বড়লেখা থেকে সংবাদদাতা :
মাটির দেয়াল, জরাজীর্ণ টিনের ছাউনির ছোট ঘর। সেই ঘরে গাদাগাদি করে স্ত্রী-দুই সন্তানকে নিয়ে বসবাস করতেন সোনাই লাল রবিদাস। ঘরটি খুব একটা বাসোপযোগী ছিল না। বর্ষায় বৃষ্টিতে টিনের ফুটো দিয়ে পানি পড়ে ভিজেছে বিছানাপত্র। কত রাত কেটেছে বিনিদ্র।
হাড় কাঁপানো শীত-বর্ষা কতই না কষ্টে কেটেছে। সেই ঘরে স্ত্রী সন্তান নিয়ে কোনোভাবে মাথা গুঁজে দিন কেটেছে। তবু ঘরটি বদলানোর কথা কল্পনায়ও ছিল না তাঁর। যেখানে ফুটপাতে বসে অন্যের জুতা মেরামতের আয়ে টেনেটুনে চলে তাঁর সংসার। সেখানে এমন ঘরের পরিবর্তন হবে, আধা পাকা নতুন দালান হবে। এটা ছিল তাঁর কাছে আকাশ কুসুম কল্পনা। কিন্তু সেই ভাঙাচুরা ঘরের পাশেই একটি আধা পাকা নতুন ঘর উঠেছে। এতে রয়েছে দুটি কক্ষ। আছে একটি প্রশস্ত বারান্দা। পাকাঘরের এ আনন্দ এখন সোনাই লালের সংসারে।
প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় হতে সমতলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে গৃহীত ‘বিশেষ এলাকার জন্য উন্নয়ন সহায়তা’ শীর্ষক কর্মসূচির আওতায় ঘরটি বানিয়ে দিয়েছে মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলা প্রশাসন। এতে খরচ হয়েছে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা। গত বুধবার (৫ আগস্ট) আনুষ্ঠানিকভাবে ঘরটি হস্তান্তর করা হয়েছে। এরকম একই সম্প্রদায়ের আরও নয়টি পরিবারকে ঘর বানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সেগুলোরও কাজ শেষ পর্যায়ে।
বড়লেখা উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার দক্ষিণভাগ উত্তর ইউনিয়নের মাধবগুল গ্রামের বাসিন্দা সোনাই লাল রবিদাস। জীবিকার তাগিদে স্থানীয় বাজারে অন্যের জুতা-স্যান্ডেল মেরামতের কাজ করে সংসার চালিয়ে আসছেন। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে তিনি প্রতিদিন ফুটপাতে জুতা সেলাইয়ের কাজ করেন। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে মাটির ঘরে দিন কাটান। ঘরটি জরাজীর্ণ। টানাপড়েনের সংসারে ঘরটি পরিবর্তনের কথা কল্পনায়ও ছিল না তার। এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় হতে সমতলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে গৃহীত ‘বিশেষ এলাকার জন্য উন্নয়ন সহায়তা’ শীর্ষক কর্মসূচির আওতায় ঘরটি বানিয়ে দেওয়া হয়েছে। কাজটি বাস্তবায়ন করেছে বড়লেখা উপজেলা প্রশাসন। ঘর নির্মাণ শুরুর আগ পর্যন্ত সোনাই লাল জানতেনও না ঘর হচ্ছে। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে সরকারের এমন উদ্যোগে মাটির চালাঘর থেকে আধাপাকা দালান পেয়েছেন সোনাই লাল।
গত বুধবার (৫ আগষ্ট) বিকেলে ফিতা কেটে ঘরটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান। এসময় বড়লেখা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সোয়েব আহমদ, বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শামীম আল ইমরান, বড়লেখা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইয়াছিনুল হক, রবিদাস সম্প্রদায়ের নেতা মিলন রবিদাস, নতুন ঘর পাওয়া সোনাই লাল রবিদাস প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় জেলা মীর নাহিদ আহসান প্রশাসক বলেন, ‘সমতলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সরাসরি প্রকল্পটি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে সুবিধাভোগীর কাছে ঘরটি হস্তান্তর করা হয়েছে।’
সুবিধাভোগী সোনাই লাল রবিদাস বলেন, ‘জুতা সেলাইয়ের কাজ করে দিনে দেড়-দুইশ টাকা পাই। কোনোদিন একটু বেশি হলেও খুব কষ্ট করে পরিবার চালাতে হয়। মাটির ভাঙা ঘরে বৃষ্টি হলে পানি পড়ে। বাচ্চাদের নিয়ে খুব কষ্টে থাকি। কোনোদিন কল্পনাও করতে পারিনি পাকা ঘর হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘর দিয়েছেন। খুব আনন্দ হচ্ছে। এলাকার লোকজনও এসে ঘরটি দেখতেছে। আমার মতো অসহায় মানুষ ঘর পাওয়ায় এলাকার সবাই খুশি।’
ইউএনও মো. শামীম আল ইমরান বলেন, ‘এই প্রকল্প থেকে উপজেলায় ১০টি পাকা ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হচ্ছে। যাদের ঘর দেওয়া হচ্ছে, এরা সকলেই খুব গরিব। নতুন ঘর পাওয়ায় তারা খুব খুশি।’