স্টাফ রিপোর্টার
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজার তৃতীয় দিনে আজ শুক্রবার মহাঅষ্টমী ও কুমারী পূজা। পূজামÐপগুলোতে পূজা-অর্চণার মাধ্যমে উদযাপিত হবে মহাঅষ্টমী। হবে সন্ধিপূজাও। দেবীর মহাষ্টমী কল্পারম্ভ ও বিহিত পূজা শুরু হবে। তবে অষ্টমীর মূল আকর্ষণ কুমারী পূজা। কুমারী পূজায় একজন বালিকার মধ্যে শুদ্ধ নারীর রূপ চিন্তা করে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা দেবী জ্ঞানে তাকে পূজা করেন। এদিন বলিদানও হয়। সন্ধিপূজায় দেবী দুর্গাকে চন্ডীরূপে বা কালীরূপে পূজা করা হয়।
হিন্দু ধর্ম ও পুরাণ মতে, পরমা প্রকৃতি স্বরূপা মহাদেবী, মহাদেবের পতœী। দেবী মহামায়া, পরমবিদ্যা, নিত্যস্বরূপা, যোগনিদ্রা। দেবীদুর্গা জন্ম-মৃত্যু রহিতা মহাশক্তির অধিষ্ঠাত্রী দেবী। মহাশক্তি বলে দুর্গাকে নিদ্রা, ক্ষুধা, লজ্জা, তুষ্টি, আহুনের দাহিকা শক্তি, সূর্যের তেজ, জলের শীতলতা, ব্রাহ্মণের ব্রাহ্মণ্যশক্তি, ক্ষত্রিয়ের ক্ষত্রিয় শক্তি, তপস্বীর তপস্যাশক্তি, ক্ষমাবানের ক্ষমা শক্তি। পৃথিবী ধারণ ও শস্য উৎপাদন ক্ষমতা প্রভৃতি বলে স্তব করা হয়ে থাকে। দেবী দুর্গা তার দশ হাতে দশ রকম অস্ত্র, এক পা তার বাহন সিংহের পিঠে আর এক পা অসুরের কাঁধে। তাকে ঘিরে থাকেন ল²ী, সরস্বতী, গণেশ আর কার্তিক।
অশুভ শক্তি লঙ্কারাজ রাবণ সীতাকে হরণ করে লঙ্কাতে নিয়ে যান। সীতাকে উদ্ধারের জন্য শ্রীরামচন্দ্র অশুভ শক্তি রাবণকে পরাজিত করতে এই আরাধনা করেছিলেন শরৎকালে অকালে। শরৎকালে দেবতারা ঘুমিয়ে থাকেন। রাবণ বধের জন্য শ্রীরামচন্দ্র অসময়ে এই শরৎকালে মা দুর্গাকে জাগিয়ে তুলতে আরাধনা করেছিলেন। তাই, অকালের এ পূজা অকাল বোধন নামে পরিচিত। শরৎকালে শ্রীরামচন্দ্র দেবী দুর্গার কাছে একশ আটটি নীল পদ্ম দিয়ে মায়ের পূজা করেন। মাতৃভক্ত শ্রীরামচন্দ্র পূজায় বসে অঞ্জলি দেয়ার সময় দেখলেন নীল পদ্ম একটা কম, তখন ধনুক দিয়ে চোখ উঠিয়ে নীল পদ্মের সংখ্যা পূরণ করতে উদ্যত হলে দেবী দুর্গা এসে বাধা দেন এবং আশীর্বাদ করেন। মা দুর্গার কাঠামোতে জগজ্জননী দুর্গা ছাড়াও ল²ী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ, সিংহ ও অসুরের মূর্তি থাকে। এছাড়া পেঁচা, হংস, ময়ুর, ইদুঁর ও সবার উপরে শিবের মূর্তি বিদ্যমান। মা দুর্গার দশটি হাত ও দশটি প্রহরণ অপরিমেয় বলবীর্যের। ল²ী ধনের, সরস্বতী জ্ঞানের, গণেশ কৃষি, শিল্প ও বাণিজ্যের প্রতীক। সিংহ বশংবদ ভক্তের এবং অসুর সমস্ত অশুভ ও দুর্গতির প্রতীক। দেব সেনাপতি কার্তিক তারকাসুরকে বধ করে স্বর্গভ্রষ্ট দেবতাদের পুনরায় স্বর্গে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। অতন্দ্র প্রহরায় রক্ষা করেছিলেন স্বর্গের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব।
