে সচেতনতা তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
শেরপুর হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ এরশাদুল হক ভূঁইয়া বলেন, হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। দুর্ঘটনার কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আঁকা বাঁকা রাস্তা ও সার্ভিস লেন না থাকায় দুর্ঘটনা ঘটছে বলে প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়া যানবাহনে অভার স্প্রিডের মামলা না দেয়ায় চালকরাও বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালাচ্ছেন। আমরা তাদের সচেতন করতে কাজ করে যাচ্ছি।