স্টাফ রিপোর্টার :
নগরীসহ সিলেট বিভাগে একদিনে ২ কলেজ ছাত্রীসহ ৫ জন আত্মহত্যা করেছেন। গতকাল রবিবার পৃথক পৃথক স্থানে তারা আত্মহত্যা করেন। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন খবর পেয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।
এর মধ্যে নগরীর শিবগঞ্জে প্যারালাইস রোগে আক্রান্ত হওয়া একজন সহ্য করতে না পেরে চিরকুট লিখে এমসি কলেজের মাষ্টার্সের শিক্ষার্থী, সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার মধ্যনগরে ভিপি হাইস্কুল এন্ড কলেজের এইচএসসির শিক্ষার্থী, বিশ্বনাথে ২৪ ঘন্টার ভেতরে এক সন্তানের জননী ও এক বৃদ্ধ ও শ্রীমঙ্গলে স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যার পর স্বামীর আত্মহত্যার পৃথক ঘটনা ঘটে।
আত্মহননকারীরা হচ্ছেন, বালাগঞ্জ উপজেলার কায়স্থঘাট গ্রামের রাজকুমার দাসের কন্যা এমসি কলেজ মাষ্টার্সের শিক্ষার্থী মৌমিতা দাস পপি (২৬)। বর্তমানে তিনি স্বপরিবারে হাতিমবাগ এলাকার ১ নম্বর রোডের ৪ নম্বর বাসার বাসিন্দা ছিলেন। সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলা মধ্যনগর থানার বংশীকুন্ডা দক্ষিণ ইউনিয়নের মাছিমপুর গ্রামের হারেছ উদ্দিনের কন্যা মধ্যনগর ভিপি হাইস্কুল এন্ড কলেজের এইচএসসির শিক্ষার্থী এপি আক্তার (১৮), বিশ্বনাথ থানার খাজাঞ্চি ইউনিয়নের এনায়েতপুর (তবলপুর) গ্রামের লাল মিয়ার স্ত্রী ও এক সন্তানের জননী লুৎফা বেগম (২৭), একই থানার রামপাশা ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামের বৃদ্ধ আনোয়ার আলী (৬০) এবং মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার বৌলাছড়া চা-বাগানের শ্রমিক কলোনির বিপুল তন্তবায় (৪২)।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, গতকাল রবিবার ভোর রাতে নগরীর শিবগঞ্জে ‘আমি পঙ্গু হয়ে বাঁচতে চাই না’ চিরকুট লিখে এমসি কলেজের এক শিক্ষার্থী মৌমিতা দাস পপি আত্মহত্যা করেছেন। তিনি নিজ কক্ষের ফ্যানের সাথে রশি দিয়ে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন। গতকাল বেলা ৩টার দিকে শাহপরান থানার এসআই রিপন পুরকায়স্থ লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে ময়না তদন্তের জন্য সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেন।
তিনি জানান, মৌমিতা দাস পপি প্যারালাইস রোগে আক্রান্ত ছিলেন। প্রতিদিনের ন্যায় শনিবার তিনি খাওয়া-দাওয়া শেষ করে নিজ রুমে ঘুমাতে যান। রাতের কোন এক সময় তিনি ফ্যানের সাথে গলায় রশি দিয়ে আত্মহত্যা করেন। পরদিন সকালে পরিবারের লোকজন তাকে ডাক দিলে তিনি দরজা খুলেননি। পরে পুলিশকে খবর দিলে শাহপরাণ থানা পুলিশ দরজা ভেঙ্গে তাকে ফাস লাগানো অবস্থায় দেখতে পায়। তার রুম থেকে একটি চিরকুট উদ্ধার করে পুলিশ। যেখানে লিখা ছিল, ‘আমি পঙ্গু হয়ে বাঁচতে চাই না’। পুলিশ ধারণা করছে- হতাশা থেকেই পপি আত্মহত্যা করেছেন।
এদিকে, বিশ্বনাথে মাত্র ২৪ ঘন্টার ভেতরে এক সন্তানের জননী ও এক বৃদ্ধ আত্মহত্যা করেছেন। গত শনিবার রাত ৯টায় স্বামীর বসত ঘরের তীরের সাথে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন খাজাঞ্চি ইউনিয়নের এনায়েতপুর (তবলপুর) গ্রামের লাল মিয়ার স্ত্রী লুৎফা বেগম। খবর পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য সিলেট ওসমানী হাসপাতালে প্রেরণ করে। এছড়াও একইদিন শনিবার রাতে বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন রামপাশা ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামের বৃদ্ধ আনোয়ার আলী। তাকে রাতে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে গেলে গতকাল রবিবার ভোর ৪টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
অপরদিকে, মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার বৌলাছড়া চা-বাগানের শ্রমিক কলোনিতে স্ত্রীকে হত্যার পর গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন চা শ্রমিক বিপুল তন্তবায়। গতকাল রবিবার সকাল ১০টার দিকে শ্রমিক কলোনি থেকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) সোহেল রানা এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, গতকাল রবিবার ভোরে বৌলাছড়া চা-বাগানের শ্রমিক কলোনিতে চা শ্রমিক বিপুল তন্তবায় আত্মহত্যা করেন। সকালে বৌলাছড়া হাসপাতাল লাইনের লেবার কলোনিতে গিয়ে ঘরের আড়ার সঙ্গে বিপুলের ঝুলন্ত লাশ দেখতে পান তারা। খবর পেয়ে তাদের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
এদিকে সুনামগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা জানান, সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার মধ্যনগরে কলেজ ছাত্রী এপি আক্তার আত্মহত্যা করেছেন।
এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে মধ্যনগর থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, ওই ছাত্রী মধ্যনগর ভিপি হাইস্কুল এন্ড কলেজের এইচএসসিতে পড়তেন। গতকাল রবিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নিজ বাড়ির বাথরুমের আড়াতে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টায় ফাঁস লাগে, কিছুক্ষণ পর ওই ছাত্রীর মা মেয়েকে বাথরুমে ঝুলতে দেখে সাথে সাথে তাকে নিচে নামিয়ে মাথায় পানি ঢালা অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। পরে এ ঘটনায় স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দিলে সেখান থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। তিনি আরো জানান, এ ব্যাপারে নিহতের পরিবার বিনা ময়না তদন্তের আবেদন করায় ময়না তদন্ত ছাড়াই তার লাশ পরিবারের লোকজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।