দুর্গতি নাশিনী দেবী দুর্গার আগমনে ভক্ত পুণ্যার্থীরা আজ শুক্রবার পূজামন্ডপে সমবেত হবেন আনন্দ ও শ্রদ্ধাক‚ল চিত্তে। পূজা শেষে সকলে মিলে জগজ্জননী দুর্গার চরণে নিবেদন করবেন পুষ্পাঞ্জলি। সুখ-শান্তি, সমৃদ্ধি ও বৈশ্বিক অশান্তি থেকে মুক্তি কামনায় সমাগত পুণ্যার্থীদের কন্ঠে সমস্বরে উচ্চারিত হবে শান্তির মন্ত্র। নানা বয়স ও শ্রেণি পেশার মানুষের উপস্থিতিতে প্রতিটি মন্দির প্রাঙ্গণ পরিণত হবে মহাতীর্থে।
বৃহস্পতিবার মহাসপ্তমী তিথি সকাল ৭টা ৫৩ মিনিট পর্যন্ত। সকাল ৭টা ৫৩ মিনিটের মধ্যে দ্ব্যাত্মক-চরলগ্নে ও চরণবাংশে দেবীর নবপত্রিকা প্রবেশ, স্থাপন, সপ্তম্যাদি কল্পারম্ভ ও সপ্তমী বিহিত পূজা প্রশস্তা। এছাড়াও চÐী ও মন্ত্রপাঠের মাধ্যমে পূজা, দেবী-দর্শন, দেবীর পায়ে ভক্তদের অঞ্জলি প্রদান, প্রসাদ গ্রহণের মাধ্যমে দিনব্যাপি চলে পূজার আনুষ্ঠানিকতা। এভাবে উৎসব চলবে আগামী রবিবার বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জন পর্যন্ত।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে পুণ্যার্থীরা মাতৃ দর্শনে দলে দলে এল মন্দির থেকে ও অন্য মন্দিরে ঘুরে বেড়িয়েছেন। সন্ধ্যার পর থেকে নগরীর নাইওরপুলে রামকৃষ্ণ মিশন মন্ডপ, বলরাম জিউড় আখড়া, মাছুদিঘিরপারের ত্রিণয়নী, মণিপুরী রাজবাড়ি, লামাবাজার তিন মন্দির, কাজলশাহ, মিরের ময়দান, জামতলা, তোপখানা, মাছিমপুর মণিপুরী পাড়া, মাছিমপুর, চালিবন্দর, যতরপুর, মিরাবাজার, রায়নগর, সোনাতুলা, গোপালটিলা, দুর্গাবাড়ি, বালুচর, দাঁড়িয়াপাড়ার চৈতালী সংঘ, সনাতন যুব ফোরাম, জিন্দাবাজার, জল্লারপাড়ের সত্যম শিবম সুন্দরম, আম্বরখানা, করেরপাড়া, পনিটুলা, আখালিয়া কালিবাড়ি, শেখঘাট, গোটাটিকর, কিষনপুর সীতারাম সার্বজনীন পূজা কমিটি, পৈত্যপাড়া, জৈনপুর ও শিববাড়ি এলাকায় ভক্তদের ঢল নামে। এ বছর সিলেটে জেলায় ৪৪১টি এবং মহানগরী ১৫২টি মÐপে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
এবার দুর্গাপূজায় সিলেটে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করেছে প্রশাসন। নিয়মিত পূজামÐপ পরিদর্শন করছেন বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা, র্যাব, আনসার-ভিডিপি ও পুলিশ প্রশাসন। এছাড়া পূজাকালীন নিরাপত্তা ও বিভিন্ন বিষয়ে পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দের সাথে যোগাযোগ রাখছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ। এছাড়া কোনো গুজবে কান না দিয়ে যে কোনো প্রয়োজনে প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পূজা মÐপ সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন বিভাগীয় কমিশনার। উল্লেখ্য, শ্রী শ্রী কোজাগরী ল²ীপূজা আগামী বুধবার ১৬ অক্টোবর ও বৃহস্পতিবার ৩১ অক্টোবর শ্রী শ্রী শ্যামাপূজা অনুষ্ঠিত হবে।